খেলাপি ঋণ : ব্যাংককে করেছে গতিহীন

খেলাপি ঋণ বলতে ওই ঋণকে বোঝায়, যা গ্রাহক ব্যাংক থেকে নেয়ার পর ব্যাংকের কাছে ঠিক সময়ে আর পরিশোধ করেনি। ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার পর তা আবার ব্যাংকের কাছে পরিশোধ না করার প্রবণতা বাংলাদেশে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে এবং এটি একটি সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। আর এই খেলাপি ঋণের পরিমাণ সময়ের সাথে সাথে শুধু বেড়েই চলেছে। সদ্যসমাপ্ত জুন ২০১৪ সালের হিসাব অনুসারে এ দেশে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ৫১ হাজার কোটি টাকা। সরকারি মালিকানাধীন সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালীÑ এই চার ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা। অপর দিকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট ২০১৩ অনুসারে ব্যাংকগুলোর মোট বিতরণ করা ঋণের ৮.৯৩ শতাংশই খেলাপি। এর মধ্যে আবার ৭৯ শতাংশই মন্দ ঋণে পরিণত হয়েছে। ব্যাংকগুলো প্রতি বছর বিশাল পরিমাণের খেলাপি ঋণকে রাইট অফ না করলে এই ঋণের পরিমাণ আরো অনেক বেশি হতো। রাইট অফ করা এই ঋণ ব্যাল্যান্সশিটের অন্তর্ভুক্ত থাকে না বলে, তা খেলাপি ঋণের সাথে যোগ হয়নি। তা ছাড়া ব্যাংকগুলো আরো বিশাল অঙ্কের খেলাপি ঋণ বিভিন্ন মেয়াদে রিসিডিউল করেছে, যা খেলাপি ঋণ হলে ও রিসিডিউল করার কারণে আর খেলাপি ঋণে হিসাব করা হয়নি। যদি রাইট অফ এবং রিসিডিউল করা ঋণ হিসাব করা হয়, তাহলে এই খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরো অনেক বেশি হবে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিভিন্ন করপোরেশন যেমন ঋণখেলাপি, ঠিক তেমনি ব্যক্তি মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও ঋণখেলাপি। এ ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি সেক্টর, উভয়েই সমভাবে দায়ী। মূলত এই খেলাপি ঋণ আজ এ দেশের ব্যাংকিং সেক্টরকে গতিহীন করেছে এবং একই সাথে দেশের অর্থনীতির স্বাভাবিক বিকাশকেও অবরুদ্ধ করেছে। খেলাপি ঋণের বোঝা বহন করতে গিয়ে ব্যাংকগুলোর স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি যেমন
মুখ থুবড়ে পড়েছে, ঠিক তেমনি এই খেলাপি ঋণের কারণে দেশের অর্থনীতির স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধিও বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তাই যেকোনো মূল্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণকে কমিয়ে আনতে হবে।
- জালাল উদ্দিন ওমর

No comments

Powered by Blogger.