ঈদের পর অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার

একদিকে ঈদের ছুটির কারণে প্রচুর কাঁচা পণ্য নষ্ট হয়েছে। অন্যদিকে নষ্ট হওয়া পণ্যের গচ্চা আদায়ে উচ্চ দাম হাঁকছে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা। সে কারণে ঈদের পর নিত্যপণ্যের বাজার অনেকটা অস্থির। এর মধ্যে ৬টি পণ্যের দাম বেসামাল দেখা গেছে। এগুলো হচ্ছে- চাল, ডাল, আদা, আলু, কাঁচামরিচ ও লাউ। এসব পণ্যের দাম কেজিতে সর্বনিম্ন ৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৭০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এছাড়া অন্যান্য পণ্যেও প্রায় ১ থেকে ২ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। পাশাপাশি মসলার বাজারের ঊর্ধ্বগতি এখনও অব্যাহত রয়েছে। ঈদের পর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, জুরাইন, কাওরান বাজারসহ বিভিন্ন কাঁচা বাজারে এসব চিত্র পরিলক্ষিত হয়। গতকাল এসব বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ভাল মানের কাঁচামরিচের পাল্লা ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা ঈদের আগে ছিল ২৫০ টাকা। সে হিসাবে এক সপ্তাহেরও কম সময়ে কাঁচামরিচের দাম পাল্লাপ্রতি ১০০ টাকা বেড়েছে। একইভাবে খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। যা ঈদের আগে ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাওরান বাজারের কাঁচা পণ্য বিক্রেতা সোহেল মানবজমিনকে জানান, ঈদের ছুটির কারণে মজুদ থাকা অনেক কাঁচামরিচ নষ্ট হয়ে গেছে। তা পুষিয়ে তুলতে দাম একটু বেড়েছে। আবার ছুটির কারণে ট্রাক আসা বন্ধ ছিল। সেটাও দাম বৃদ্ধির কারণ বলে তিনি মনে করেন। এছাড়া ভাল মানের চাল কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৬০ টাকা, ডাল ৫ টাকা বেড়ে ১০৫ টাকা, আলু ৭ টাকা বেড়ে ২৭ টাকা, আদা ৭০ টাকা বেড়ে ৩৫০ টাকা ও ছোট আকারের লাউ ১০ টাকা বেড়ে ৩৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। ক্রেতা নূর জানান, প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে। তিনি বলেন, যে আলু ঈদের আগে ২০ টাকায় কিনেছি তা ঈদের পর ২৭ টাকা দিয়ে কিনলাম। বাজার ঘুরে আরও দেখা যায়, গত সপ্তাহের তুলনায় প্রতিকেজি একদানা রসুন ১৪০ থেকে বেড়ে ১৫০-১৬০ টাকা, দেশী রসুন ৭০-৮০ টাকা থেকে বেড়ে ১০০ টাকা ও বিদেশী রসুন ৮০ থেকে বেড়ে ১০০ টাকা, জিরা ২৮০ টাকা থেকে বেড়ে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া গত সপ্তাহের মতোই ভারতীয় পিয়াজ প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৪০ টাকা ও দেশী পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৩-৪৫ টাকা দরে। কাওরান বাজার মসলা ব্যবসায়ী আলম জানান, সব ধরনের মসলায় ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বিশেষত জিরায় ২০ টাকা বেড়েছে। তবে এটা ধীরে ধীরে আরও কমবে বলে জানান তিনি। খুচরা বিক্রেতা জাহেদুল ইসলাম বলেন, কোরবানি ঈদের সময় আদা রসুনের চাহিদা বেশি থাকে। এ চাহিদাকে সামনে রেখে পাইকারি বাজারে আদা রসুনের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। ফলে খুচরা বাজারেও বাড়তি দামেই এসব পণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোরবানির ঈদ ও পূজা সামনে রেখে আদা-রসুনের চাহিদা থাকে বেশি। তাই বাড়তি দামের সুবিধা নিতে অনেকে পণ্য দু’টি মজুদ করেছিল। ঈদ চলে গেছে। এবার দামও কমবে। কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিকেজি চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, বেগুন ৫০-৬০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, করলা ৫০ টাকা, সিম ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ টাকা, টমেটো ১২০-১৩০ টাকা, কচুর লতি ৫০ টাকা, কচুর মুখী ৫০ টাকা, পেঁপে ২৫-৩০ টাকা, শসা ৪০-৫০ টাকা, ধুন্দুল ৫০ টাকা, দেশী গাজর ৫০-৬০ টাকা, পটোল ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ফুলকপি ৩০-৩৫ টাকা, পাতাকপি ৩০-৩৫ টাকা, সবুজ শাক আঁটি ১০ টাকা, লাউ শাক ২০-২৫ টাকা, লাল শাক ১০ টাকা, মুলা শাক ৫ টাকা, পুঁইশাক ২০ টাকা, কলমি শাক ৫ টাকা ও ধনে পাতা (১০০ গ্রাম) ৩০ টাকা, প্রতি হালি লেবু ২০-৩০ টাকা ও কাঁচকলা হালি ২৫-৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাংসের বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগির দাম অপরিবর্তিত। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৩০ টাকা, লেয়ার মুরগি ১৫০ টাকা, খাসির মাংস ৩৮০-৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতিকেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ৪৬-৪৭ টাকা, প্যাকেট চিনি ৫০ টাকা ও আটা ৩২ টাকা দরে। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১০৫-১১০ টাকা ও পামলিন ৯০ টাকা। ফার্মের মুরগির লাল ডিম প্রতি হালি ৩০ টাকা এবং হাঁসের ডিম ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে প্রতি কেজি রুই ২৫০-৩৮০ টাকা, নলা ৪৫০-৫০০ টাকা, দেশী পুঁটি ৪০০-৪৫০ টাকা, চাষের কৈ ২৫০-৩০০ টাকা, পাঙ্গাস ১২০-২০০ টাকা, চিংড়ি ৫৫০-৯০০ টাকা, বড় টেংরা ৬০০-৭৫০ টাকা, পোয়া মাছ ৫০০-৬০০ টাকা, মাঝারি তেলাপিয়া ১৫০-২২০ টাকা, কাতল ২৬০-৪০০ টাকা, দেশী মাগুর ৬০০-৯০০ টাকা, শিং মাছ ৬০০-৮০০ টাকা ও আকারভেদে ইলিশ প্রতিজোড়া ১১০০-১৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি পারিজা ৪০-৪২ টাকা, বিআর-আটাশ ৪২-৪৪ টাকা, বিআর-ঊনত্রিশ ৪২-৪৩ টাকা, জিরা নাজিরশাইল ৫৮-৬০ টাকা, নাজিরশাইল ৪৪-৪৫ টাকা, ভাল মানের মিনিকেট ৫৫-৬০ টাকা ও মোটা চাল ৩৭-৩৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.