আমানতে সুদহার কমাল সরকারি চার ব্যাংক by ওবায়দুল্লাহ রনি

এক মাসের ব্যবধানে মেয়াদি আমানতে আরেক দফা সুদহার কমিয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানার চার বাণিজ্যিক ব্যাংক। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিনিয়োগ চাহিদা কমে যাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সোনালী, জনতা, রূপালী ও অগ্রণী ব্যাংক। মেয়াদি আমানতের প্রতিটি ক্ষেত্রে সুদ কমিয়ে সর্বোচ্চ ১১ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে আমানতে পুনর্নির্ধারিত সুদ কার্যকর করা হয়েছে। এ ছাড়া শিগগির এসব ব্যাংকের ঋণের সুদহারও কমবে বলে জানা গেছে। এর আগে নভেম্বরে এসব ব্যাংকে সব ধরনের মেয়াদি আমানতে সুদহার কমানো হয়েছিল। ডিসেম্বরে বিশেষায়িত খাতের তিনটিসহ মোট ১৮ ব্যাংক সুদহার কমিয়েছে।
চার ব্যাংকের পুনর্নির্ধারিত সুদ হার অনুযায়ী, এক মাসের বেশি তবে ২ মাসের কম সময়ের জন্য নেওয়া আমানতে সোনালী, জনতা ও অগ্রণী ব্যাংক সুদহার সাড়ে ৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ৮ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। রূপালী ব্যাংক এ ক্ষেত্রে ৯ শতাংশ সুদ দেবে। তিন মাস থেকে ৬ মাসের কম মেয়াদি আমানতে সব ব্যাংক ১০ শতাংশ থেকে সুদ কমিয়ে সাড়ে ৯ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। ছয় মাস থেকে ১ বছরের কম সময়ের জন্য নেওয়া আমানতে ১১ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে সুদ কমিয়ে আনা হয়েছে। এক বছর থেকে ৩ বছরের কম সময়ের জন্য নেওয়া আমানতে সাড়ে ১১ শতাংশ থেকে সুদ নামিয়ে আনা হয়েছে ১১ শতাংশে।
এর আগে ৪ নভেম্বর রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা এক বৈঠকে মেয়াদি আমানতের প্রতিটি ক্ষেত্রে সুদ কমিয়ে সর্বোচ্চ সাড়ে ১১ শতাংশে নামিয়ে আনেন। ওই সময় বেসরকারি খাতের বেশ কয়েকটি ব্যাংকও সুদহার কমিয়ে দেয়। ডিসেম্বরে সরকারি মালিকানার তিনটি বিশেষায়িত এবং বেসরকারি ও বিদেশি মালিকানার ১৫টি ব্যাংক সুদহার কমিয়েছে। এতে সামগ্রিক ব্যাংক খাতে আমানতে সর্বোচ্চ সুদ সাড়ে ১১ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। ঋণের সুদ পুনর্নির্ধারণের লক্ষ্যে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি চলতি মাসে একটি বৈঠক করবে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে ব্যাংক খাতে উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে ৬০ হাজার কোটি টাকার বেশি। অবশ্য এই অর্থের পুরোটাই অলস টাকা নয়। কেননা বিধিবদ্ধ জমা (এসএলআর) সংরক্ষণের অতিরিক্ত সরকারি সিকিউরিটিজ বা বন্ডে বিনিয়োগ করা ব্যাংকের সব অর্থ উদ্বৃত্ত তারল্য হিসেবে ধরা হয়। তবে এর মধ্যে ব্যাংক খাতে বর্তমানে ২৬ হাজার কোটি টাকার বেশি অলস অর্থ পড়ে আছে। এসব অর্থের বিপরীতে ব্যাংকগুলোতে নিয়মিত সুদ ব্যয় হলেও কোনো আয় আসছে না। মূলত এসব কারণেই ব্যাংকগুলো ঘন ঘন আমানতের সুদ কমাচ্ছে।
সুদহার কমা প্রসঙ্গে ব্যাংকাররা বলেন, আমানতে সুদ কমলে সাধারণ গ্রাহকদের মধ্যে সঞ্চয়প্রবণতা কমে আসার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া আমানতে সুদ নির্ধারণের বিষয়টি সাধারণভাবে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যস্ফীতি আগের মতো সাড়ে ৭ শতাংশের কাছাকাছি রয়েছে। বেশির ভাগ ব্যাংকের ঋণের সুদও কমেনি। অথচ আমানতে ঘন ঘন সুদ কমছে। এই প্রবণতা চলতে থাকলে সাধারণ সঞ্চয়কারীরা উচ্চ সুদের আশায় ব্যাংকবহির্ভূত অন্য খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী হতে পারেন বলে তারা উল্লেখ করেন।
এখন ব্যাংকগুলো আমানতে সুদহার কমালেও ২০১১ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে ২০১২ সালের শুরুর দিকে ছিল উল্টো চিত্র। ওই সময়ে বেশিরভাগ ব্যাংক আমানত নিতে অসম প্রতিযোগিতায় নেমেছিল। তখন ব্যাংকগুলো ঘোষণার তুলনায় বেশি সুদে আমানত সংগ্রহ শুরু করে। পরে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি এক বৈঠক করে সুদের হার নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। ব্যাংকাররা মেয়াদি আমানতে সর্বোচ্চ সুদহার সাড়ে ১২ শতাংশ এবং শিল্পের মেয়াদি ঋণ ও চলতি মূলধনে সর্বোচ্চ সাড়ে ১৫ শতাংশ সুদ নেয়ার ঘোষণা দেন। তবে এ ঘোষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না বেশিরভাগ ব্যাংক। তারা নানা উপায়ে ঘোষণার বাইরে বেশি সুদে আমানত নিতে শুরু করে। বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিশেষ পরিদর্শনে উঠে আসার পর সব ব্যাংকগুলোকে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.