গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে এই নির্বাচন

শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন
(জাতির উদ্দেশে ভাষণে শেখ হাসিনা) দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিয়ে ও পছন্দের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করে গণতন্ত্রকে দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতেই এ নির্বাচন। তাই সাংবিধানিকভাবেই ৫ জানুয়ারির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিয়ে তার দলকে আবারও জয়ী করার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেছেন, অতীতের মতো এবারও দেশবাসীর অকুণ্ঠ সমর্থন চাই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এবং 'হক-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দী'র প্রতীক, স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রতীক নৌকা মার্কায় ভোট চাই। আসুন, বিভেদ ভুলে আমরা সম্মিলিতভাবে শান্তি, উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাই। শেখ হাসিনা গতকাল বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এসব কথা বলেন। তার ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতার বাংলাদেশ থেকে সন্ধ্যা ৭টায় একযোগে প্রচার করা হয়। এর আগে আওয়ামী লীগ ছাড়াও নির্বাচনে অংশ নেওয়া আরও পাঁচটি রাজনৈতিক দলের প্রধানরা জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সুযোগ পান। তবে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে কেউই ভাষণ দেননি।
শেখ হাসিনা বলেন, গত পাঁচ বছরে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার ও উপনির্বাচনে যেভাবে ভীতিমুক্ত পরিবেশে ভোট দিয়েছেন, তেমনিভাবে ৫ জানুয়ারি একটি উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দেবেন বলে তিনি আশা করেন। সমাজ থেকে হিংসা, হানাহানি ও সংঘাতের চির অবসান হবে। দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়নের ধারা থেকে বাংলাদেশ বেরিয়ে আসবে; গড়ে উঠবে একটি সহিষ্ণু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখল আর জনগণের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অসুস্থ ধারাকে চিরতরে বন্ধ করার জন্য জাতীয় সংসদ বিশ্বের অন্যান্য সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশের মতোই একটি স্থায়ী নির্বাচনী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এ প্রসঙ্গে আগামী নির্বাচন বর্জন করে আন্দোলনরত বিএনপিসহ বিরোধীদলীয় জোটকে এ নির্বাচনে আনার ক্ষেত্রে তার দল ও সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। জনগণকে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে হরতাল-অবরোধের নামে বিরোধী দলের দেশজুড়ে নাশকতা-নৈরাজ্য ও মানুষ হত্যার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা আশা করেছিলাম, জনগণের ওপর আস্থা রেখে প্রধান বিরোধী দল নির্বাচনে অংশ নেবে। আমাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।
৪০ মিনিটের ভাষণে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার তার অঙ্গীকার পালন করেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ওয়াদার চেয়েও বেশি কাজ হয়েছে। তিনি বলেন, ১০ জন যুদ্ধাপরাধীর বিচার শেষ হয়েছে। বিচারের রায়ও আল্লাহর রহমতে কার্যকর করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আত্মত্যাগ ও উৎসর্গ ছাড়া মহৎ কিছু অর্জন করা যে সম্ভব নয়, তা প্রমাণিত হয়েছে। অতীতের অন্ধকার ঘুচিয়ে বাংলাদেশ এখন আলোকোজ্জ্বল সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা সবাই আলোর পথের যাত্রী।
আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় যেতে পারলে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা ছাড়াও অর্থনৈতিক অগ্রগতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আবাসন, বিদ্যুৎ, কৃষি, শিল্পায়ন, আইন-শৃঙ্খলা, বিচার বিভাগ, নারী, শিশু ও যুব উন্নয়নসহ সব ক্ষেত্রের কল্যাণ সাধনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
গতকালের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব অঙ্গীকারের পুনরুল্লেখ করে বলেন, একটি দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা দেশকে অভীষ্ট গন্তব্যে নিয়ে যেতে চাই। আমরা চাই, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা দূর করে রাষ্ট্র ও সমাজজীবনে শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করতে; নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা বিধান ও তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে।
শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠন করলে ইনশাআল্লাহ ২০২১ সালের মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত করতে সক্ষম হব।
তরুণদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অভিনন্দন ও শুভাশিস জানাই আমাদের কষ্টসহিষ্ণু, সাহসী এবং প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরা যুবসমাজকে। এবারের নির্বাচনে যে তরুণরা প্রথমবারের মতো ভোট দিতে যাচ্ছে, তাদের জন্য আমার শুভকামনা। তরুণ ভোটাররা, তোমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য আমরা আমাদের বর্তমানকে উৎসর্গ করছি।

No comments

Powered by Blogger.