মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির সন্ধানে কেরি

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। গতকাল তিনি ইসরায়েল পৌঁছান। গত বছরের মার্চে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর এটা কেরির ১০তম মধ্যপ্রাচ্য সফর। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের কাঠামো নিয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ের আলোচনার উদ্দেশ্যেই তার এ বৈঠক। এদিকে, তার সফর উপলক্ষে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ তাদের বাগযুদ্ধ তীব্রতর করেছে। উচ্চপদস্থ এ মার্কিন কূটনীতিক দু'পক্ষ থেকেই কিছু বিরোধপূর্ণ বিষয়ে সমঝোতায় না পৌঁছার ব্যাপারে অনমনীয় মনোভাবের মুখোমুখি হয়েছেন। তিন বছর আগে দু'দেশকে শান্তি আলোচনার প্রয়োজনে এক টেবিলে বসানোর চেষ্টা করে আসছে পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। গত বছরের মার্চে দায়িত্ব গ্রহণের পর এ নিয়ে দশমবার মধ্যপ্রাচ্যে এসেছেন জন কেরি। কিন্তু এবারই ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন দু'দেশই পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর তীব্রতর করেছে। দু'পক্ষেরই অভিযোগ, তারা একটি স্থায়ী শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারে পুরোপুরি আন্তরিকভাবে কাজ করছে না।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এক কর্মকর্তা বলেছেন, চার দিনের মধ্যপ্রাচ্য সফরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর লক্ষ্য হলো, চূড়ান্ত পর্যায়ের এ আলোচনায় দু'পক্ষের জন্যই একটি নির্দেশনামূলক কাঠামো প্রণয়ন করা। কেরি এবং তার দলও আশা করছে, শিগগিরই তারা শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরে একটি কাঠামো দাঁড় করাতে পারবেন। আর এতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে বিরোধের মূল বিষয়গুলো নিয়ে সমঝোতাও। এসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের সীমানা নির্ধারণ, জেরুজালেমের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা এবং ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের সমস্যার সমাধান করা। জেরুজালেম নিয়ে দু'দেশের মধ্যে টানাপড়েন চলছে। দু'দেশই শহরটিকে নিজেদের রাজধানী হিসেবে দাবি করে আসছে।
নিজেদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের সীমানার ব্যাপারে ফিলিস্তিনের দাবি, ১৯৬৭ সালে ছয় দিনের যুদ্ধের আগে যে সীমারেখা চালু ছিল, সেটাই যেন বহাল রাখা হয়। ওই যুদ্ধে ইসরায়েল ফিলিস্তিনের কাছ থেকে পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম কেড়ে নেয়। কিন্তু ইসরায়েল চাইছে, অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে তারা যেসব বসতি নির্মাণ করেছে, সেসব অঞ্চলে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে। এদিকে, নিরাপত্তার প্রশ্নে তারা জর্দান উপত্যকায় নিজেদের সেনা উপস্থিতি বহাল রাখতে চায়। পশ্চিম তীরের সঙ্গে জর্ডানের সীমানা রয়েছে; কিন্তু ফিলিস্তিন ইসরায়েলের এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে আসছে। তাদের দাবি, সীমান্ত নিরাপত্তা প্রশ্নে ইসরায়েলি নয়, আন্তর্জাতিক সেনা মোতায়েনে তাদের আপত্তি নেই। এদিকে, কেরির সফরের দু'দিন আগে ইসরায়েল তাদের কারাগার থেকে তৃতীয় দফায় ১০৪ জন বয়স্ক ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে। ইসরায়েলের দিক থেকে নেওয়া এ তৎপরতাকে অবশ্য চুক্তি স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে একই সঙ্গে ফিলিস্তিন সীমান্তে ফের ইসরায়েলি বসতি নির্মাণের ঘোষণাও শান্তিচুক্তির সম্ভাবনা ও তৎপরতাকে কিছুটা ব্যাহত করেছে বলে মন্তব্য করা হয়েছে।
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, ইসরায়েল নতুন করে বসতি নির্মাণ শুরু করলে তারা তা কূটনৈতিক ও আইনি প্রক্রিয়ায় প্রতিহত করবেন। কোনোভাবেই তা মেনে নেওয়া হবে না।

No comments

Powered by Blogger.