নিয়ম রক্ষার নির্বাচন আজ by মসিউর রহমান খান ও জয়দেব দাশ

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের বর্জনের মধ্যেই বহুল আলোচিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আজ রোববার। গতকাল রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ৩৫টি জেলায় শতাধিক ভোটকেন্দ্রে আগুন দেওয়া হয়েছে। যেখানে পুড়ে গেছে ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম। সহিংস হরতাল কর্মসূচির কারণে জনমনে বিরাজ করছে আতঙ্ক। 'একতরফা' এ নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি আসনে প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হওয়ায় এ নির্বাচন উত্তাপ হারিয়েছে অনেক আগেই। নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতাও পড়েছে প্রশ্নের মুখে। বিএনপির লাগাতার অবরোধ ও হরতালের মধ্যে নির্বাচনের উৎসব ও আনন্দের পরিবর্তে বিরাজ করছে চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। তবুও সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় আজ দেশের ১৪৭টি আসনে নিয়ম রক্ষার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। একক প্রার্থীর কারণে বাকি ১৫৩ আসনে ভোট গ্রহণের আর প্রয়োজন পড়ছে না। তবে এরই মধ্যে বেশকিছু আসনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থীরা চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছেন নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, ১৮ হাজার ২০৮টি কেন্দ্রের মধ্যে শতকরা ৭৫ ভাগ কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ (গুরুত্বপূর্ণ) হিসেবে চিহ্নিত করেছে নির্বাচন কমিশন। অবশ্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর অবস্থানে রয়েছেন বিপুলসংখ্যক সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য সংস্থার সদস্যরা।
সরকারি দলের একাধিক মন্ত্রী ইতিমধ্যে বলেছেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার জন্য এ নির্বাচন করা ছাড়া বিকল্প নেই। ফলে নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা একে নিয়ম রক্ষার নির্বাচন হিসেবে অভিহিত করছেন। নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নির্ধারণে বরাবরই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালনকারী বিদেশি পর্যবেক্ষকরা এবার অনুপস্থিত। সার্কভুক্ত দেশগুলোকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ইসি। সাড়া মেলেনি তাতেও। ভারত ও ভুটান থেকে মাত্র চারজন পর্যবেক্ষক ঢাকায় এসেছেন। তবে দেশীয় ১৩ হাজার ৪৩৬ পর্যবেক্ষক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন।
নানা প্রতিকূলতার মধ্যেই নির্বাচন কমিশন আজকের ভোট গ্রহণের সার্বিক প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে আজ সরকারি ছুটি থাকছে। এসব জেলায় যান চলাচলও নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। মহাসড়ক বাদে অন্য সড়কে ইসির অনুমোদিত যান ছাড়া চলাচল করার সুযোগ নেই।
তফসিল ঘোষণার পর থেকে সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত নির্বাচনী সহিংসতায় মৃতের সংখ্যা ১২২ জন। গতকাল পর্যন্ত ৩৫টি জেলার শতাধিক ভোটকেন্দ্রে আগুন দেওয়া হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে থাকা কর্মকর্তাদের নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। আগের সব নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী ভোটারের উপস্থিতি লক্ষণীয় হলেও এবার পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সংঘাত-সহিংসতার আশঙ্কায় ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতির হার নিয়ে সন্দিহান খোদ কমিশন।
সর্বশেষ ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে শতকরা ৮৭ দশমিক ১৩ ভাগ ভোটার উপস্থিত থাকলেও এবার সর্বোচ্চ ৫০ ভাগ ভোটার উপস্থিতির আশা করছে ইসি। ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে রাখা হয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায়। দেশের ৩০০ আসনের মধ্যে ১৪৭টিতে আজ সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ চলবে। ইসি সচিবালয় থেকে জানানো হয়েছে, ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের আইডি কার্ড প্রদর্শন বা বহন বাধ্যতামূলক নয়।
নির্বাচনকালীন সরকারের শিল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ গতকাল বলেছেন, নির্বাচন ছাড়া তাদের সামনে অন্য কোনো পথ খোলা নেই। এ নির্বাচন বানচাল করার ক্ষমতা বিএনপি-জামায়াত জোটের নেই। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অতন্দ্র প্রহরীর মতো ভোটকেন্দ্র পাহারা দেবেন। তিনি দেশবাসীকে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত থেকে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।
অন্যদিকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ভোট বর্জনের জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শুক্রবার রাতে ভিডিওবার্তা পাঠিয়েছেন। এরপর গতকাল বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান লন্ডন থেকে এক ভিডিওবার্তায় ভোট বর্জন, প্রতিরোধ ও প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ব্যক্তি বা দলের স্বার্থে নয়, দেশের ভবিষ্যতের স্বার্থে ও দেশের অস্তিত্বের স্বার্থে আজকের ভোট প্রতিরোধ, প্রতিহত ও বর্জন করতে হবে। একই সঙ্গে গতকাল দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিবৃতি এবং চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুকও সংবাদ সম্মেলন করে একই আহ্বান জানিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে মাত্র ১২টি এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টির অবস্থান নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক। ৬৩ আসনের ব্যালট পেপারে তাদের দলীয় প্রতীক থাকলেও কতজন নির্বাচনে রয়েছেন, তা স্পষ্ট নয়। এমনকি দলীয় প্রধানসহ বেশ ক'জন গুরুত্বপূর্ণ নেতার অবস্থান নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি রয়েছে। যুদ্ধাপরাধের দায়ে আদালতের রায়ে অভিযুক্ত এবং বিতর্কিত রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। ফলে তারা এ নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। তারাও নির্বাচন ঠেকাতে ভয়াবহ সহিংসতা চালিয়ে আসছে।
দেশের নির্বাচনের ইতিহাসে এবারেই বিপুলসংখ্যক প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভের ঘটনা ঘটেছে। এর আগে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে ৪৯ জনের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। এবার রাজধানীর ১৫টি আসনের মধ্যে ভোট গ্রহণ হবে মাত্র ৮টি আসনে। নির্বাচনকে ঘিরে জানমালের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও অতীতের যে কোনো রেকর্ড এবার ছাড়িয়ে গেছে।
গতকাল ইসি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেছেন, 'রাজনৈতিক সংকট সমাধানের দায়িত্ব কার, সেটা আমার বলা ঠিক হবে না। দেশবাসী ও ইতিহাস তা বিচার করবে।' সাম্প্রতিক সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ভোটকেন্দ্রে নাশকতার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত কেন্দ্রগুলো তাৎক্ষণিকভাবে মেরামত করে ভোট গ্রহণের জন্য প্রস্তুত করা হবে। বিশেষ প্রয়োজনে অল্প কিছু কেন্দ্র পরিবর্তন করা হতে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। ইসির পক্ষ থেকে গতকালও ভোটকেন্দ্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার কথা জানিয়ে ভোটারদের কাছে এসএমএস পাঠানো হয়েছে।
দিনভর নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি মনিটর করতে চার নির্বাচন কমিশনারকে দায়িত্ব ভাগ করে দিয়েছেন সিইসি। আজ তারা নিজ কার্যালয়ে বসেই এ দায়িত্ব পালন করবেন। এতে ঢাকা বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মো. আবদুল মোবারককে। সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মো. শাহনেওয়াজকে। খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী ও রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন মো. আবু হাফিজ।
সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা :বর্তমান নবম সংসদের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২৪ জানুয়ারি। সংবিধানের ১২৩(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মেয়াদপূর্তির ৯০ দিন আগে নির্বাচন আয়োজনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যদিও দশম সংসদের নির্বাচিতরা কবে নাগাদ শপথ গ্রহণ করবেন বা কার্যভার গ্রহণ করবেন তা নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের বিজয় ও সরকার গঠন সময়ের ব্যাপার। তবুও সরকার গঠনের দিনক্ষণ নিয়ে জোটের নীতিনির্ধারক মহলে রয়েছে ভিন্নমত।
তফসিলের পর সহিংসতা :২৫ নভেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সিইসি দশম সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। পরদিন থেকেই নিয়মিত বিরতিতে দেশজুড়ে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করে আসছে বিরোধী জোট। ২৬ নভেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত তারা ৫০১ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে। ২৯ ও ৩০ নভেম্বর 'মার্চ ফর ডেমোক্রেসি' কর্মসূচি পালন করে তারা। ১ জানুয়ারি থেকে চলছে অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশব্যাপী অবরোধ। এরই মধ্যে শনিবার সকাল থেকে টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতালের ডাকও দেওয়া হয়েছে। এসব কর্মসূচি পালনে শতাধিক ব্যক্তির প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। অসংখ্য যানবাহন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গাছ কেটে সয়লাব করা হয়েছে। দু'দিন ধরে ভোটকেন্দ্র টার্গেট করে পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
ঢাকার ৯টি আসনে ভোট :সিটি করপোরেশন এলাকার ১৫টিসহ রাজধানী ঢাকা জেলার আসনসংখ্যা ২০টি। এর মধ্যে আজ ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন ৯টি আসনের ভোটাররা। সিটি করপোরেশন এলাকার ৭টি ও জেলার ৪টি আসনের ভোটাররা এবার ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এর মধ্যে ঢাকা-৪, ঢাকা-৬ ও ঢাকা-১৭ আসনে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী নেই। ঢাকা-১৭ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা তিন প্রার্থী ওই এলাকার অধিকাংশ ভোটারের অপরিচিত। বর্তমানে এই আসনের এমপি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
ভোটার ও ভোটকেন্দ্র :ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হচ্ছেন ১২টি রাজনৈতিক দলের ৩৯০ প্রার্থী। সংসদ নির্বাচনে মোট আসন ৩০০। ভোট হবে ১৪৭ আসনে। ১৫৩ আসনের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। ভোটার সংখ্যা ৯ কোটি ১৯ লাখ ৬৫ হাজার ৯৭৭ জন। নারী ভোটার ৪ কোটি ৫৮ লাখ ৪১ হাজার ৯০৫ জন। পুরুষ ভোটার ৪ কোটি ৬১ লাখ ২৪ হাজার ৭২ জন। ১৪৭ আসনে মোট ভোটার ৪ কোটি ৩৯ লাখ ৮ হাজার ৭২৪। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ কোটি ২০ লাখ ৬ হাজার ৮২৬ জন। নারী ভোটার ২ কোটি ১৯ লাখ ১ হাজার ৯২৮। মোট ভোটকেন্দ্র ৩৭ হাজার ৭০৭। ভোটকক্ষ ১ লাখ ৮৯ হাজার ৭৮। ১৪৭ আসনে ভোটকেন্দ্র ১৮ হাজার ২০৮টি। ভোটকক্ষ ৯১ হাজার ২১৩টি। ৩০০ আসনে রিটার্নিং কর্মকর্তা ৬৬ জন, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ৫৭৭ জন। ১৪৭ আসনে রিটার্নিং কর্মকর্তা ৬১ জন, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ২৮৭ জন। যেসব জেলায় ভোট নেই এর মধ্যে রয়েছে চাঁদপুর, রাজবাড়ী, জয়পুরহাট, শরীয়তপুর ও মাদারীপুর। মোট প্রতিদ্বন্দ্বী (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ১৫৩ জনসহ) ৫৪৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫১৬ ও নারী ২৭। ১৪৭ আসনে প্রার্থী ৩৯০ জন। ১৪৭ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ১২০, স্বতন্ত্র ১০৪, জাতীয় পার্টির ৬৬, জেপির ২৭, বিএনএফের ২২, জাসদের ২১, ওয়ার্কার্স পার্টির ১৬ জন। এ ছাড়াও ন্যাপের ৬, তরীকত ফেডারেশনের ৩, খেলাফত মজলিসের ২, গণতন্ত্রী পার্টির ১, গণফ্রন্টের ১ এবং বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের ১ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া ১২৭ জন আওয়ামী লীগের, ২০ জন জাতীয় পার্টির, ৩ জন জাসদের, ২ জন ওয়ার্কার্স পার্টি ও ১ জন জেপির।
সেনাবাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি :খোদ নির্বাচন কমিশনই প্রায় ১৮ হাজার ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১০ হাজার কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ (গুরুত্বপূর্ণ) হিসেবে চিহ্নিত করেছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় ভোটের পরও অধিক সময় সেনাবাহিনীকে মাঠে রাখার কথাও জানিয়েছেন সিইসি। গতকাল রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন কেন্দ্রের চারপাশে ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কে সেনাসদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে। তবে বিরোধী জোটের নির্বাচন বয়কটের মধ্যে নাশকতার আশঙ্কা করেছেন গোয়েন্দারা। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, শেরপুর, নেত্রকোনা, সাতক্ষীরা, যশোর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাজশাহী, বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নীলফামারী, গাইবান্ধা ও হবিগঞ্জ জেলার এক বা একাধিক আসনকে ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়েছে।
এবার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যের মধ্যে আনসার ২ লাখ ১৮ হাজার ৫০০, পুলিশ ৮০ হাজার, সশস্ত্র বাহিনী ৫২ হাজার ১০০, বিজিবি ১৬ হাজার ১৮১, র‌্যাব ৮ হাজার ৪০৪ ও কোস্টগার্ডের ২০০ জন। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ১৫ থেকে ১৮ জন করে নিরাপত্তা রক্ষী থাকবেন। ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটি ১০৩টি। নির্বাচন পর্যবেক্ষকের সংখ্যা ১৩ হাজার ৩৪১ (প্রাথমিক)।
কঠোর নিরাপত্তা ভোটকেন্দ্রে :নির্বাচন কমিশন গত বুধবার ভোটকেন্দ্র ও নির্বাচনী মালপত্রের সুরক্ষায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কেউ যাতে আক্রমণ করে নির্বাচনী মালপত্র নষ্ট করতে না পারে, সে জন্য ভোটকেন্দ্রের চারপাশে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করতে হবে। নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, ভোটকেন্দ্রসংলগ্ন রাস্তায় সব ধরনের যানবাহন ও জনসাধারণের চলাচল সীমিত করতে হবে। একই সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভ্রাম্যমাণ দল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের টহল জোরদার করতে হবে।
হেলিকপ্টার ব্যবহার করবে র‌্যাব :আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে র‌্যাব হেলিকপ্টার ব্যবহার করবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ইসি সচিবালয় ও বাহিনীগুলোর অনুরোধে বিমানবাহিনী প্রয়োজনীয়সংখ্যক হেলিকপ্টার পরিবহনে সহায়তা দেবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক হেলিকপ্টার সুবিধাজনক স্থানে মোতায়েন রাখবে বিমানবাহিনী। সেনা সদরের বিবেচনায় প্রতিটি স্তরে প্রয়োজনীয়সংখ্যক সেনাসদস্য রিজার্ভ হিসেবে মোতায়েন থাকবেন। তা ছাড়া দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে নির্বাচন কর্মকর্তা, নির্বাচনী মালপত্র পাঠাতেও হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হবে।
ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কেন্দ্র স্থাপন :রিটার্নিং অফিসারদের থেকে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে ভোট গ্রহণ চলাকালে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও ভোট গ্রহণ শেষে প্রাথমিক বেসরকারি ফলাফল সংগ্রহ ও প্রকাশ করতে ইসি সচিবালয়ে একটি 'ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কেন্দ্র' স্থাপন করা হয়েছে। আজ সকাল ৮টা থেকে সর্বশেষ বেসরকারি ফলাফল না পাওয়া পর্যন্ত এ কেন্দ্রের কর্মীরা কাজ করবেন। এ ছাড়া রেজাল্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (আরএমএস) পদ্ধতিতে ইন্টারনেটের মাধ্যমেও সারাদেশের ফলাফল সংগ্রহ করবে কমিশন। ইতিমধ্যে সারাদেশে রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে এ জন্য সফটওয়্যার বিতরণ করা হয়েছে।
ফলাফল পর্যবেক্ষণে অংশগ্রহণকারী দলকে ইসির আমন্ত্রণ :নির্বাচনের ফলাফল পর্যবেক্ষণের জন্য অংশগ্রহণকারী ১২টি দলকে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। গত শুক্রবার রাতে কমিশনের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. ফরহাদ হোসেন স্বাক্ষরিত এ চিঠিটি দলগুলোর সংশিল্গষ্ট দফতরে পাঠানো হয়। চিঠিতে জানানো হয়, নির্বাচনের ফল পর্যবেক্ষণে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে ১২টি বুথ বসানো হবে। সকাল ৮টা থেকে শুরু করে ওই বুথগুলোতে প্রতিটি দলের প্রতিনিধিরা ফলাফল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান করতে পারবেন। সেখান থেকে ফলাফলের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ করতে পারবেন দলগুলোর দায়িত্বরত প্রতিনিধিরা।
ইতিহাস :দেশের নির্বাচনের ইতিহাসে এবারেই বিপুলসংখ্যক প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভের ঘটনা ঘটেছে। এর আগে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একতরফা নির্বাচনে ৪৯ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। সেখানে তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতসহ বড় কোনো দল অংশ নেয়নি। সে সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। কার্যদিবস ছিল মাত্র ৪টি। ভোটার উপস্থিতির হার ছিল মাত্র ২৬ দশমিক ৭৪ ভাগ। একইভাবে ১৯৮৮ সালে চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। ৮টি দলের ৯৭৭ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অব্যাহত আন্দোলনের মুখে ২ বছরের মাথায় ওই সংসদের বিলুপ্তি ঘটে।
২০০৭ সালেও বিএনপি একতরফা নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করে। তফসিলও ঘোষণা করা হয়। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৯ জনকে এক প্রকার বিজয়ী ঘোষণা করা হয়; কিন্তু পরে জরুরি অবস্থা জারি হয়। ভোট গ্রহণ আর হয়নি।

No comments

Powered by Blogger.