এশিয়া কাপ বাংলাদেশেই

(নতুন অতিথি আফগানিস্তান) তখন দুপুর দেড়টা। বিসিবি মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুসের কাছে একটি ফোনকল আসে। রিসিভ করার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই তার চেহারা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। ফোনে কথা শেষে তিনি জানান, কলম্বো থেকে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান ফোন করেছিলেন। রিসিভ করা মাত্রই উচ্ছ্বাসের সঙ্গে বিসিবি সভাপতি বলেন, 'ভেরি গুড নিউজ। এশিয়া কাপ কোথাও যাচ্ছে না। আমাদের এখানেই হবে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে।' বিসিবি সভাপতির ফোনের পরই যেন স্বস্তির বাতাস বয়ে যায় মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কার্যালয়ে। কলম্বোয় এসিসির বৈঠকের মূল এজেন্ডা ছিল টুর্নামেন্টের কমার্শিয়াল রাইটস বিক্রি। এসিসি তাদের কমার্শিয়াল পার্টনার হিসেবে 'স্টার ইন্ডিয়া'কে বেছে নেয়। তাদের আগের ব্রডকাস্টিং পার্টনার 'নিম্বাস'-এর সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করেছে এসিসি। এরপর স্টার ইন্ডিয়ার প্রতিনিধিই ভেন্যু নিয়ে আলোচনা তোলেন। তখন এসিসি জানিয়ে দেয়, ভেন্যু পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশেই হবে এশিয়া কাপ। এমনকি বৈঠকে বিকল্প ভেন্যু বিষয়ে আলোচনা পর্যন্ত হয়নি। এশিয়া কাপের খেলা হবে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম এবং ফতুল্লার খান সাহেব উসমান আলী স্টেডিয়ামে। বিসিবি সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে বিসিবি প্রতিনিধি দলের উপস্থাপনায় পুরোপুরি সন্তুষ্ট হয়েছে এসিসি ও সদস্য দেশগুলো।
চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, সংঘাত-হানাহানি বড় ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছিল আসন্ন এশিয়া কাপ ক্রিকেটকে। শঙ্কা ছিল, এমন পরিস্থিতিতে এসিসি এশিয়া কাপ অন্য কোনো দেশে সরিয়ে নিয়ে যায় কি-না; কিন্তু গতকাল এসিসির বৈঠকে সব শঙ্কা দূর হয়ে গেছে। বৈঠকে আরও দুটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। পঞ্চম দেশ হিসেবে এশিয়া কাপে অংশ নেবে আফগানিস্তান। তাই ম্যাচের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১১-তে। ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ৮ মার্চের মধ্যে টুর্নামেন্ট শেষ করার সিদ্ধান্তও হয়েছে বৈঠকে। এসিসির বৈঠকে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গে ছিলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী। বিসিবির প্রধান নির্বাহী জানান, 'সিদ্ধান্ত হয়েছে, বাংলাদেশে হবে এশিয়া কাপ। এসিসির বোর্ড মেম্বারদের সামনে আমরা নিরাপত্তা এবং সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে অত্যন্ত ভালো একটি উপস্থাপনা দিয়েছি এবং তাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছি যে, আমরা ভালোভাবেই এশিয়া কাপ আয়োজন করতে পারব। আফগানিস্তানকে টুর্নামেন্টে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। দল পাঁচটি হওয়ায় এখন ম্যাচের সংখ্যা বেড়ে ১১টিতে দাঁড়াবে।'
এসিসির প্রধান নির্বাহী সৈয়দ আশরাফুল হক জানিয়েছেন, বিসিবি প্রতিনিধি দলের উপস্থাপনার পর সদস্য দেশগুলো নিরাপত্তা নিয়ে কোনো প্রশ্নই তুলতে পারেনি। তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ নিরাপত্তা নিয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা এসিসিতে দাখিল করেছে। তাদের পরিকল্পনা খতিয়ে দেখে আমরাও সন্তুষ্ট হয়েছি। এখন যদি কোনো সদস্যদেশের প্রশ্ন থাকে, তাহলে তারা সেটা বাংলাদেশের কাছে উপস্থাপন করতে পারে।' এসিসির এ সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের ক্রিকেট অনেক উপকৃত হয়েছে। কারণ এ মাসের শেষদিকে শ্রীলংকা সফর নিয়ে এখন প্রশ্ন থাকবে না। টি২০ বিশ্বকাপ নিয়ে আইসিসির শঙ্কাও দূর হয়ে যাবে। রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণেই এশিয়া কাপ নিয়ে শঙ্কার সৃষ্টি। আর এখানে কিছুটা ইন্ধন জোগাতে চেয়েছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডও। দু'দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্মরণকালের সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় গিয়ে দাঁড়ায় গত ডিসেম্বরে। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড ঘোষণা করে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পেলেই কেবল তারা বাংলাদেশে দল পাঠাবে। তবে এসিসিতে পেশ করা বিসিবির নিরাপত্তা পরিকল্পনায় তারাও এখন আর প্রশ্ন তুলতে পারবে না। এমনকি এ বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো আলোচনাই হয়নি। তাই বলা যায়, যদি কোনো ঝামেলা ছাড়া এশিয়া কাপ আয়োজন করা যায় তাহলে টি২০ বিশ্বকাপ আয়োজন নিয়ে কোনো সন্দেহই থাকবে না।
ক'দিন আগে কয়েকটি ভারতীয় মিডিয়ায় খবর আসে যে কলকাতা এবং রাঁচি এশিয়া কাপ আয়োজনে আগ্রহী; কিন্তু গতকাল বৈঠক শেষে এসিসি প্রধান নির্বাহী স্কাইপের মাধ্যমে বাংলাদেশের একটি টিভি চ্যানেলকে জানান, 'এশিয়া কাপ আয়োজনের ব্যাপারে ভারত কোনো আগ্রহই প্রকাশ করেনি। সেটা ছিল সম্পূর্ণ মিডিয়ার তৈরি খবর। বৈঠকে ভারত বরং বাংলাদেশে এশিয়ার কাপ আয়োজনের পেছনে জোর সমর্থন দিয়েছে।' কলম্বোয় এসিসির বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি এন শ্রীনিবাসন। তিনি এসিসির চেয়ারম্যান। পিসিবির প্রধান নির্বাহী সুবহান আহমেদ, শ্রীলংকা ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট জয়ন্তা ধর্মধাসা, প্রধান নির্বাহী নিশান্থা রানাতুঙ্গা, বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান, সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভুটান ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.