জাতীয় পার্টির লড়াই হবে ৩৩ আসনে by রাজীব আহাম্মদ

৬৪ আসনের ব্যালটে লাঙ্গল প্রতীক থাকলেও ভোটের লড়াই হবে দলটির ৩৩ আসনে। দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ বাকি ৩৯ জনের প্রার্থিতা থাকলেও ভোটযুদ্ধে নেই তারা। তাদের কেউ সরে দাঁড়িয়েছেন দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নির্দেশে। আবার কেউ সরে দাঁড়িয়েছেন আওয়ামী লীগের কাছ থেকে 'ছাড়' না পেয়ে। জাতীয় পার্টির মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৮৪। তবে এর মধ্যে ২১ জন আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। আজ যে ১৪৭ আসনে ভোট লড়াই হবে তার ৬৪টিতে আছেন দলটির প্রার্থীরা। যে ৩৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন তাদের ৯ জনকে লড়তে হবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। ১০ জনকে লড়তে হচ্ছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিপক্ষে। বিএনএফ, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, জেপি ও তরীকত ফেডারেশনের প্রার্থীদের বিপক্ষে লড়তে হবে ১৪ আসনে। এবারের নির্বাচনে ৪৮টি আসনে জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে ২১টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দলটির প্রার্থীরা জয় পেয়ে যায়। আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ছাড় পাওয়া বাকি ২৭ আসনের ২৪টিতে স্বতন্ত্র ও অন্য দলের বিপক্ষে লড়বেন জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। অন্য তিন আসনে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ছাড় পেলেও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা।
এরশাদ ও তার ভাই জিএম কাদের নির্বাচনে না থাকলেও এরশাদপত্নী রওশন এরশাদের নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন এ ৩৩ প্রার্থী। দলের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমীন এরশাদের নির্দেশে নির্বাচন বর্জনের কথা বললেও গতকালও তিনি নির্বাচনী এলাকা পটুয়াখালী-১ আসনে যান। তবে দাবি করেন, ভোট চাইতে নয়, মাজার জিয়ারতে গিয়েছিলেন। কিন্তু দিনভর আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন তিনি। তার বিপক্ষে প্রার্থী থাকলেও ভোটের মাঠে তৎপরতা নেই।
জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা ভোটের লড়াইয়ে আছেন পঞ্চপড়-১, ঠাকুরগাঁও-৩, নীলফামারী-১ ও ৩, কুড়িগ্রাম-১, বগুড়া-৪ ও ৭, রাজশাহী-৩, পটুয়াখালী-১, বরিশাল-৩, জামালপুর-৪, ময়মনসিংহ-৭, কিশোরগঞ্জ-৩, ঢাকা-১, ৪ ও ৬, সিলেট-২ , মৌলভীবাজার-২, হবিগঞ্জ-৩, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৫, কুমিল্লা-১, ৩ ও ৪, ফেনী-৩, নোয়াখালী-৬, লক্ষ্মীপুর-১ ও ৪, চট্টগ্রাম-৩, ৯ ও ১৩, কক্সবাজার-৪ এবং পার্বত্য খাগড়াছড়ি আসনে।
আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি উভয় দলেরই প্রার্থী রয়েছেন এমন আসনের সংখ্যা ৩৭টি। তবে এর মধ্যে মাত্র ৯টিতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভোটের মাঠে আছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। এ আসনগুলোতে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা হলেন নীলফামারী-১ জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, নীলফামারী-৩ কাজী ফারুক কাদের, রাজশাহী-৩ শাহাবুদ্দিন, ঢাকা-১ সালমা ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ মামুনুর রশিদ, নোয়াখালী-৬ আনোয়ারুল আজিম, লক্ষ্মীপুর-১ মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান, লক্ষ্মীপুর-৪ বেলাল হোসেন এবং কক্সবাজার-৪ তাহা ইয়াহিয়া।
তবে জোর লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে ঢাকা-১ আসনে। এখানে জাতীয় পাটির প্রার্থী সর্বদলীয় সরকারের মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সালমা ইসলাম। আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান। লক্ষ্মীপুর-১ আসনে নৌকার বিরুদ্ধে লড়াই হলেও এখানে লাঙ্গলের প্রতিদ্বন্দ্বী তরীকত ফেডারেশনের মহাসচিব এমএ আউয়াল। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জয় পাওয়া কঠিন জেনেও কক্সবাজার-৪-এর তাহা ইয়াহিয়া জানান, সুষ্ঠু ভোট হলে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কঠিন লড়াইয়ে মুখোমুখি হচ্ছেন জাতীয় পার্টির কুড়িগ্রাম-১ আসনে একেএম মোস্তাফিজুর রহমান, ময়মনসিংহ-৭ এমএ হান্নান, কিশোরগঞ্জ-৩ মজিবুল হক চুন্নু, ঢাকা-৪ সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সিলেট-২ মো. ইয়াহিয়া, মৌলভীবাজার-২ মহিবুল কাদের চোধুরী, কুমিল্লা-১ জায়েদ আল মাহমুদ, কুমিল্লা-৩ আক্তার হোসেন, কুমিল্লা-৪ ইকবাল হোসেন রাজু এবং ফেনী-৩ আসনে রিন্টু আনোয়ার।
ময়মনসিংহ-৭-এ আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী দলটির সাবেক এমপি মাওলানা রুহুল উল্লাহ মাদানী। তিনি জানান, সুষ্ঠু ভোট হলে জাতীয় পার্টির জামানত থাকবে না। জোটের কারণে তার মতো একজন ভুঁইফোড় নেতা মনোনয়ন পেয়েছেন। তবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এ হান্নানের আশাবাদ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী তার সঙ্গেই থাকবেন। তিনিই জয়ী হবেন।
উপরের ১৯ আসনে কঠিন লড়াইয়ের মুখে পড়তে হলেও ১৪টি আসনে ছোট ছোট দলের প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের আশা করতে পারে জাতীয় পার্টি। পঞ্চপড়-১ আবু সালেকের প্রতিদ্বন্দ্বী জাসদ, ঠাকুরগাঁও-৩ হাফিজ উদ্দিন আহমেদের প্রতিদ্বন্দ্বী ওয়ার্কার্স পার্টি। বগুড়া-৪ নুরুল আমিন বাচ্চুর প্রতিদ্বন্দ্বী জাসদ, বগুড়া-৭ আলতাফ আলীর প্রতিদ্বন্দ্বী জেপি, পটুয়াখালী-১ এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদারের প্রতিদ্বন্দ্বী দুর্বল স্বতন্ত্র প্রার্থী, বরিশাল-৩ গোলাম কিবরিয়া টিপুর প্রতিদ্বন্দ্বী ওয়ার্কার্স পার্টি, জামালপুর-৪ ইঞ্জিনিয়ার মামুনুর রশীদের প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনএফ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ জিয়াউল হক মৃধার প্রতিদ্বন্দ্বী কয়েকটি ছোট দলের প্রার্থী, লক্ষ্মীপুর-১ মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমানের প্রতিদ্বন্দ্বী তরীকত, চট্টগ্রাম-৩ এমএ ছালামের প্রতিদ্বন্দ্বী জাসদ, চট্টগ্রাম-৯ জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনএফ, চট্টগ্রাম-১৩ তপন চক্রবর্তীর প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনএফ এবং পার্বত্য খাগড়াছড়িতে সোলায়মান আলম শেঠের প্রতিদ্বন্দ্বী আদিবাসী দুটি দলের প্রার্থী।
জাতীয় পার্টি সব আসনে ভোটের লড়াইয়ে না থাকলেও যে আসনগুলোতে নির্বাচন হচ্ছে সেখানে ভালো ফল করবে বলে আশাবাদী দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। ৩৩ আসনের অন্তত ২০টিতেই লাঙ্গল জয়ী হবে বলে ধারণা করছেন সর্বদলীয় সরকারের এ মন্ত্রী।

No comments

Powered by Blogger.