চাল ডাল তেল দিয়ে ফুরফুরে লতিফ! by আনোয়ার রোজেন

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উড়ে এসে জুড়ে বসেছিলেন এমএ লতিফ। এমপি নির্বাচিত হয়ে দিয়েছিলেন চমকও। পাঁচ বছর নানা কাজ করে এ চমক জিইয়ে রেখেছিলেন তিনি। কখনও রাস্তার ওপরে প্রকাশ্যে পিটিয়েছেন পুলিশকে। কখনও বন্দরে গিয়ে শাসিয়ে এসেছেন কর্মকর্তাদের। ভোটারদের কথা বিবেচনা করে গত পাঁচ বছরে ব্যতিক্রমী কাজও করেছেন তিনি। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে সবাই যখন দিশেহারা তখন সুলভ মূল্যে তা এলাকার বাসিন্দাদের কাছে সরবরাহ করেছেন তিনি। পুরো পাঁচ বছর এমন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করায় এবারের নির্বাচনে অনেকটা ফুরফুরে মেজাজে আছেন লতিফ। অবশ্য ফুরফুরে মেজাজে থাকার অন্য একটা কারণও আছে। আজকের নির্বাচনে তার বিরুদ্ধে নেই শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী!
জাসদের জসিম উদ্দিন ও জাতীয় পার্টির (জাপা) কামাল উদ্দিন চৌধুরী লড়ছেন লতিফের সঙ্গে। প্রার্থী হিসেবে তাদের তেমন কোনো পরিচিতি নেই। আবার প্রার্থী হিসেবে নেই আওয়ামী লীগেরও কোনো বিদ্রোহী। অথচ গতবার এ আসন থেকে এমপি হলেও মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছিলেন লতিফ। বন্দরের শ্রমিক রাজনীতি নিয়ে এ দ্বন্দ্বের সূচনা। অনেকের ধারণা ছিল, লতিফকে শিক্ষা দিতে এবার এ আসনে প্রার্থী হবেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। আবার এ আসন থেকে প্রার্থী হতে প্রচারণা চালিয়েছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজনও। মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে সখ্য আছে সুজনের। তাই রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন ছিল, মহিউদ্দিন নিজে না দাঁড়ালেও এ আসনে প্রার্থী করবেন তার পছন্দের সুজনকে। শেষ পর্যন্ত তার কোনোটিই না হওয়ায় এখন অনেকটাই নিশ্চিন্ত লতিফ।
চট্টগ্রাম বন্দর-পতেঙ্গা আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৯। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৫০ হাজার ৫৮১, নারী ২ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৮। এসব ভোটারের বেশির ভাগই নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত। এ আসনে দুটি ইপিজেডসহ রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। ইপিজেডে নিম্নবিত্ত পরিবারই বেশি। বছর ধরে লতিফের সুলভ মূল্যে দেওয়া চাল-ডাল-তেলের সুবিধা ভোগ করেছে এসব পরিবার। তাই ধারণা করা হচ্ছে, আজকের ভোটে এর প্রভাব পড়বে।
সরে দাঁড়ালেন জাসদ প্রার্থীও
চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে জাসদ থেকে মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থী জসিম উদ্দিন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুরোধে গত শুক্রবার লতিফকে সমর্থন দিয়ে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত জানান। এ কারণে নির্বাচনের মাঠে লতিফের অবস্থান আরও শক্ত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জসিম উদ্দিন বলেন, 'চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুরোধে আমি নির্বাচন থেকে সরে এসেছি।' একই বিষয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, '১৪ দলের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন জসিম উদ্দিন।' উল্লেখ্য, জসিম উদ্দিন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোয় এ আসনে এখন লতিফের প্রতিদ্বন্দ্বী কেবল জাপার কামাল উদ্দিন চৌধুরী।
ব্যতিক্রমী প্রচার
শুক্রবার সকাল ৮টার পর নির্বাচনী প্রচারণা আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়ে যাওয়ায় বন্দর-পতেঙ্গা আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী এমএ লতিফ জুমার নামাজ পড়েন নিজ এলাকার ওয়ারিশ সওদাগরের বাড়ির মসজিদে। পরে মসজিদে দাঁড়িয়েই স্থানীয় মুরবি্ব আবদুর রহিম সওদাগরের কবর জেয়ারত করেন তিনি। এরপর ছুটে যান নিমতলা এলাকার বাসিন্দা জানে আলমের নামাজে জানাজায়। কিন্তু তিনি পেঁৗছার আগেই জানাজা শেষ হয়ে গেলে লাশের খাটিয়া ধরে লতিফ গেলেন জানে আলমের কবর পর্যন্ত। এমপি প্রার্থীকে এভাবে খাটিয়া ধরে এগোতে দেখে কিছুটা অবাক হন ভোটাররা। তাদের বিস্ময় বাড়াতে দাফন সম্পন্ন পর্যন্ত দাঁড়িয়ে ছিলেন লতিফ। এ সময় অনেকের সঙ্গেই তিনি কুশল বিনিময় করেন। কৌশলে চাইলেন ভোটও। এভাবেই গত পাঁচ বছর অনেক কৌশলী আচরণ করেছেন লতিফ।

No comments

Powered by Blogger.