৭৮ রাষ্ট্রের না, ভরসা ৪ পর্যবেক্ষক, ২১ সাংবাদিক! by মিজানুর রহমান

নির্বাচন পর্যবেক্ষণে বিদেশী সাংবাদিকদেরও এবার আগ্রহ নেই। অতীতের জাতীয় নির্বাচনগুলোতে বিদেশী পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের ব্যাপক উপস্থিতি থাকলেও এবারের চিত্র সমপূর্ণ ভিন্ন।
প্রধান বিরোধী দলসহ বিরোধী জোটগুলোর বর্জনের মুখে অনুষ্ঠিত আজকের দশম সংসদ নির্বাচনে গতকাল পর্যন্ত ২১ জন সাংবাদিক ঢাকায় পৌঁছেছেন বলে দাবি করেছেন সরকারের পররাষ্ট্র দপ্তরের পরিচালক (মিডিয়া)। তার মধ্যে বিসিসি’র ১, আল জাজিরা ৯, রয়টার্স ৩, সুইস টেলিভিশন ১, এনএইচকে (জাপান) ২ এবং ফ্রিল্যান্স ৫ জন প্রতিনিধি ঢাকায় এসেছেন বলে জানান ওই পরিচালক। তবে বিদেশী সাংবাদিকদের জন্য স্থাপিত সোনারগাঁওয়ের মিডিয়া সেলে গতকাল সন্ধ্যায় টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত নারী কর্মকর্তা ১৩ জন স্ব-শরীরে রিপোর্ট করেছেন বলে জানান। মানবজমিনের সঙ্গে আলাপে তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা জানান, দিল্লিস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে পাওয়া তথ্য মতে ৪৬ জন বিদেশী সাংবাদিক নির্বাচন কভার করার জন্য ভিসা সংগ্রহ করেছিলেন। তবে চূড়ান্তভাবে কত জন ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন বা রাতে পৌঁছাবেন সে সম্পর্কে তাৎক্ষণিক কোন তথ্য তিনি সরবরাহ করতে পারেননি। তবে পররাষ্ট্র দপ্তরের মহাপরিচালক (বহিঃপ্রচার) শামীম আহসান এনডিসি’র সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কোন দেশ থেকে কতজন সাংবাদিক আসছেন সে বিষয়ে পররাষ্ট্র দপ্তরের আগাম তথ্য পাওয়ার সুযোগ কমে গেছে। ৬ মাস আগেও যে কোন বিদেশী সাংবাদিকের ঢাকায় আসার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি ছিল। আগ্রহী যে কোন সাংবাদিকের ঢাকা সফরের ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র দপ্তরে আগাম তথ্য পাঠিয়ে ছাড়পত্র নিতে হতো। ৬ মাস ধরে সেটি শিথিল করা হয়েছে। এখন আগাম তথ্য সরবরাহ বা পররাষ্ট্র দপ্তরের মতামত নেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। তাদের ভিসা দেয়া না দেয়ার বিষয়টি একান্তভাবে মিশনের এখতিয়ার। পররাষ্ট্র দপ্তরের ওই কর্মকর্তা বলেন, আমার কাছে কোন তথ্য নেই। তবে শুনেছি গুড নাম্বার অব ফরেন জার্নালিস্ট আসছেন। একাধিক কূটনৈতিক সূত্র মতে, নির্বাচনটি একতরফা হওয়া, প্রায় ৫ কোটি ভোটারকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করে ১৫৩ আসনে ভাগাভাগির ভিত্তিতে সরকার সমর্থক প্রার্থীদের নির্বাচিত ঘোষণা এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কাঙ্ক্ষিত পরিবেশ না থাকায় ২৮ রাষ্ট্রের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ৫৩ স্বাধীন রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত কমনওয়েলথ নির্বাচনটি পর্যবেক্ষণ না করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়। তাদের পথ ধরে পর্যবেক্ষণ থেকে সরে দাঁড়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। জোটগত ভাবে তো নয়ই। রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের ওই নির্বাচনে ভারত ছাড়া কমনওয়েলথ-এর বাকি ৫১ সদস্য রাষ্ট্র পর্যবেক্ষণ করছে না। কমনওয়েলথ ও ইইউ উভয় জোটে আছে সাইপ্রাস, মাল্টা ও যুক্তরাজ্য। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া সব মিলে মোট ৭৮ রাষ্ট্র পূর্ব সিদ্ধান্ত মতে এবারের নির্বাচনটি পর্যবেক্ষণ করছে না। ঢাকায় ওই দুই জোটভুক্ত বিভিন্ন মিশনের দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অতীতের সব নির্বাচনের দিনে দায়িত্বের বাড়তি চাপ থাকলেও এবার তারা থাকছেন ছুটির আমেজে। বাংলাদেশী স্টাফদেরও দায়িত্বও হালকা করা হয়েছে। বৃটিশ হাইকমিশনের এক বাংলাদেশী কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, ঢাকা-১৭ আসনের তিনি ভোটার। ভোট দেয়ার জন্য তার মিশন তাকে যথেষ্ট সময় দিয়েছে। মার্কিন দূতাবাস ভোটের দিনে বন্ধই থাকছে। সুইস দূতাবাসও আগামী ৬ই জানুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ থাকছে বলে জানা গেছে। তবে শেষ ভরসা- ভারত ও ভূটানের ৪ পর্যবেক্ষক ঢাকায় এসেছে। গত নির্বাচনেও ইইউ ও কমনওয়েলথ-এর ঢাকাস্থ কর্মকর্তারা তাদের দেশগুলো থেকে আসা পর্যবেক্ষকদের জন্য বাড়তি দায়িত্বের চাপে ছিলেন। এবার তাদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংশ্লিষ্ট কোন কাজই করতে হচ্ছে না বলে জানা গেছে। কূটনৈতিক সূত্র মতে, কেবল নির্বাচন পর্যবেক্ষণ থকে বিরত থাকাই নয়, দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে তাদের চাপ অব্যাহত রেখেছে। নির্বাচনের আগের দিনগুলোতেই ঢাকাস্থ পশ্চিমা কূটনীতিকরা এ নিয়ে বিবদমান জোট দু’টির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের মনোভাব জানার চেষ্টা করেছেন। নিজ নিজ রাষ্ট্র ও সরকারের মনোভাব জানানোরও চেষ্টা ছিল দূতদের। সব মিলে নির্বাচন যা-ই হোক এটি যে কোনভাবেই গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে না সে বিষয়টি তারা স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছেন উভয় দল ও জোটকে। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ও গঠনমূলক সংলাপ প্রশ্নে বরাবরের মতো ভোট শেষ হওয়ার পরও কূটনীতিক চাপ অব্যাহত থাকবে বলে বিভিন্ন সূত্র আভাস দিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.