নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত ভোটাররা

শুরুতে নিরুত্তাপ থাকলেও শেষ মুহূর্তে টান টান উত্তাপ-উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে বরিশাল বিভাগের ৭ নির্বাচনী আসনে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার চাদরে সব অশুভ তৎপরতা ঢেকে দেওয়ার কথা বলা হলেও ভোটাররা শঙ্কিত। ফলে আসনগুলোর সাধারণ ভোটারের মধ্যেও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। এ বিভাগে ১১ আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে পটুয়াখালীর ২ এবং ঝালকাঠি ও বরিশালের ১টি করে আসনে একেবারেই নিরুত্তাপ পরিবেশ রয়েছে। উত্তাপ-উত্তেজনার ৭ আসনের ১৮ ভোটকেন্দ্রে অগি্নসংযোগ, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের এজেন্ট-সমর্থকদের মারধর, বহিরাগতদের আনাগোনা এবং আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকদের হুমকিতে সাধারণ ভোটাররা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। সবচেয়ে গুমোট পরিস্থিতি বিরাজ করছে বরগুনার ২টি নির্বাচনী আসনে। ওই দুই আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকদের হুমকি-ধমকি, প্রতিপক্ষের সমর্থকদের মারধর, মহড়া এবং বহিরাগতদের আনাগোনায় ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনে প্রচারের শুরু থেকে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও শুক্রবার রাতে দুটি ভোটকেন্দ্রে এবং একটি বাজারে অগি্নসংযোগের ঘটনার পর ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শুক্রবার রাতে হিজলা উপজেলার বালিবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বারান্দায় দুর্বৃত্তরা অগি্নসংযোগ করলে আশপাশের আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থকরা আগুন নিভিয়ে ফেলে। ওই কেন্দ্রের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। মেহেন্দীগঞ্জের আন্ধারমানিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রেও শুক্রবার রাতে অগি্নসংযোগ করা হলে একটি কক্ষ ভস্মীভূত হয়। এ আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ অবশ্য তার আসনে কোনো উত্তাপ-উত্তেজনা নেই দাবি করে বলেন, প্রচারে তিনি দুই উপজেলার প্রতিটি গ্রামে ঘুরেছেন। ফলে সর্বত্র নির্বাচনী উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আশা করেন, আশাতীত ভোটার আজ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে মুলাদীর কাজীরচর ইউপির বাহাদুরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে শুক্রবার গভীর রাতে দুর্বৃত্তরা অগি্নসংযোগ করলে একটি কক্ষ ভস্মীভূত হয়। বৃহস্পতিবার একই উপজেলার বজায়শুরী বিদ্যালয়ে অগি্নসংযোগ করা হয়। এদিকে এ আসনের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী অ্যাডভোকেট টিপু সুলতান অভিযোগ করেন, তার কেন্দ্র কমিটির লোকদের মারধর, কেন্দ্রে না যাওয়ার হুমকি এবং কালো টাকা ছড়াচ্ছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাংসদ গোলাম কিবরিয়া টিপু। জাতীয় পার্টির প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন টিপু সুলতান। তবে জাপা প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া টিপু এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা দাবি করে পাল্টা অভিযোগ করেছেন, টিপু সুলতান ভোটের মাঠে নিষিদ্ধ সর্বহারাদের নিয়ে প্রচার চালিয়েছেন।
বরগুনার দুটি আসনের ৭টি ভোটকেন্দ্রে শুক্রক্রবার রাতে অগি্নসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। বরগুনা সদর আসনের ৬টি ভোটকেন্দ্রে অগি্নসংযোগের ঘটনায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু এমপি দায়ী করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে।
শম্ভুর অভিযোগ, জামায়াত-বিএনপির সহায়তায় দেলোয়ারের সমর্থকরা ওই ভোটকেন্দ্রে অগি্নসংযোগ করেছে। অপরদিকে দেলোয়ারের অভিযোগ, তার বিজয় ঠেকাতে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য ভোটকেন্দ্রে আগুন দিয়েছে।
ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে বরগুনা-২ (পাথরঘাটা-বামনা-বেতাগী) আসনের পাথরঘাটা উপজেলায়। শুক্রবার রাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. আবুল হোসেন শিকদার ও তার সমর্থক পৌর কাউন্সিলর আবদুল করিমকে মারধর করেছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকরা। পুলিশ আবুল হোসেন শিকদার ও তার সমর্থকদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে গেলে গভীর রাতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শওকত হাসানুর রহমান রিমনের সমর্থকরা থানায় হামলা ও ভাংচুর চালায়। ভোরে রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক আবদুল ওহাব ভূঁইয়া প্রার্থী আবুল হোসেন শিকদারকে উদ্ধার করে বেতাগী উপজেলায় নিয়ে যান। এ ঘটনার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শওকত হাসানুর রহমান রিমন হামলা-ভাংচুরের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল হোসেন শিকদার বহিরাগতদের নিয়ে থানায় অবস্থান করছে এ খবর শুনে তার সমর্থকরা সেখানে প্রতিবাদ জানাতে গিয়েছিল। তবে গতকাল শনিবার আওয়ামী লীগ প্রার্থী রিমনের সমর্থকরা পাথরঘাটায় দিনভর মোটরসাইকেল মহড়া এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের ধারাবাহিকভাবে হুমকি দেওয়ায় সাধারণ ভোটাররা ভীত।
পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনের মীরুখালী ইউপির দেবীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে শুক্রবার গভীর রাতে অগি্নসংযোগ করে দুবর্ৃৃত্তরা। এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সাংসদ ডা. রুস্তম আলী ফরাজী অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডা. আনোয়ার হোসেন ও তার সমর্থকরাই ভোটকেন্দ্রে আগুন দিয়েছে; ভোটাররা যাতে কেন্দ্রে না আসেন এবং সেই সুযোগে ভোট ডাকাতি করতে পারেন। ডা. রুস্তম আলী ফরাজি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে কালো টাকা ছড়ানো এবং ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগও তুলেছেন। এসব অভিযোগের ব্যাপারে সাংসদ ডা. আনোয়ার হোসেনের ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দুই প্রার্থীর সমর্থকদের হুমকি-ধমকিতে এবং ভোটকেন্দ্রে অগি্নসংযোগের ঘটনায় সাধারণ ভোটাররা ভোট প্রদানে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।
ভোলা জেলার দুটি নির্বাচনী আসনেও সাধারণ ভোটারের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
নির্বাচনের শুরু থেকেই ভোলা-৩ (লালমোহন-তজুমদ্দিন) আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন এমপি এবং তার সমর্থকরা প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির প্রার্থী অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলামের কর্মী-সমর্থকদের মাঠেই নামতে দেননি। অ্যাডভোকটে নজরুল ইসলাম অভিযোগ করেছেন, তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের ভয়ে তেমন প্রচার চালাতে পারেননি। এ ছাড়া এ আসনের উত্তরজয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চরউমেদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে শুক্রবার রাতে দুর্বৃত্তরা অগি্নসংযোগ করায় সাধারণ ভোটারের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি হয়েছে।
ভোলা-২ (দৌলতখান-বোরহানউদ্দিন) আসনের দৌলতখান উপজেলার মধ্যচরশুভী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বোরহানউদ্দিন উপজেলার মদন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং গরিব মাঝি মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্রে দুর্বৃত্তরা অগি্নসংযোগ করলে কেন্দ্রগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

No comments

Powered by Blogger.