ইতিহাস মনে রাখবে তাঁকে

মনমোহন সিং
মনমোহন সিং। ভারতে রাজনীতিক হিসেবে ব্যতিক্রমধর্মী সুনামের অধিকারী। একসময়ের কৃতী অর্থমন্ত্রী হিসেবে ভারতের অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচির জনক হিসেবে পরিচিত। তবে তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বের সময় বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর দুর্নীতির কেলেঙ্কারি ঘটেছে। দুই মেয়াদে প্রায় এক দশক ক্ষমতায় থাকার পর আজও ব্যক্তি হিসেবে সম্ভবত ভারতের সবচেয়ে পরিষ্কার ভাবমূর্তির রাজনীতিক হিসেবে দেখা হয়ে থাকে মনমোহনকে।
তবে অনেক পর্যবেক্ষকের মতে, কেবল এই ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি একটি দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। আগামী লোকসভা নির্বাচনের পর নিজেকে প্রধানমন্ত্রী পদে দেখার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে মনমোহন ইঙ্গিত দিয়েছেন, বিখ্যাত নেহরু-গান্ধী পরিবারের সন্তান রাহুল গান্ধীরই আছে এ পদের জন্য ‘অসাধারণ প্রশংসাপত্র’। আর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রার্থী নরেন্দ্র মোদিকে তিনি বর্ণনা করেছেন একজন ‘ভয়ানক’ প্রার্থী হিসেবে। ৮১ বছর বয়সী মনমোহনই ভারতের প্রথম শিখ প্রধানমন্ত্রী। ২০০৪ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস দল বিজয়ী হওয়ার পর দলীয় প্রধান সোনিয়া গান্ধী প্রধানমন্ত্রীর পদ প্রত্যাখ্যান করলে এ পদে প্রথমবারের মতো নিযুক্ত হন মনমোহন। ২০০৯ সালে তাঁর নেতৃত্বে কংগ্রেস দ্বিতীয়বারের মতো জয়ী হয়। মনমোহনের দ্বিতীয় মেয়াদ হয়ে ওঠে নানা অঘটনের সংবাদে পরিপূর্ণ। এর মধ্যে তাঁর কয়েকজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির কেলেঙ্কারির অভিযোগ ছিল বড় ঘটনা। মনমোহন সিংয়ের প্রথম পাঁচ বছর মেয়াদের বড় সফলতা হচ্ছে, ভারতকে পারমাণবিক ইস্যুতে একঘরে অবস্থা থেকে বের করে আনা।
একটি ঐতিহাসিক চুক্তির মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক প্রযুক্তিতে ভারতের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করেছেন। তবে এ জন্য মূল্যও দিতে হয়েছে। ওই চুক্তির প্রতিবাদে বামপন্থী মিত্ররা সরকারের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। মোটের ওপর ভারতকে অর্থনৈতিক এবং পারমাণবিক কর্মসূচির দিক দিয়ে নিঃসঙ্গ অবস্থা থেকে বের করে আনায় মনমোহন সিংকে মনে রাখবে ইতিহাস। যদিও কিছু ইতিহাসবিদের মত হচ্ছে, তিনি আরেকটু আগে অবসর নিলেই ভালো করতেন। বিবিসি। রাজনীতিতে উত্থান রাজনীতিক হিসেবে মনমোহনের উত্থান ঘটে ১৯৯১ সালে, দেশের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে। তখন ভারত দেউলিয়াত্বের দিকে ধাবিত হচ্ছিল। একটি উচ্চাভিলাষী অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচির শুরু করেন তিনি। পরের ইতিহাস কেবলই এগিয়ে যাওয়ার। পড়াশোনা পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পর যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর এবং অক্সফোর্ড থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি নেন মনমোহন। পররাষ্ট্রনীতি দুই পূর্বসূরির নীতি গ্রহণ করেছেন। পাকিস্তানের সঙ্গে শান্তি প্রক্রিয়া চালিয়ে গেছেন। পাশাপাশি আরেক প্রতিবেশী চীনের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করতেও সচেষ্ট হয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.