শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে মানুষ শীতবস্ত্রের অভাব

(ফুলবাড়ী ও মোরেলগঞ্জে ৩ জনের মৃত্যু) শৈত্যপ্রবাহে দেশজুড়ে কাঁপছে মানুষ। তীব্র শীতে বিভিন্ন স্থানে শীতজনিত বিভিন্ন রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী ও বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে ৩ জন মারা গেছেন। দরিদ্র ও নিম্নআয়ের লোকজন শীতবস্ত্রের অভাবে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর_
ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) :শীতকালীন রোগে আক্রান্ত হয়ে শুক্রবার ফুলবাড়ীতে দু'জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন_ উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের তালুক শিমুলবাড়ী গ্রামের ছোলেমন কামার ও জোবেদ আলীর স্ত্রী সুফিয়া বেগম। শৈত্যপ্রবাহে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষজন। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে জেলার নদ-নদীতীরবর্তী চর ও দ্বীপচরের মানুষজন।
মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) :ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে উপজেলায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে শীতজনিত রোগে মারা গেছে একজন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, হাসপাতালে প্রতিদিন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। উপজেলার দক্ষিণ সুতালড়ি গ্রামের মো. আবদুল গফফার হাওলাদার ঠাণ্ডাজনিত রোগে বৃহস্পতিবার রাতে মারা গেছেন।
শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) :উপজেলায় সরকারি ও বেসরকারিভাবে এখনও শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু না হওয়ায় শীতার্ত মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষক কেন্দ্রের সিনিয়র পর্যবেক্ষণ কর্মকর্তা মো. হারুনুর রশীদ বলেন, শুক্রবার এখানে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শ্রীমঙ্গল এলাকার চা বাগান ও গ্রামাঞ্চলের মানুষেরা খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে।
গোপালগঞ্জ :হাড় কাঁপানো শীতে গোপালগঞ্জের মানুষ জবুথবু হয়ে পড়েছে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। তীব্র শীতে রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা। গ্রাম, বিল ও চর এলাকায় শীতের তীব্রতা আরও বেশি। ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষ শীতবস্ত্রের অভাবে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীতের হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে।
সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) :উপজেলায় হাড় কাঁপানো শীতে ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। গত দু'দিনে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশুসহ যারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন তারা হলেন_ জান্নাতি, শিল্পী, মাহাবুর, শিমেল, আমিনুল, ফুয়াদ হাসান, কপিনাথ, রিফাদ হাসান, মায়েশা, রাকিব, বিপ্লব ও বিপুল। এছাড়া আরও অনেক রোগীকে বিভিন্ন ক্লিনিক ও স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তীব্র ঠাণ্ডায় কর্মজীবী মানুষজন ঘর থেকে বের হতে না পারায় তারা অতিকষ্টে জীবন-যাপন করছেন। দরিদ্র লোকজন শীতবস্ত্রের অভাবে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন, দুই দফা শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। আরও ৫ হাজার শীতবস্ত্রের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। হরতাল-অবরোধের ফলে সেগুলো আসতে বিলম্ব হচ্ছে।
ফুলছড়ি (গাইবান্ধা) :তীব্র শীতে উপজেলার রাস্তাঘাট ও হাটবাজারে লোকজনের সংখ্যা কমে গেছে। শীতে জবুথবু হয়ে পড়েছে কাতলামারী ও রতনপুর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাসিন্দাসহ চরাঞ্চলের লক্ষাধিক দরিদ্র মানুষ। সেই সঙ্গে গৃহপালিত পশুপাখিও রক্ষা পাচ্ছে না শীতের কবল থেকে। রাত ও সকালে বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়ছে। এ কারণে বোরো বীজতলা হলুদবর্ণ ধারণ করছে এবং রবিশস্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
শৈলকূপা (ঝিনাইদহ) :উপজেলায় ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে অনেক শিশু। শৈলকূপা ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত চারদিনে শতাধিক শিশু ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে। একই অবস্থা প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতেও। সাধুখালী গ্রামের কাজলী খাতুন বলেন, তীব্র শীতে তার সন্তান ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। কয়েকদিন ধরে তিনি তার সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে আছেন। এছাড়া বরিয়া গ্রামের সুফিয়া, সোন্দাহ গ্রামের কোহিনুর, ধলহরাচন্দ্র গ্রামের রতন কুমারসহ আরও অনেকেই বলেন, শীতে তাদের শিশু সন্তানরাও ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে কয়েকদিন ধরে শৈলকূপা হাসপাতালে অবস্থান করছে। শৈলকূপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. খন্দকার বাবর বলেন, তীব্র শীতে রোটা ভাইরাসের প্রকোপ বেশি হওয়ায় শিশুরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। তাছাড়া এ শীতে শিশুরা নিউমোনিয়ায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এ সব রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক শিশু হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
সাঘাটা (গাইবান্ধা) :উপজেলায় সকালে ও বিকেলে কুয়াশা পড়ায় শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে বৃদ্ধ ও শিশুরা কোল্ড ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। উপজেলায় হতদরিদ্র লোকজনের মাঝে সরকারিভাবে চাহিদার তুলনায় খুবই কম সংখ্যক শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে।
বরিশাল :বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ঘন কুয়াশার কারণে নৌপথে দুর্ভোগ বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। যাত্রীবাহী নৌযানগুলো গন্তব্যে পেঁৗছাচ্ছে নির্ধারিত সময়ের সাত-আট ঘণ্টা পর। রাত ১০টার পরই কুয়াশায় ঢাকা পড়ে বরিশাল নগরী। নৌপথ অচল হয়ে যায় তারও আগে। ফলে ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটের যাত্রীবাহী লঞ্চগুলোকে মাঝনদীতে সারারাত নোঙর করে রাখতে হচ্ছে। সকাল ৮-৯টার পর কুয়াশার তীব্রতা কমলে লঞ্চগুলো আবার নির্ধারিত গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করছে।
বিআইডবি্লউটিএ বরিশাল অফিস সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা লঞ্চগুলো স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী ভোর ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে বরিশাল ঘাটে এসে পেঁৗছে। কিন্তু শুক্রবার ঘন কুয়াশার কারণে মাঝনদীতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নোঙর করে রাখায় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা লঞ্চগুলো দুপুর ২টার পরে বরিশালে এসে পেঁৗছে। একই অবস্থা বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলোর।
সিরাজগঞ্জ :শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলাজুড়ে রাস্তাঘাট, হাটবাজারে জনসমাগম কমে গেছে। সন্ধ্যা নামলেই শীতের তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পায়। শীতে বেশি অসুবিধায় পড়েছে বৃদ্ধ এবং শিশুরা। তীব্র শীতের কারণে হতদরিদ্র কর্মজীবী মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। শীতের জন্য জেলার পোলট্রি শিল্পে মুরগির মড়কসহ নানা কারণে মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে একাধিক পোলট্রি খামার মালিক জানিয়েছেন। শীত আর কুয়াশায় সবজি আবাদে বিরূপ প্রভাব পড়েছে।

No comments

Powered by Blogger.