'সাম্প্রদায়িক হামলার অন্তত একটি ঘটনার বিচার করুন'

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও নির্যাতনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সরকারের প্রতি এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। সংগঠনগুলো বলেছে, হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ মানবেতর জীবন-যাপন করছে অথচ তাদের পুনর্বাসনের যথাযথ ব্যবস্থা না নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো দায়ভার পরস্পরের ওপর চাপানোর মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের আড়ালের চেষ্টা করছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে সাম্প্রদায়িক হামলার অন্তত একটি ঘটনার যথাযথ বিচার করার দাবি জানানো হয়েছে। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবসহ রাজধানীর কয়েকটি স্থানে বিভিন্ন সংগঠনের মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ, বিবৃতি, সংবাদ সম্মেলনে গভীর উদ্বেগ এবং নিন্দা প্রকাশ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা নির্যাতন দমনে কঠোর পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে দ্রুত বিচার করে দোষীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করারও দাবি জানানো হয়। রাজনৈতিক দলসহ মানবাধিকার, পেশাজীবী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা এসব কর্মসূচিতে অংশ নেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, 'যারা সহিংসতা চালাচ্ছে তারা দেশের শত্রু, জাতির শত্রু। একাত্তর সালে যেমন সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে রাজাকাররা, ঠিক তেমনি এখন রাজাকার ও তাদের দোসররা সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্র করছে।' তিনি বলেন, নবনির্বাচিত সরকারের প্রথম কাজ হবে রাজাকারদের ফাঁসি কার্যকর করে জাতিকে দায়মুক্ত এবং সংখ্যালঘু নির্যাতনকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করা। মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদার, ইত্তেফাকের উপদেষ্টা সম্পাদক হাবিবুর রহমান মিলন, অধ্যাপক ড. লুৎফুর রহমান, অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম ভূঁইয়া, দিনবন্ধু রায়, পলাশকান্তি দে, অধ্যাপক আনন্দ বিশ্বাস প্রমুখ ।
যশোরের অভয়নগর উপজেলার চাঁপাতলা মালোপাড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর বর্বোরোচিত হামলা, অগি্নসংযোগ, ভাংচুর ও লুটপাটের প্রতিবাদে প্রতীকী অনশন ও মানববন্ধন করেছে 'আমরা অভয়নগরবাসী' নামের একটি সংগঠন।
গতকাল জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, মালোপাড়ায় যে নৃশংস হত্যাকা ঘটেছে তা বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী বাংলাদেশ থেকে সংখ্যালঘুদের বিতাড়িত করতে চায়। অথচ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সকলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছে।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ডা. কৃষ্ণপদ সাহা, জাহিদ মিলন, রিপন ফরায়েজী, রাসেল পারভেজ, মেহেদী হাসান, ফারাজী বুলবুল প্রমুখ।
বিভিন্ন সময় নির্বাচন-পরবর্তী সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও সহিংসতা প্রতিরোধে 'পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা' চালুর দাবি জানিয়েছেন জাতীয় হিন্দু মহাজোট সংগঠনের নেতারা। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনে মহাজোট নেতারা বলেন, সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দেশ ত্যাগেও তাদের বাধ্য করা হচ্ছে।
বক্তারা জানান, ইতিমধ্যে সংগঠনের পক্ষ থেকে সারাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মতামত, গণস্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে।
জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামানিকের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের মুখপাত্র পলাশ কান্তি দে, যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক আনন্দ বিশ্বাস, শশাঙ্ক রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক বিপুল কুমার বিশ্বাস প্রমুখ।
সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়িয়ে যারা সংখ্যালঘুদের ওপর ঘৃণ্য হামলা চালায় তাদের রুখে দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ শান্তির দল। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে আবদুল বাতেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন দলের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সৈয়দ আবদুল্লাহ সহীদ, কবি হামিদুল হক হিরো, অধ্যাপক আবদুল হাই, শহীদুল হাসান, আবদুর রশিদ প্রমুখ।
সাম্প্রদায়িক হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সমাবেশ করেছে নাগরিক সংহতি। সমাবেশে বক্তারা বলেন, ধর্মের নামে মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তিই দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান বক্তারা। সংগঠনের সভাপতি ড. এএসএম আতিকুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. আকতারুজ্জামান, মশিহউদ্দিন শাকের, সরদার আমির, সাব্বাহ আলী খান, আনোয়ারুল ইসলাম বাবু, শরিফুজ্জামান শরিফ প্রমুখ।
এছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান, পুনর্বাসন ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনশন কর্মসূচি পালন করেছে সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।

No comments

Powered by Blogger.