সাম্প্রদায়িক হামলা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধের প্রত্যয়

(গণজাগরণ মঞ্চের যশোর অভিমুখে রোডমার্চের পথে শুক্রবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে এক পথসভায় বক্তব্য রাখেন ডা. ইমরান এইচ সরকার) সাম্প্রদায়িক সহিংসতা রুখে দেওয়ার প্রত্যয়ে এবং সাম্প্রতিক হামলায় জড়িতদের দ্রুত বিচার দাবিতে ঢাকা থেকে যশোরের মালোপাড়া অভিমুখে গণজাগরণ মঞ্চের রোডমার্চে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। গতকাল সকালে শাহবাগ থেকে শুরু হওয়া এ রোডমার্চে চলতি পথে বিভিন্ন স্থানে জনসভা ও সমাবেশে শত শত মানুষ উপস্থিত থেকে জাগরণের কর্মীদের স্বাগত জানিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অসংখ্য মানুষ এর সঙ্গে একাত্ম হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সাম্প্রদায়িক হামলা প্রতিরোধের অঙ্গীকার করেছেন। গতকাল সকাল থেকেই শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে জড়ো হতে থাকেন গণজাগরণের কর্মীরা। সকাল ১০টায় শাহবাগ থেকে মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকারের নেতৃত্বে নয়টি বাসে রোডমার্চের যাত্রা শুরু হয়। গতকাল রাতে যশোর শহরে গিয়ে পেঁৗছায়। পথে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি গেট, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও মাগুরার সাত স্থানে পথসভা ও সমাবেশ করেন তারা। যাত্রা শুরুর আগে মুখপাত্র ইমরান সাংবাদিকদের বলেন, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে গণজাগরণ মঞ্চ ও এদেশের জনগণের দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলনের অংশ হিসেবে এ রোডমার্চ হচ্ছে। দেশের যেসব স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে, সেসব জায়গায় কীভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে সংগঠিত করা যায়, মার্চ থেকে ফিরে সে বিষয়ে গণজাগরণ মঞ্চ কাজ করবে বলেও জানান তিনি।
রোডমার্চে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়ে ইমরান বলেন, এর আগেও সাম্প্রদায়িক শক্তি গণজাগরণ মঞ্চের ওপর হামলা চালিয়েছে। মঞ্চের কর্মীরা হামলার তোয়াক্কা করে না। নিরাপত্তা নিয়ে র‌্যাব ও পুলিশকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে। তারা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। জাবি সংবাদদাতা জানান, দুপুর ১২টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে পেঁৗছে। সেখানে সোয়া ১২টার দিকে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। জাবির প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলো রোডমার্চে অংশগ্রহণকারীদের স্বাগত জানান। এরপর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রোডমার্চ নিয়ে তারা মানিকগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হন।
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, রোডমার্চকে স্বাগত জানাতে সকাল থেকেই মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ফলকের সামনে জড়ো হতে থাকে মানিকগঞ্জের গণজাগরণের নেতাকর্মীসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ। দুপুর ২টায় রোডমার্চের গাড়িবহর সেখানে পেঁৗছানোর পর সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে রোডমার্চ পাটুরিয়া ফেরিঘাট হয়ে যশোরের উদ্দেশে রওনা হয়। রাজবাড়ী প্রতিনিধি জানান, বিকেল ৪টার দিকে রোডমার্চের গাড়িবহর নদী পার হয়ে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে এসে পেঁৗছলে জাতীয় পতাকা হাতে এলাকার কয়েকশ' মানুষ রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের শুভেচ্ছা জানান। পরে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ বাজার ও সাড়ে ৫টার দিকে সদর উপজেলার গোয়ালন্দ মোড়ে পথসভা শেষে রোডমার্চ ফরিদপুরের উদ্দেশে রওনা করে। নিজস্ব প্রতিবেদক, ফরিদপুর জানান, সন্ধ্যা ৬টার দিকে ফরিদপুরে পেঁৗছায় গণজাগরণ মঞ্চের রোডমার্চের গাড়িবহর। সেখানে স্থানীয় জনতা ব্যাংকের মোড়ে ফরিদপুর গণজাগরণ মঞ্চের আয়োজনে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। পথসভায় বক্তব্য রাখেন মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার, গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক বাপ্পাদিত্য বসু, শামীমা সুলতানা শাওন, ফরিদপুর গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক অনিমেষ রায় প্রমুখ।
এর আগে বিকেল থেকে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী মঞ্চে দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করে। এ ছাড়া সমাবেশস্থলের পাশেই ইমামউদ্দিন স্কয়ারে মুক্তিযুদ্ধকালীন ও বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন সময়ের আলোকচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
এদিকে মঞ্চের সংগঠকরা রাতে জানিয়েছেন, ফরিদপুর শহরের জনতা ব্যাংক মোড়ের পথসভা শেষে রাতে মধুখালীতে যায় রোডমার্চের গাড়িবহর। সেখানে সংক্ষিপ্ত পথসভা শেষে মাগুরা শহরে পেঁৗছায়। মাগুরা পেঁৗছে খানপাড়া বটতলায় পথসভা শেষে যশোর শহরে পেঁৗছে রাত্রীযাপন করেন জাগরণের কর্মীরা।
আজকের কর্মসূচি :গণজাগরণ মঞ্চের পূর্বঘোষণা অনুযায়ী আজ সকাল ৮টায় যশোর শহর থেকে অভয়নগর উপজেলার সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসকবলিত এলাকা মালোপাড়ার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবে রোডমার্চ। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত মালোপাড়া এলাকার আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন, আক্রান্তদের সঙ্গে মতবিনিময় ও সহমর্মিতা জ্ঞাপন, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস রোধে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে স্থানীয় জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধকরণ, দুর্গত মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ শেষে বিকেল ৩টায় যশোর চিত্রামোড়ে জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এ জনসমাবেশ শেষে রাতে ঢাকার উদ্দেশে রওনা করবে গণজাগরণ মঞ্চের রোডমার্চের গাড়িবহর।

No comments

Powered by Blogger.