শিশুর কান্নায় দাঙ্গার প্রতিকার by নাদিম মজিদ

শিশুর সঙ্গে অভিভাবকের দ্বন্দ্ব, নারীকে হয়রানি, সন্ত্রাস, সাইবার আক্রমণ, বড় বড় যুদ্ধকে বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যায় মানুষ অনেকদূর এগিয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি শিশুর কান্নার প্রক্রিয়ার সঙ্গে দাঙ্গা, রাজনৈতিক সংকট, এমনকি লুটেরাদের গভীর সাদৃশ্য রয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছেন। এগুলোকে ব্যাখ্যা ও প্রতিরোধ, প্রতিকারের জন্য গবেষকরা বিজ্ঞানের বলবিদ্যার উদ্গতিবিদ্যা শাখাকে কাজে লাগিয়েছেন। এর সাহায্যে বের করা সূত্রগুলোকে পাওয়ার বা শক্তিনীতি বলে অভিহিত করেছেন তারা বিজ্ঞানীরা মানুষের নানা ক্ষেত্রে সংগ্রামগুলোকে ব্যাখ্যায় বিভিন্ন তত্ত্ব দাড় করিয়েছেন। বর্তমানে এ সম্পর্কিত বিচ্ছিন্ন সব তত্ত্বগুলোকে সমন্বয় সাধনের ব্যাপারে সাফল্য অর্জন করেছেন। এটা করতে গিয়ে তারা প্রায় ১ লাখ ঘটনাকে হিসেবের মধ্যে এনেছেন। এ কাজ সম্পন্ন করার সময় তারা মানুষের নির্দয়তা এবং বোঝাপড়ার বিষয়টিকে গাণিতিক মডেলের মধ্যে এনেছেন। বোঝাপড়ার সময় মানুষ ব্যক্তিগত এবং সামাজিকভাবে কী ভাবছে তার দিকেও বিশেষ নজর রেখেছেন।
গবেষকরা শিশুর কান্নাকে উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। একটি শিশু পিতা-মাতার বিরুদ্ধে তার কান্নাকে ধাপে-ধাপে বৃদ্ধি করে। তারা এ কান্নাকে পোল্যান্ডের দাঙ্গার সঙ্গে তুলনা করেছেন। আশির দশকে পোল্যান্ডে সংঘটিত হওয়া দাঙ্গা ধীরে-ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং তা তৎকালীন শক্তিধর রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার ক্ষেত্রে নিয়ামক ভূমিকা পালন করে। শিশু এবং দাঙ্গাকারী উভয় ক্ষেত্রে তারা অতিদ্রুত এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশাল শক্তির বিরুদ্ধে তাদের আক্রমণ বৃদ্ধি করে। কিন্তু দেখা যায়, এ আক্রমণ প্রতিরোধে পিতা-মাতা বা সরকারের যে ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন হয়, তারা তা করে না। অথবা তারা প্রতিহত করতে অসমর্থ হয় অথবা অনিচ্ছুক থাকে।
এ গবেষণাকাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন মিয়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নেইল জনসন। তিনি তাদের কাজের প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলেন, "আমরা নির্দিষ্ট সংখ্যক শিশু এবং তাদের বাবা-মাকে গবেষণা কাজের জন্য বাছাই করে নিয়েছিলাম। যখন শিশুরা তাদের কান্না ধাপে-ধাপে বৃদ্ধি করে অথবা কমায় তখন তাদের বাবা-মায়ের করা প্রতিক্রিয়া নিয়ে আমরা গবেষণা করেছি। বিষয়টিকে ভালোভাবে বোঝার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সাইবার কাঠামোর ওপর সাইবার আক্রমণের কথা আমরা বিবেচনা করতে পারি। যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে তাদের ওপর হওয়া সাইবার আক্রমণ বন্ধ করে, এর সঙ্গে শিশুর বাবা-মায়ের আচরণ ব্যাখ্যা দেওয়া যেতে পারে। অথবা মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সিরিয়ার দিকে তাকাতে পারি। সেখানে 'আরব বসন্ত' শুরু হলে সরকারের বিরুদ্ধে প্রবল বিক্ষোভ শুরু হয়। সরকার দমন-পীড়ন চালিয়ে কীভাবে নিঃশেষ করে দিচ্ছে তাও উদাহরণের অংশ হতে পারে।"
ুতাদের গবেষণায় আপাতদৃষ্টিতে বিচ্ছিন্ন কয়েকটি বিষয়ের মাঝে দারুণ মিল পাওয়া গেছে। যেমন কলম্বিয়ার গেরিলারা এক সময় ম্যাগডেলেনাকে হিংস্র আক্রমণের মাধ্যমে গোটা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল। সত্যিকার অর্থে এ ঘটনা আধুনিক বিশ্বের সব যুদ্ধকে প্রতিনিধিত্ব করে। ইতিমধ্যে আফ্রিকার সিয়েরা লিওনের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। সেখানেও একই গতিবিদ্যা ব্যবহৃত হয়েছে। আবার যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ইলেকট্রিক স্টক কোম্পানি লুটকারী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তুলনা করা চলে যুক্তরাষ্ট্রের হাইটেক ইলেকট্রনিক্স সেক্টরে বিদেশি বিভিন্ন দলের সাইবার আক্রমণের, যা শিশুর সঙ্গে করা বাবা-মায়ের কাজের অনুকরণ।
তাদের গবেষণায় উদাহরণ হিসেবে এসেছে বিতর্কিত 'রক্তাক্ত রোববার'-এর কথা। ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি ব্রিটিশ নিরাপত্তা বাহিনী উত্তর আয়ারল্যান্ডের সাধারণ বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন অভিযান চালিয়েছিল। উত্তর আয়ারল্যান্ডের স্বাধীনতাকামী গেরিলা দল আইরিশ রিপাবলিকান আর্মির আক্রমণ ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়ে চরম আকার ধারণ করলে তা দমনের জন্য সেখানকার জনসাধারণের বিক্ষোভের ওপর অভিযান চালায় ব্রিটিশ নিরাপত্তা বাহিনী। তখন কৌশলগত গুরুত্বের নতুন প্রশ্ন ওঠে এসেছিল। সে ঘটনাও গণিতের সূত্র তৈরির সময় বিবেচনা করা হয়েছিল।
উপরের তিনটি ঘটনার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে তাদের এক লাখ ঘটনা বিশ্লেষণের ফলাফল। ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটলে তার সর্বশেষ পরিণতি কী হতে পারে তার পূর্বাভাস রয়েছে এসব ঘটনায়। আবার এসব ঘটনার সম্মুখীন হলে তা কীভাবে প্রতিরোধ এবং প্রতিহত করা যাবে, গণিতের সূত্রগুলোর সাহায্যে সে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। অপরাধীর সঙ্গে মধ্যস্থতা করা হবে, নাকি অপরাধীর সমস্ত সামর্থ্যকে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য এসব ঘটনা কৌশলগতভাবে কাজে লাগবে। বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার করা সূত্রে পৃথকভাবে মানুষ আক্রমণ বা আগ্রাসন চালালে যেমন ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, আবার দলবদ্ধভাবে আক্রমণ বা আগ্রাসন চালালে কী কী করণীয় থাকতে পারে, তারও ব্যাখ্যা রয়েছে। মানুষের অপরাধমূলক প্রবৃত্তি যেমন বাস্তব পৃথিবীতে চলে, পাশাপাশি চলে অনলাইন জগতে। তাদের এ গবেষণাকর্ম প্রকাশিত হয়েছে বৈজ্ঞানিক জার্নাল নেচারে।
সূত্র : নেচার , সায়েন্স ডেইলি

No comments

Powered by Blogger.