বিশেষ রচনা ভূতের সঙ্গেই উঠবোস! by রাজীব হাসান

না, লাভ নেই। সে বিকটদর্শন স্কন্ধকাটা হোক, ইয়া বড় নখঅলা শাকচুন্নি, নাদুস-নুদুস মামদো কিংবা হোক চুনোপুঁটি টাইপের দু-একটা গেছো ভূত। জ্যাডন আর লুসিকে আর যা-ই হোক না কেন, ভূতের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।
আর দশটা বাচ্চাকে শাসন করার জন্য, তাড়াতাড়ি ঘুম পাড়িয়ে দিতে যেখানে ভূতের ভয় শতাব্দী কাল থেকেই অব্যর্থ মহৌষধ হিসেবে প্রমাণিত; এই দুই শিশুর জন্য সেটা একেবারেই মরচে ধরা, অকেজো। ভূতকে ভয় পাবে কি, ভূতদের সঙ্গে এদের নিত্য ওঠাবসা। ভূতের সঙ্গেই আড্ডা-দোস্তি। ভূত নিয়েই তাদের রাজ্যের কাজকারবার!
ইংল্যান্ডের চেশায়ারের এই দুই শিশুর সঙ্গে কমপক্ষে ১০টি আত্মার নিয়মিত যোগাযোগ আছে বলে দাবি তাঁদের মা প্যাম বিলিংটনের। এই আত্মাগুলোর মধ্যে তাদের দাদিও আছেন। আত্মাগুলোর সঙ্গে নিয়মিত কথাবার্তা হয় তাদের। ব্যাপারটা চমকে দেওয়ার মতোই। আর তাই ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড মিরর বিলিংটন পরিবারকে নিয়ে সচিত্র সুবিশাল এক স্টোরি করেছে। ট্যাবলয়েড পত্রিকায় কত কিছুই না ছাপা হয়!
১০ বছর বয়সী জ্যাডনের সঙ্গে পরিচয় আছে এক আমেরিকান ভূত দম্পতি স্যাম ও সাইমন ক্রিজের। এ ছাড়া মাইকেল নামের এক ‘অ্যাঞ্জেল’ নিয়মিত দেখা দেয় তাকে। আট বছর বয়সী লুসির সঙ্গে দোস্তি আছে রোজ নামের এক অল্পবয়সী ভূতের। ‘অল্পবয়সী’ মানে ঠিক কত বছর, বলা যাচ্ছে না। দেখা গেল, রোজের বয়সও তিন হাজার ৯৫০!
পুরোদস্তুর গৃহিণী প্যাম দাবি করেছেন, তাঁর দুই সন্তান এমনভাবে এই আত্মাগুলোর সঙ্গে কথা বলে, আত্মাগুলোর সঙ্গে এতটাই সুসম্পর্ক, যেন সেই অশরীরীরা তাদের পরিবারেরই কেউ! ‘সবকিছুই শুরু হয়েছিল কয়েক বছর আগে, যখন জ্যাডন আমাকে বলল, আগের রাতে একটা অ্যাঞ্জেল নাকি ওর সঙ্গে দেখা করে গেছে। আমি ভাবলাম, এ হয়তো শিশুমনের উদ্ভট সব কল্পনা। কিন্তু লুসিও যখন বলতে শুরু করল, আমি ব্যাপারটায় মনোযোগী হলাম’—মিররকে বলেছেন প্যাম।
অস্বাভাবিক এই ব্যাপারগুলো ঘটতে শুরু করেছিল ২০১১ সালে, বিলিংটন পরিবার তখন থাকত ম্যানচেস্টারে। জ্যাডন আর লুসি তখন বলতে শুরু করে, কয়েকটি ভূতও নাকি তাদের বাসায় বসবাস করছে। এমনকি চিলেকোঠাতেও আছে কয়েকটি ভূত। ঠিক ভূতের সঙ্গে সখ্য নেই, তবে বাড়ির বড় মেয়ে, ১৪ বছর বয়সী এমিলিকে নাকি এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার ভূতেরা তাদের অস্তিত্বের জানান দিয়েছে।
তাই এমিলিও ভাবত, ছোট দুই ভাইবোনের কল্পনা এসব। একদিন সে বলে বসেছিল, ‘আচ্ছা, তোদের সঙ্গে যদি ভূতদের এতটাই ভালো সম্পর্ক, ওদের কাউকে আমার পাজামা ধরে টান মারতে বল তো।’ বলা মাত্রই নাকি সত্যি সত্যি টান পড়েছিল তার পাজামায়। ‘এটা সত্যিই অবিশ্বাস্য। এখন ওরা আমাকে প্রায় সময়ই স্পর্শ করে। আমার হাতে খোঁচা দেয়, আমার পা ছুঁয়ে দেয়। একটা ভূত তো আমার চোখেও গুঁতো দিয়েছে’—নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলছিল এমিলি।
ভাইবোনদের মধ্যে কেবল সে-ই ভূতদের দেখে না। এ নিয়ে অবশ্য কোনো ‘আফসোস’ এমিলির নেই, ‘ভালোই হয়েছে, ওদের আমি দেখতে পাই না। দেখতে পেলে হয়তো ভয়েই মরে যেতাম!’
প্যাম নিজেকে বিজ্ঞানমনস্ক বলে দাবি করেছেন। ফলে তাঁর তরফে বাচ্চাদের ভাবনায় ভূতদের অস্তিত্ব এঁকে দেওয়া হয়নি। ভূত নেই বলেই বিশ্বাস করতেন তিনি। অতিপ্রাকৃতিক কোনো শক্তিতেও বিশ্বাস ছিল না তাঁর। কিন্তু চোখের সামনে এসব দেখার পর আগের ধারণায় আর অটল থাকেন কী করে! অবশ্য বাড়ির কর্তা ড্যারন এখনো সংশয়ে আছেন দুই সন্তান সত্যি সত্যিই ‘বিশেষ ক্ষমতা’র অধিকারী কি না, এ নিয়ে।
আপনি ড্যারনের পক্ষে যাবেন নাকি প্যামের—সেটা আপনার বিষয়। তবে এখন থেকে কোনো বাচ্চাকে ভূতের ভয় দেখানোর আগে ভালো করে জেনে নেবেন কোনো দেও-দানোর সঙ্গে দোস্তি তার আছে কিনা। কে জানে, ‘বন্ধু’কে মিছেমিছি ভয় দেখানোর শাস্তি হিসেবে রাতের বেলা হয়তো আপনার শিয়রে হাজির হয়ে যেতে পারে স্যাম, সাইমন, রোজদের মতোই কেউ!
সূত্র: মিরর

No comments

Powered by Blogger.