পরিবর্তন আসছে আ. লীগে ঈদের পর বিশেষ কাউন্সিল by পাভেল হায়দার চৌধুরী

ঈদুল ফিতরের পর ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের বিশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। দল গোছানোর অংশ হিসেবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কাউন্সিলে দলে কিছু পরিবর্তন আসবে।
এ পরিবর্তনের সঙ্গে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত তৃণমূলকে সুসংগঠিত করার জন্য বড় কর্মপরিকল্পনাও থাকবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করতে বিশেষ কাউন্সিল এবং তৃণমূল সংগঠিত করার এ ইস্যু ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে বলে জানা গেছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিশেষ কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদে ব্যাপক পরিবর্তন আসতে পারে। দায়িত্বে আসতে পারেন অনেক পুরনো এবং এত দিন ধরে অনেকাংশে উপেক্ষিত ও বাদ পড়া নেতারাও। নীতিনির্ধারক পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা বিশেষ কাউন্সিলে এসব পরিবর্তনের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন।
জানতে চাইলে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ গতকাল শুক্রবার কালের কণ্ঠকে বলেন, তৃণমূলে এই মুহূর্তে বিশেষ কিছু করার নেই। তবে দলে বেশ কিছু পরিবর্তন আসবে শিগগিরই। তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। মূল দলে পরিবর্তনের পরে তৃণমূল পর্যায়েও হাত দেওয়া হবে। তিনি বলেন, যেসব জেলায় সম্মেলন বাকি রয়েছে, তা করা হবে।
কেন্দ্রীয় একটি কর্মপরিকল্পনা নিয়ে তৃণমূলে কাজ করা হবে।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বিদেশ সফর শেষে দেশে ফিরে এলে অনেক নেতাই দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দলের সাংগঠনিক দুর্বল অবস্থার জন্য তাঁকে দায়ী করেন। এর আগেও সৈয়দ আশরাফের বিরুদ্ধে দলে একটি শক্ত বিরোধী পক্ষকে সোচ্চার হতে দেখা গেছে। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা বিষয়টি এত দিন তেমন গুরুত্বের সঙ্গে না নিলেও গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ফল বিপর্যয়ের পর তিনি সার্বিক পরিস্থিতি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করতে শুরু করেছেন। সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব ও দক্ষতা নিয়েও ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সাংগঠনিক সম্পাদকদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
জানা গেছে, গাজীপুর নির্বাচনে ফল বিপর্যয়ের পর সাংগঠনিক দুর্বল অবস্থার কথা শেখ হাসিনার সামনে সবিস্তারে তুলে ধরেন দলের সিনিয়র বেশ কয়েকজন নেতা। দুই দিন ধরে গণভবনে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা যাতায়াত করেন। একেকজন একেক রকমভাবে তাঁদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনার কাছে। তাঁরা দাবি করেন, গাজীপুরের মতোই সারা দেশে দলের মধ্যে অনৈক্য, দ্বন্দ্ব-কোন্দল বিরাজ করছে। নির্বাচনের আগে দলকে সুসংগঠিত করা না গেলে আগামী নির্বাচনেও ফল বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী। তাই প্রয়োজনে বিশেষ কাউন্সিল করা জরুরি। দলের সাধারণ সম্পাদককেও সরিয়ে দেওয়া প্রয়োজন বলে শেখ হাসিনার কাছে প্রস্তাব করেন দলের বেশ কয়েকজন নেতা। এদিকে সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য কালের কণ্ঠকে জানান, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এমন একজন নেতা অকারণেই বিভিন্ন নেতার কাছে বলতে শুরু করেছেন, 'আমি সাধারণ সম্পাদক হতে চাই না।'
সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য দলে পরিবর্তনের সম্ভাবনার বিষয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'অনেক নক্ষত্রের পতন হতে পারে। আবার অনেকের ভাগ্য খুলতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা, দলীয় সভাপতি কোন টিম নিয়ে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন, তা তিনিই ভালো জানেন।'
অন্য একটি দলীয় সূত্র জানায়, বিশেষ কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে সরকারের মন্ত্রী নন, কিন্তু নেতা হিসেবে যোগ্য এমন একজনকে দল গোছানোর জন্য বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। গত বৃহস্পতিবার এক বৈঠকে শেখ হাসিনা সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও বীর বাহাদুরের প্রশংসা করার পাশাপাশি মন্তব্য করেন, অন্য সাংগঠনিক সম্পাদকরা দায়িত্বে অবহেলা করেছেন। জানা গেছে, শেখ হাসিনা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ব্যাপারেও সন্তুষ্ট নন। আশরাফের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন নেতাও কালের কণ্ঠের কাছে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন এমন একজন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যের নেতৃত্বে দলের কয়েকজন নেতা আশরাফের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন ইতিমধ্যে। তাঁরা আশরাফের দায়িত্বে অবহেলাসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেন শেখ হাসিনার কাছে।
ওবায়দুল কাদেরকে প্রধানমন্ত্রীর র্ভৎসনা : এদিকে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী গত বৃহস্পতিবার যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে র্ভৎসনা করেছেন। গাজীপুরে ফল বিপর্যয়ের পরের দিন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, জনগণ আস্থা হারালে শুধু গাজীপুর নয়, যেকোনো দুর্গে হারতে হবে। এ বক্তব্যের জন্য বৃহস্পতিবার গণভবনে তাঁকে র্ভৎসনা করে শেখ হাসিনা বলেন, 'তুমি মিডিয়ায় কথা বলতে পছন্দ করো ভালো কথা, কিন্তু বুঝেশুনে কথা বলতে হবে। কথা বলার সময় খেয়াল রাখতে হবে বিরোধী শক্তিরা যেন সুযোগ না পেয়ে বসে।'

No comments

Powered by Blogger.