উত্তরাঞ্চলে বন্যা-মানুষের পাশে দাঁড়ান

উত্তরাঞ্চলের চারটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। কয়েক লাখ মানুষ দুর্ভোগের শিকার হয়েছে। বহু বাড়ি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে পানি বৃদ্ধির কারণে। এর চেয়েও বড় ক্ষতি হচ্ছে নদীতীরের বাড়িঘর ও স্থাপনাগুলোর।
ভাঙনের কারণে বহু বাড়িঘর নদীর বুকে তলিয়ে গেছে। আরো বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। বাড়িছাড়া মানুষগুলোর ফসলের জমিও মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে। হাজার হাজার হেক্টর জমিতে আমন রোপণ করা হয়েছে কিছুদিন আগে মাত্র। এখনো অল্প কিছু জায়গায় রোপণের কাজ চলছে। এমন সময় বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা পানির তোড় সইতে পারছে না ফসলের জমি। ফলে এই মুহূর্তে যে ক্ষতি হয়েছে, ভবিষ্যতেও তার রেশ থেকে যাবে।
কালের কণ্ঠসহ সহযোগী দৈনিকগুলোতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ১৪ সেন্টিমিটার বেড়েছে। জেলার নিম্নাঞ্চলের ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। দিনাজপুরের নিম্নাঞ্চলের ৬৫টি গ্রামে বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গাইবান্ধায় তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
এ বছরের বন্যা এখনো ভয়াবহ রূপ ধারণ করেনি। এর পরও বন্যা ক্ষতি করেছে ব্যাপক। শুধু দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার একটি এলাকায় টেপা নদীর বাঁধ ভেঙে তিন শতাধিক বাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। মৌসুমের রীতি অনুযায়ী, এ ধরনের বন্যা অনেকটাই স্বাভাবিক। এর পরও এই স্বাভাবিক বন্যায়ও এমন অস্বাভাবিক ক্ষতি হবে কেন? বন্যা নিয়ন্ত্রণে বিজ্ঞানসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ না করা, নদী শাসনে অবহেলা, বন্যা নিয়ন্ত্রণে তৈরি বাঁধগুলো মেরামত না করার মতো কিছু কারণ বন্যার ভয়াবহতা বাড়িয়ে দেয়। তাই প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে স্বাভাবিক বন্যার ধকলও সইতে পারে না নদীগুলো।
এই বন্যার জন্য উপদ্রুত এলাকার মানুষের প্রস্তুতি ছিল না। ফলে মানুষকে নিজেদের মতো করে আশ্রয় নিতে হয়ে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসন বন্যা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকলেও বন্যা উপদ্রুত মানুষের কাছে এখনো কোনো ত্রাণ পৌঁছেনি। এদিকে নজর দিতে হবে। দুর্গত মানুষের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি বন্যা-পরবর্তী পুনর্বাসনের জন্য এখনই পরিকল্পনা করতে হবে। আমরা আশা করব, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মহল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

No comments

Powered by Blogger.