জাতিসংঘে মালালার ভাষণ-বই আর কলমই পারে পৃথিবীকে বদলে দিতে

একটি শিশু, একজন শিক্ষক, একটি কলম, আর একটি বই গোটা বিশ্বকে বদলে দিতে পারে বলে মন্তব্য করেছে পাকিস্তানের নারীশিক্ষা আন্দোলনের কর্মী মালালা ইউসুফজাই। সে বলেছে, 'তালেবান বই ও কলমকে ভয় পায়।
তারা আমাকে স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। বরং ওই হামলা আমাকে আরো দৃঢ়সংকল্প করেছে।' যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে গতকাল শুক্রবার মালালা এ কথা বলে। প্রতিটি শিশুর জন্য শিক্ষা অবাধ ও বাধ্যতামূলক করার প্রচারাভিযানের অংশ হিসেবে মালালা জাতিসংঘ দপ্তরে নিজের ১৬তম জন্মদিনে এ ভাষণ দেয়। গত অক্টোবরে পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকায় তালেবান হামলার শিকার হওয়ার পর জাতিসংঘে এটিই তার প্রথম ভাষণ। জাতিসংঘের 'বিশ্বব্যাপী শিক্ষা'-বিষয়ক দূত গর্ডন ব্রাউন আয়োজিত ভাষণ অনুষ্ঠানের এ দিনটিকে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে 'মালালা দিবস' হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ২০১৫ সালের মধ্যে বিশ্বের সব বালক-বালিকাকে স্কুলের গণ্ডিতে পৌঁছানো সম্ভব হবে বলে অনুষ্ঠানে আশা প্রকাশ করেছেন ব্রাউন।
মালালা তার ভাষণে জানায়, তালেবান তার ওপর হামলা চালিয়ে তার জীবনের সামান্যতমও পরিবর্তন করতে পারেনি, বরং এ হামলা তার ভেতর থেকে 'দুর্বলতা, ভয় ও আশাহীনতার' মতো নেতিবাচক জিনিসগুলোর মৃত্যু ঘটিয়েছে। সে বলে, 'চরমপন্থীরা ছিল, তারা আছে, থাকবে। কিন্তু তারা বই ও কলমকে ভয় পায়। ভয় পায় নারীদেরও।'
গোলাপি পোশাক ও স্কার্ফ পরা মালালা জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনসহ গোটা বিশ্ব থেকে আসা এক হাজার শিক্ষার্থীর উদ্দেশে ভাষণে বলে, জীবনকে উন্নত করার একমাত্র পথ হচ্ছে শিক্ষা।
প্রতিটি শিশুর স্কুলে যাওয়া নিশ্চিত করতে বিশ্বের সব রাজনীতিবিদকে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানায় মালালা। বিশ্ব নেতাদের শান্তি প্রতিষ্ঠায় কৌশল পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে মালালা বলে, সে নারীর পক্ষে লড়াই করছে। কারণ সমাজে নারীরাই সবচেয়ে অবহেলা ও নির্যাতনের শিকার। সে বলেন, 'আসুন, আমরা খাতা-কলম হাতে তুলে নিই। এগুলোই আমাদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র। সবার আগে শিক্ষা; শিক্ষাই সমস্যার একমাত্র সমাধান।'
উপস্থিত কিশোর-কিশোরীদের বিশ্বের নতুন এক সুপারপাওয়ার (পরাশক্তি) আখ্যা দিয়ে মালালা আগামী দিনে শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সব বাধা অতিক্রম করে যাওয়ার জন্য সাহায্যের হাত বাড়ানোর আহ্বান জানায়। মালালা বলে, সমস্যার সমাধানে শিক্ষার চেয়ে ভালো বিকল্প আর কেউ দেখাতে পারবে না।
জাতিসংঘ মাহসচিব বান কি মুনও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। তিনি মালালাকে 'আমাদের নায়ক', 'আমাদের সেরা' আখ্যা দিয়ে বলেন, 'সে যুবসমাজের জন্য বিনিয়োগ ও শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে আমাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষার বিষয়ে আমাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। বিশ্বব্যাপী নারীশিক্ষার বিষয়টি সবার নজরে আনতে তার অবদান অনেক।'
অনুষ্ঠানে উপস্থিতদের কাছে সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করতে ৩০ লাখ স্বাক্ষর সংগ্রহের আবেদন জানিয়েছে মালালা ফাউন্ডেশন। ওই গণস্বাক্ষর দাবি আদায়ের জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
গত বছর ৯ অক্টোবর সোয়াতের মিংগোরা শহরে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে মালালাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় তালেবান জঙ্গিরা। ওই রাতেই পেশোয়ার সিএমএইচে অস্ত্রোপচার করে গুলি বের করা হয়। পরে তাকে রাওয়ালপিন্ডিতে স্থানান্তর করা হয়। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য ব্রিটেনের কুইন এলিজাবেথ হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। সুস্থ হওয়ার পর নিরাপত্তাজনিত কারণে সপরিবারে ব্রিটেনেই থাকার ব্যবস্থা করা হয় মালালার। সেখানেই একটি স্কুলে পড়াশোনা করছে সে। যুক্তরাষ্ট্রের টাইম সাময়িকীর ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায়ও স্থান করে নেয় মালালা। চলতি বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্যও সে মনোনয়ন পায়। সূত্র : বিবিসি ও রয়টার্স।

No comments

Powered by Blogger.