আটক-আতঙ্কে বিক্ষোভকারীরা-কোটা বাতিল না সংস্কার?

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে দুটি মামলা দায়ের এবং কয়েকজনকে আটকের পর বিসিএসে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের মধ্যে গ্রেপ্তার-আতঙ্ক বিরাজ করছে।
অন্যদিকে যাঁরা সব কোটা বাতিলের দাবি করছেন, তাঁরা কোনো এক 'রাজনৈতিক চক্রান্তে তাড়িত' বলেও আন্দোলনকারীদের মধ্যে গুঞ্জনের সৃষ্টি হয়েছে। সব কোটা বাতিল নয়, বরং কোটা পদ্ধতির সংস্কার চায় আন্দোলনকারীদেরই একটি বড় অংশ।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে শাহবাগে জড়ো হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে বিক্ষোভকারীদের দেখা যায়নি। তবে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কয়েকজনের একটি জটলা জাদুঘরের সামনে দেখতে পাওয়া যায়।
কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী সন্দেহে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে শাহবাগ থানার পুলিশ। জাতীয় জাদুঘর ও পাবলিক লাইব্রেরির সামনে থেকে, দুপুরের দিকে বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা থেকে তাঁদের আটক করা হয়েছে বলে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শাহবাগ থানার তদন্ত কর্মকর্তা এম এ জলিল কালের কণ্ঠকে জানান।
অন্যদিকে পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া এবং ভাঙচুরের ঘটনার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে আরেকটি মামলা দায়ের করেছে। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ শিক্ষার্থীসহ অজ্ঞাতনামা এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। ওই শিক্ষার্থীরা হলেন এসএম হলের হাফিজুর রহমান ও জোনায়েদ; বঙ্গবন্ধু হলের মির্জা তোহিনুল হক, সিকদার দিদারুল হক, মতিউর রহমান ও জহিরুল ইসলাম; জিয়া হলের নুরুল হুদা; মুহসীন হলের মো. রায়হান কাওসার এবং জহুরুল হক হলের আরিফ হোসেন। পুলিশের পক্ষে মামলাটি করেন উপপরিদর্শক আবদুল রউফ। এই ৯ জনকে বৃহস্পতিবারই ক্যাম্পাস থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান শাহবাগ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম।
তদন্ত কর্মকর্তা এম এ জলিল সাংবাদিকদের বলেন, গত বুধবার পুলিশ-ব্যারিকেড দেওয়া হয়। কিন্তু ছাত্ররা ব্যারিকেড ভেঙে রাস্তা অবরোধ করে। পরের দিন আবার রাস্তা অবরোধ করতে গেলে বাধা দেওয়া হয়। তখন পুলিশের গাড়িতে আগুন, মিডিয়ার গাড়ি ভাঙচুর, উপাচার্যের বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুর করার কারণে এ মামলাটি করা হয়েছে। তিনি বলেন, 'আটকদের ব্যাপারে তদন্ত করা হবে। কারো বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
৩৪তম বিসিএস পরীক্ষার ফল পুনর্মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত আসার পর সব ধরনের কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারীদের অনেকেই বলছেন, বাতিল নয়, কোটার শতকরা হার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমিয়ে আনতে হবে। পিএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলেও পরীক্ষার্থী কত নম্বর পেলেন তা প্রকাশ করা হয় না। এতে দুর্নীতির সুযোগ থাকে ব্যাপক হারে। কাজেই ফল প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে অর্জিত নম্বর প্রকাশেরও দাবি তুলেছেন বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা।
৩৪তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা মাস্টার্সের শিক্ষার্থী তানিয়া মুন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, সব কোটা কোনোভাবেই উঠিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। তবে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সংস্কার আনা যেতে পারে। তিনি বলেন, 'বিসিএস পরীক্ষায় যে ফল দেওয়া হয় তাতে স্বচ্ছতা থাকে না। কারণ সেখানে কে কত নম্বর পেল এটা জানার কোনো সুযোগ নেই। নম্বর কত পেলাম সেটা না জানায় একটা ধোঁয়াশা তৈরি হয়।' তাই ফলের সঙ্গে নম্বরও প্রকাশ করার দাবি জানান তিনি।
বিসিএসে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০, প্রত্যন্ত জেলার জন্য ১০, আদিবাসীদের জন্য ৫ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ কোটা রাখা হয়েছে।
কোটাবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পরীক্ষার্থী বলেন, 'গ্রেপ্তার-আতঙ্কে আছি। রাস্তায় নামলে পুলিশ সন্দেহের বশে অনেককে গ্রেপ্তার করছে।'
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. ফরিদউদ্দিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'কোটা পদ্ধতি উল্লেখযোগ্য হারে কমানো উচিত। তবে সব কোটা তুলে দেওয়া যাবে না। আবার মেধারীরা যাতে বঞ্চিত না হয়, সে ব্যাপারেও সজাগ থাকতে হবে। পরীক্ষিত মেধাবীদের জন্য কমপক্ষে ৭৫ শতাংশ জায়গা রাখা উচিত।'
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক কালের কণ্ঠকে বলেন, কোনো একটা পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কোটা ব্যবস্থা চালু আছে। এটা সব সময় ছিল। পিএসসির প্রিলিমিনারিতে যে কোটা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে, তা চূড়ান্ত পর্যায়েও ব্যবহার করা উচিত।

No comments

Powered by Blogger.