শ্রম আইন শ্রমিকবান্ধব করতে আন্দোলনের বিকল্প নেই

বর্তমানে সংসদে শ্রম আইনের যে সংশোধনী পেশ করা হয়েছে, তা পুরোপুরি শ্রমিক স্বার্থের পরিপন্থী। প্রস্তাবিত শ্রম আইন পাস হলে এতদিন শ্রমিকের যে অধিকার ছিল, তাও খর্ব হবে। শ্রম আইন শ্রমিক স্বার্থের পক্ষে নিয়ে আসতে হলে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
একই সঙ্গে ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে বড় দুই দলের লেজুড়বৃত্তি না করে শ্রমিকদের স্বার্থ দেখতে হবে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ‘শ্রমিক স্বার্থ: বাংলাদেশের শ্রম আইন’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তাদের আলোচনার মূল সুর এটি। ছয়টি জাতীয় শ্রমিক সংগঠনের সহায়তায় এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে বিশ্ব ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন (ডব্লিউএফটিইউ) বাংলাদেশ কমিটি।
শ্রম আইনের সংশোধনী প্রসঙ্গে শ্রমিক নেতৃত্বকে আন্দোলনে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিচারপতি সৈয়দ আমীরুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক নেতৃত্ব এখন আর কষ্ট স্বীকার করে না। ব্যক্তিগত লাভের আশায় যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, সেই দলের শ্রমিক সংগঠনের হয়ে কাজ করে। শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে হলে দলীয়করণের এই বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সুখের পায়রা হয়ে ট্রেড ইউনিয়ন করা যাবে না।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আমাদের সংসদ মালিকপক্ষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এই সংসদ শ্রমিক স্বার্থের পক্ষে কিছু করবে, সেটা আশা না করাই ভালো। শ্রমিকদের দাবি আদায় করতে হলে শ্রমিক আন্দোলনকে মাঠেই নামতে হবে। সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করতে হবে।’
শ্রম আইনের সংশোধন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখন আইনটি সংশোধনের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা বিদেশিদের চাপে পড়ে। আমাদের দুর্ভাগ্য যে এখানকার শ্রমিক আন্দোলনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে এই সংশোধনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হলো না।’
গোলটেবিল বৈঠকে মূল বক্তব্য পড়েন বিশ্ব ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন (ডব্লিউএফটিইউ) বাংলাদেশ কমিটির আহ্বায়ক ওয়াজেদুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, বর্তমানে সংসদে শ্রম আইনের যে সংশোধনী পেশ করা হয়েছে, তা পুরোপুরি শ্রমিক স্বার্থের পরিপন্থী। এ আইনে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন এবং অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন ও পছন্দমতো নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে যে প্রতিবন্ধকতা রাখা হয়েছে, তা দূর করার আহ্বান জানান তিনি। আইনটির সংশোধনীর জন্য ১০ দফা দাবি তুলে ধরেন তিনি।
ওয়াজেদুল ইসলাম নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি চার মাসের পরিবর্তে ছয় মাস করার দাবি জানান।
প্রস্তাবিত শ্রম আইন পাস হলে এতদিন শ্রমিকদের যে অধিকার ছিল, তাও খর্ব হবে বলে মন্তব্য করেন সলিডারিটি সেন্টারের জ্যেষ্ঠ আইন পরামর্শক এ কে এম নাসিম।
বৈঠকে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) সহকারী নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, নিরাপত্তা, ক্ষতিপূরণ এবং শ্রমিকের কথা বলার স্বাধীনতা যাতে নিশ্চিত হয়, সেটা খেয়াল রাখতে হবে।
গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ লিগাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) সাম্মানিক নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন। তিনি বলেন, ২০০৬ সালে যে শ্রম আইন হয়েছিল, শ্রমিক সংগঠনগুলো সঠিকভাবে সেই শ্রম আইনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারেনি।

No comments

Powered by Blogger.