কিশোরীর প্রথম গর্ভধারণ

তেরো -চৌদ্দ বছর বয়সের একজন কিশোরীর অনেক সমস্যা থাকে। এসব সমস্যার মধ্যে এমন কিছু সমস্যা রয়েছে যেগুলো লজ্জায় বলা হয়ে ওঠে না।
যৌবনপ্রাপ্তির বয়সে শারীরিক কিছু পরিবর্তন সূচিত হয়, যার ফলে শরীরে মিনস্ট্রুয়শন শুরু হয়। মিনস্ট্রুয়েশন, মাসিক, ঋতুস্রাব বা পিরিয়ড এগুলো সবই সমার্থক শব্দ। একটি মেয়ের পিরিয়ড শুরু হওয়া মানেই সে গর্ভধারণের যোগ্য। হঠাৎ করে পিরিয়ডের আবির্ভাবে কিশোরীর মনে ভয় লাগতে পারে। বস্তুত এগুলো খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার এবং জীবনধারারই অঙ্গ।জীবনের প্রথম পিরিয়ডটি খুব বেশি সংক্ষিপ্ত কিংবা দীর্ঘ হবে। প্রথমদিকে পিরিয়ডে কিছুটা অনিয়ম দেখা দিতে পারে। অনেক সময় কয়েক মাস পরেও পিরিয়ড শুরু হতে পারে। ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে পিরিয়ড নিয়মিত অর্থাৎ প্রতি ২৮ দিন পরপর দেখা দেয়। তবে ৩ থেকে ৫ সপ্তাহের মধ্যে পিরিয়ডের উপস্থিতিকে স্বাভাবিক বলেই ধরে নেয়া হয়।
অনেক সময়ে ঠিক একইভাবে রক্তক্ষরণের ক্ষেত্রেও তারতম্য দেখা দেয়। পিরিয়ডের রক্তক্ষরণ ৩ থেকে ৫ দিন পর্যন্ত স্বাভাবিক ধরা হয়। তবে ২ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত রক্তক্ষরণকেও স্বাভাবিক বলে মেনে নেয়া যায়। এ ব্যাপারে জনে-জনে ব্যতিক্রম লক্ষণীয়। পিরিয়ডের এই রক্তের রং প্রথম দিন লালচে থাকে, পরবর্তী দিনগুলোতে তা বাদামি বর্ণ ধারণ করে।
এই রক্তে থাকে জরায়ুর একটি স্তর, জরায়ুমুখ থেকে নিঃসরিত তরল, জরায়ুস্তরের মৃত কোষ এবং ব্যাকটেরিয়া। ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণুর উপস্থিতির ফলে এর একটি বিশেষ দুর্গন্ধ রয়েছে। পিরিয়ডের জন্য মোটামুটিভাবে ৩৫ থেকে ৪৫ মি.লি.রক্ত হারাতে হয়। এই রক্তের পরিমাণ ৫মি.লি. থেকে ৪০মি.লি.পর্যন্ত হতে পারে। এতে রক্তের আয়রন কমে যায়। আয়রনের এই ঘাটতি গড়ে প্রতিদিন ০.৫-০.৭ মি. গ্রাম আয়রন মাসজুড়ে হারানোর সমান। প্রায় ৫০ ভাগের বেলায়ই পিরিয়ডের রক্ত জমাট বেঁধে যায়। এটিও স্বাভাবিক।

অন্য অসুবিধাগুলো

পিরিয়ড চলাকালীন কিছু কিছু শারীরিক ও মানসিক সমস্যাকে স্বাভাবিক বলে মেনে নেয়া হয়। অস্বস্তি এবং বিষন্নতা পেয়ে বসে এ সময়ে। তলপেট এবং পিছনে ব্যথাও হতে পারে।
পিরিয়ড শুরুর আগে যে সমস্যা দেখা যায়
শরীর অবসন্ন ভাব, ক্লান্তি ম্যাজম্যাজে অনুভূতি, বিষণœতা, উত্তেজনা, বিরক্তি, মাথাব্যথা, স্তন ভারি বোধ করা ও ব্যথা, অমনোযোগ ইত্যাদি উপসর্গ পিরিয়ড শুরু হওয়ার ২/৩ দিন আগে থেকে দেখা দিতে পারে। অনেকের বেলায় বমি-বমি ভাব, বমি ও তলপেটে ব্যথা দেখা দিতে পারে। চোখের নিচে কালো ছায়া পড়তে পারে। মুখে, পিটে, বুকে ব্রণের মতো স্পট দেখা দিতে পারে।

যে ব্যবস্থা নিতে হবে

পিরিয়ড হওয়া মেযেদের একটি অতি স্বাভাবিক ব্যাপার। এ সময়ে উদ্ভুত শারীরিক সমস্যাকে মেনে নিতে হবে, স্বাভাবিক জীবন-যাপনে নিজেকে অভ্যস্ত করতে হবে।
পিরিয়ডের সময়ে স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করা উচিত। প্রয়োজনে এই প্যাড বদলে দিতে হবে।

এ সময়ে অপরিষ্কার কোনো কিছু প্যাড হিসাবে ব্যবহার করা ঠিক নয়। পরিচ্ছন্ন নরম কাপড় সাবান দিয়ে ধুয়ে ইস্ত্রি করে তা ব্যবহার করা যেতে পারে। এ সময়ের পরিচ্ছন্নতা রক্ষার জন্যই এগুলো করা প্রয়োজন।
অনেকে পিরিয়ডের শেষে মাসিকের পথ পরিষ্কার করে থাকেন। এগুরো করা ঠিক নয়। এতে এবং ক্ষতি হয় বরং মাসিকের পথ নিজেই নিজের যত্ন নিতে সক্ষম।এ জন্য বাড়তি কিছু দরকার নেই।
এ ছাড়া বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ হয়ে কোনো ডিওডরেন্ট ও উক্ত স্থানে ব্যবহার করা ঠিক নয়। এতে স্থানীয়ভাবে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

পিরিয়ডের সময় বা আগে তলপেটে ব্যথা ও বমি হলে ট্যাবলেট বিউটাপ্যান/নস্পা/ হাইসোমাইড/ বাসকোপ্যান ইত্যাদি ১টা করে দিনে ৩ বার ৩/৪ দিন খাওয়া যেতে পারে।এ ছাড়া ব্যথা বেশি হলে ট্যাবলেট ডাইক্লোফেনাকসোডিয়াম- যেমন ডাইক্লোফেন/ ক্লোফেনাক/ আলট্রাফেন ৫০ মি.গ্রাম করে দিনে ২ বার ভরাপেটে ৩/৪ দিন খাওয়া যেতে পারে। সেই সঙ্গে অ্যান্টাসিড ট্যাবলেট ১টা খাওয়ার পর খেতে হবে।

অনেকে এ সময়টাতে শুয়ে কাটাতে চায়। এটাও ঠিক নয়। এ সময়ে স্বাভাবিক কাজকর্মে নিজেকে ব্যস্ত রাখা উচিত। এমনকি খেলাধুলা পর্যন্তও করা যায়।

আবার কেউ কেউ নিজেকে খুব অপরিচ্ছন্নভাবে। ফলে বারবার গোসল করে, চুল পর্যন্ত ধুয়ে ফেলে। এসব বাড়তি ঝামেলার কোনোই দরকার নেই আসল কথা হচ্ছে পিরিয়ডের ব্যাপারটিকে বিশেষ গুরুত্ব না দিয়ে স্বাভাবিক জীবন-যাপনে নিজেকে সাহসী করে তুলতে হবে। কারণ, চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এটি একটি স্বাভাবিক এবং কাঙ্খিত ব্যাপার।

ডা. সজল আশফাক,
স্বাস্থ্য নিবন্ধকার ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক,
কমফোর্ট ডক্টরস চেম্বার, গ্রীনরোড, ঢাকা।

No comments

Powered by Blogger.