সেনাবাহিনীর সময়সীমা প্রত্যাখ্যান মুরসির

মিসরে চলমান সংকট নিরসনে সেনাবাহিনীর বেঁধে দেওয়া ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা প্রত্যাখ্যান করেছেন দেশটির প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি। গতকাল মঙ্গলবার মুরসির কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে ওই সময়সীমা প্রত্যাখ্যান করে বলা হয়,
সরে না দাঁড়িয়ে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নিজের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করবেন প্রেসিডেন্ট।
মুরসির বিবৃতিতে বলা হয়, গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের পথ সুগম করতে ও জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে জাতীয় সব বাহিনীর সঙ্গে পরামর্শ করছেন তিনি।
প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে মিসরজুড়ে চলমান সহিংস বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার একটি বিবৃতি দেয় দেশটির প্রভাবশালী সেনাবাহিনী। এতে সমঝোতায় পৌঁছাতে সরকার ও বিরোধীদের ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত সেনাবাহিনীর ওই বিবৃতিতে বলা হয়, শেষ সুযোগ হিসেবে সব পক্ষকে ৪৮ ঘণ্টা সময় দেওয়া হলো। এ সময়ের মধ্যে যদি সমস্যার সমাধান না হয়, তাহলে ‘দেশপ্রেম ও দায়িত্ববোধের ঐতিহ্য অনুযায়ী’ সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হবে।
এদিকে, মিসরের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা জানায়, গতকাল সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মেদ কামেল আমর পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। রাজনৈতিক সংকটের জেরে এর আগে আরও চারজন মন্ত্রী পদত্যাগ করেন।
মুরসিকে পদত্যাগের জন্য গত সোমবার এক দিনের সময় বেঁধে দেয় বিরোধীরা। মুরসি স্থানীয় সময় গতকাল বিকেলের মধ্যে পদত্যাগ না করলে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের হুমকিও দেওয়া হয়েছিল।
কায়রোর তাহরির স্কয়ারে রোববার মুরসিবিরোধী লাখো মানুষের বিক্ষোভের পর রাতভর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা চলে। এতে অন্তত ১৬ জন নিহত হয়।
‘আরব বসন্তের’ বিক্ষোভের মুখে প্রায় ৩০ বছর ক্ষমতায় থাকা শাসক হোসনি মোবারকের পতনের পর মিসরের প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করেন মুরসি। ক্ষমতা গ্রহণের ঠিক এক বছরের মাথায় তাঁকেও ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, ইসলামপন্থী মুরসি ক্ষমতায় গিয়ে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত সমস্যা সমাধানে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন।
আদালতের নির্দেশ: এদিকে গতকাল মিসরের একটি আদালত সরকারি কৌঁসুলি আবদেল মেগুইদকে চাকরিতে পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়েছেন। আবদেলকে বরখাস্ত করা নিয়ে বিচার বিভাগ ও প্রেসিডেন্ট মুরসির মধ্যে তিক্ততা দেখা দিয়েছিল। আদালতের এই আদেশ মুরসিকে আরও কোণঠাসা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মুরসিকে ওবামার ফোন: হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে বলা হয়, আফ্রিকার তাঞ্জানিয়া সফরকালে ওবামা টেলিফোনে মুরসির সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় ওবামা জানিয়ে দেন, ওয়াশিংটন মিসরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দেশটিতে একটি দল বা গোষ্ঠীর শাসনকে সমর্থন দেওয়া হবে না।
জনগণের ভোটের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য মিসরের সেনাবাহিনীকে আহ্বান জানিয়েছে ইরান। সেই সঙ্গে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা দেওয়ার জন্যও আহ্বান জানানো হয়। এএফপি, রয়টার্স ও বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.