২১ দেশে আশ্রয়ের অনুরোধ করেছেন স্নোডেন

বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা নজরদারির তথ্য ফাঁস করে ফেরার মার্কিন নাগরিক এডওয়ার্ড স্নোডেন রাশিয়ার কাছে করা রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন প্রত্যাহার করেছেন। তিনি মোট ২১টি দেশে আশ্রয়ের আবেদন করেছেন।
তবে ইতিমধ্যেই কয়েকটি দেশ নেতিবাচক সাড়া দেওয়ায় তাঁর আশ্রয়ের সুযোগ দৃশ্যত কমে আসছে।
এদিকে স্নোডেন অভিযোগ করেছেন, তিনি যেসব দেশে আশ্রয় চাইছেন, সেই দেশগুলোর ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা চাপ দিচ্ছেন। সিআইএর এ সাবেক কর্মী ভবিষ্যতে আরও তথ্য ফাঁসেরও ইঙ্গিত দিয়েছেন।
তথ্য ফাঁস থেকে বিরত থাকার শর্ত রয়েছে জেনে স্নোডেন রাশিয়ার কাছে করা আশ্রয়ের আবেদন প্রত্যাহারের কথা বলেন। সোমবার তাঁর প্রতি সহানুভূতিশীল ওয়েবসাইট উইকিলিকসে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এসব খবর জানানো হয়।
গত ২৩ জুন হংকং থেকে মস্কো গিয়ে সেখানকার বিমানবন্দরে অবস্থান নেওয়ার পর থেকে এই প্রথম নীরবতা ভাঙলেন স্নোডেন।
উইকিলিকসে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, চীন, নরওয়ে, ফ্রান্স, আয়ারল্যান্ড, ভেনেজুয়েলা, বলিভিয়া, ব্রাজিল, কিউবা, জার্মানি, ইতালি, ভারত, নেদারল্যান্ডস, নিকারাগুয়া, স্পেন, সুইজারল্যান্ডসহ ২১টি দেশ স্নোডেনের কাঙ্ক্ষিত আশ্রয়ের তালিকায় রয়েছে। ই-মেইলে এসব দেশে আশ্রয়ের আবেদন পাঠানো হয়। এর আগে তিনি ইকুয়েডরেও একই আবেদন করেন। রাশিয়া, নরওয়ে, অস্ট্রিয়া ও পোল্যান্ডের কর্তৃপক্ষ তাঁর আবেদন বা অনুরোধ পাওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে। পোল্যান্ড ওই আবেদন তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। এ ছাড়া ভারত, ফিনল্যান্ড ও নরওয়ে নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। অন্যদিকে কয়েক দিন ধরেই তাঁকে আশ্রয় দেওয়ার আগ্রহ দেখিয়ে আসা ভেনেজুয়েলা বলেছে, তারা এখনো কোনো আবেদন পায়নি।
নরওয়ে বলেছে, সে দেশে স্নোডেনের আশ্রয় পাওয়ার সম্ভাবনা কম। ফিনল্যান্ড বলেছে বিদেশে থেকে আবেদন করায় তা গ্রহণ করা সম্ভব নয়। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরউদ্দিন বলেন, স্নোডেনের অনুরোধে রাজি হওয়ার মতো কারণ পাওয়া যায়নি।
এদিকে রাশিয়া জানায়, ক্রেমলিনের বিভিন্ন শর্তের কারণে রাশিয়ায় আশ্রয়ের আবেদন ফিরিয়ে নিয়েছেন স্নোডেন। মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য ফাঁসের কার্যক্রম বন্ধ করার শর্তে তাঁকে রাশিয়ায় স্বাগত জানানো হবে বলে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) সাবেক কর্মী স্নোডেন বর্তমানে মস্কোর শেরেমেতিয়েভো বিমানবন্দরে অবস্থান করছেন।
স্নোডেন সোমবার অভিযোগ করেন, তিনি যেসব দেশে আশ্রয় চাইছেন, সেই দেশগুলোর ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা চাপ দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘এসব হচ্ছে রাজনৈতিক আগ্রাসনের পুরোনো ও বাজে অস্ত্র। তাঁর (স্নোডেন) উত্তরসূরিদের ভয় দেখানোই এর উদ্দেশ্য। বিচারিক নির্দেশ ছাড়াই তাঁকে মৌলিক অধিকার চর্চা থেকে বিরত রাখতে চায় মার্কিন প্রশাসন। প্রত্যেকেরই আশ্রয় প্রার্থনার অধিকার রয়েছে।’
ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট রাফায়েল কোরেয়ার উদ্দেশে লেখা এক চিঠিতে স্নোডেন দেশটির ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছেন, ইকুয়েডরের কর্তৃপক্ষ তাঁকে যে সহযোগিতা করেছে, তা বিশ্বের জন্য একটি দৃষ্টান্ত। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে মানবাধিকার রক্ষার ঝুঁকি নেওয়ার মতো সাহস পৃথিবীর খুব কম নেতার মধ্যেই দেখা যায়।
ইইউর যৌথ অবস্থান চায় ফ্রান্স: ইইউর ওপর নজরদারির যে অভিযোগ ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে উঠেছে, তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে যৌথ অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ। তিনি গতকাল প্যারিসে লিথুয়ানিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠককালে এ কথা বলেন। এএফপি, রয়টার্স ও বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.