এভাবে আর কত দিন চলবে? জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

দেশের অন্যতম প্রধান পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ও শিক্ষক সমিতির মধ্যে যে দ্বন্দ্ব চলছে, তার ফলে এই বিদ্যাপীঠের শিক্ষার সামগ্রিক পরিবেশ ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বলা চলে, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে একধরনের অচলাবস্থা বিরাজ করছে।
দীর্ঘ সময় ধরে এমন পরিস্থিতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান উপাচার্য আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে শিক্ষক সমিতি তাঁর পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এই আন্দোলনের কারণে বেশ কিছু সময় ধরে একাডেমিক কর্মকাণ্ড বন্ধ ছিল; এখন ক্লাস ও পরীক্ষা ইত্যাদি চললেও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ভর্তি আটকে রয়েছে এবং এ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন দীর্ঘায়িত হচ্ছে, যা তাঁদের পেশাগত জীবনকে নিঃসন্দেহে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতা একটি পুরোনো বিষয়। প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা, দলপ্রীতি, অনিয়ম-দুর্নীতি, ছাত্র-সহিংসতা, নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাহীনতা এমনকি শিক্ষকদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার মতো ন্যক্কারজনক ঘটনাও সেখানে একাধিকবার ঘটেছে। সবকিছু মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার-গবেষণার উপযুক্ত পরিবেশ দীর্ঘ সময় ধরে অনুপস্থিত। উপাচার্যসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদগুলোতে নিয়োগ-পদায়নসহ শিক্ষক ও অন্যান্য লোকবল নিয়োগেও ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ শোনা যায়। শিক্ষকদের রাজনীতিতে ছাত্রদের ব্যবহার করা, বিশেষত উপাচার্যদের মস্তাননির্ভরতার অভিযোগ ব্যাপকভাবে সমালোচিত বিষয়। এর আগে ব্যাপক আন্দোলনের মুখে উপাচার্য পরিবর্তন করা হয়েছে, কিন্তু তার ফলে পরিস্থিতির তেমন উন্নতি ঘটেনি। বর্তমান উপাচার্যের আদি কর্মক্ষেত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়—এই বিষয়টি কিছু জটিলতার সৃষ্টি করেছে বলে শোনা যায়। তা ছাড়া প্রশাসনিক পদগুলো বণ্টনের ক্ষেত্রে এমন কিছু সমস্যা রয়েছে, যার ফলে উপাচার্য ও শিক্ষক সমিতির মধ্যে দ্বন্দ্ব অত্যন্ত জটিল আকার ধারণ করেছে। শিক্ষক সমিতি উপাচার্য আনোয়ার হোসেনের পদত্যাগের দাবিতে অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। উপাচার্যের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনায় বসতে রাজি নয়।
কিন্তু এভাবে আর কত দিন চলবে? শিক্ষক সমিতি তৃতীয় কোনো পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসে সমস্যা সমাধানের পক্ষে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমাদের মনে হয়, যেভাবেই হোক এই অচলাবস্থার নিরসন হওয়া প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যস্থতায় উপাচার্য ও শিক্ষক সমিতির নেতাদের মধ্যে আলোচনা হতে পারে। তবে উভয় পক্ষকে সমস্যা সমাধানের পক্ষে আন্তরিকতা দেখাতে হবে, নিজ নিজ অবস্থানে অটল থাকা উচিত হবে না।

No comments

Powered by Blogger.