নতুনের জানালা এবার মানুষের মাথা প্রতিস্থাপন!

মেরি শেলির বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ফ্রাঙ্কেনস্টাইন-এর কথা মনে আছে? মাথা, হাত, পা, মেরুদণ্ড প্রভৃতি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ একে একে যুক্ত করে দানব তৈরির বর্ণনা রয়েছে ওই উপন্যাসে। পরে সেই দানব নিজ স্রষ্টা চিকিৎসকের জীবনকেই দুর্বিষহ করে তোলে।
শল্যচিকিৎসা-পদ্ধতির প্রভূত আধুনিকায়ন সত্ত্বেও বাস্তবে এ রকম অঙ্গ প্রতিস্থাপনে বিভিন্ন জটিলতা রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো মানুষের মাথা প্রতিস্থাপন করা যায়নি। তবে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যাপারটি এখন সম্ভব হবে বলেই দাবি করছেন ইতালির স্নায়ুবিজ্ঞানী এবং তুরিন অ্যাডভান্স নিউরোমডুলেশন গ্রুপের পরিচালক সার্জিও ক্যানাভেরো। তিনি বলেন, মাথা প্রতিস্থাপনের ব্যাপারটি এখন কেবল কল্পবিজ্ঞানে সীমাবদ্ধ রাখার দিন শেষ হয়ে গেছে। এই অস্ত্রোপচার সফল হলে মানুষ টেকসই দীর্ঘায়ু লাভ করবে। তবে এই গবেষণায় প্রয়োজনীয় বিপুল পরিমাণ অর্থায়নের উদ্যোগ এখনো বাকি রয়েছে।
প্রস্তাবিত এই মাথা প্রতিস্থাপনে সাফল্য এলে বিভিন্ন জটিল রোগ এড়িয়ে মানুষের দীর্ঘায়ু অর্জন সম্ভব হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মাথা প্রতিস্থাপনের লক্ষ্যে বিভিন্ন পশুর শরীরে ১৯৭০ সাল থেকে অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে। ওই বছর রবার্ট হোয়াইট নামের এক চিকিৎসক একটি বানরের (রিস্যাস) মাথা অপর একটি রিস্যাসের শরীরে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করেন।
যুক্তরাজ্যের সান পত্রিকার সঙ্গে আলাপকালে ক্যানাভেরো দাবি করেন, মানুষের ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি ব্যবহারে সাফল্য পাওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যাটি ছিল দাতার মাথাটি গ্রহীতার মেরুদণ্ডে সংযুক্ত করা। প্রতিস্থাপিত মাথাটি মেরুদণ্ডে যুক্ত করলে প্রায় সব ক্ষেত্রেই সংযুক্ত অংশটি অকার্যকর বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত (প্যারালাইজড) অবস্থায় থাকে। তবে শল্যচিকিৎসার আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ সমস্যা দূর করার সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্ট গবেষকেরা। তবে এই প্রক্রিয়ায় উভয় মাথা একই সময়ে বিচ্ছিন্ন করে এক ঘণ্টার মধ্যে প্রতিস্থাপন সম্পন্ন করতে হবে।
গবেষকদের দাবি, ১০০ জন চিকিৎসকের একটি দল ৩৬ ঘণ্টার অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে মাথা প্রতিস্থাপন সাফল্য অর্জন করতে পারবেন। এতে খরচ হতে পারে ৮৫ লাখ ব্রিটিশ পাউন্ড। তবে এ ব্যাপারে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
গবেষকদের অনেকে ক্যানাভেরোর মতের বিরোধিতা করেছেন। যুক্তরাজ্যের ব্রিটিশ ট্রান্সপ্লান্টেশন সোসাইটির গবেষক অ্যান্থনি ওয়ারেন তাঁদেরই একজন। তিনি বলেন, মানুষের মাথা প্রতিস্থাপনের ভাবনাটি উদ্ভট। এ ধারণা একেবারেই ভিত্তিহীন।
যুক্তরাজ্যের স্কটিশ কাউন্সিল অন হিউম্যান বায়োএথিকসের গবেষক ক্যালাম ম্যাককেলার বলেন, পুরো ব্যাপারটি তাঁর কাছে ভৌতিক চলচ্চিত্রের (হরর মুভি) মতোই মনে হচ্ছে। টেলিগ্রাফ।

No comments

Powered by Blogger.