ভেজাল খাবার-আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করুন

অতি জরুরি দুটি আইনের খসড়া মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে। নতুন এ আইন দুটো পাস হলে মাতৃদুগ্ধের বিকল্প শিশুখাদ্য- এমন বিজ্ঞাপন প্রচার নিষিদ্ধ হবে। পাশাপাশি খাদ্যে ভেজাল মেশালে ১৪ বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে।
বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে ভেজাল খাদ্য। সংবাদমাধ্যমে প্রতিদিন খাদ্যে ভেজাল মেশানোর খবর প্রচারিত হচ্ছে। কাঁচা শাকসবজি, ফলমূল, মাছ-মাংসে ফরমালিন মেশানোর ঘটনা তো অহরহই ঘটছে। এ ছাড়া প্যাকেটজাত বিভিন্ন খাদ্যে মেশানো হচ্ছে বিষাক্ত রাসায়নিক। কার্বাইড দিয়ে পাকানো হচ্ছে মৌসুমি ফল। আমদানি করা ফলে মেশানো হচ্ছে বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য। বাজারে আসা খাদ্যদ্রব্য এভাবে দীর্ঘদিনের জন্য সংরক্ষণযোগ্য করা হলেও তা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। ভেজাল ও বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো খাবার খেয়ে মানুষ মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আক্রান্ত হচ্ছে দুরারোগ্য ব্যাধিতে। শিশুদের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সব মিলিয়ে জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে ভেজাল খাদ্য। তাই ১৯৬৯ সালের 'পিওর ফুড অর্ডিন্যান্স' রহিত করে নতুন আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। ভেজাল ও ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য মেশানোর দায়ে সাত বছর কারাদণ্ডের বিধান রেখে আইন করার প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে সরকার। তবে দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে সাজার মেয়াদ হবে দ্বিগুণ; অর্থাৎ ১৪ বছর সাজা খাটতে হবে।
আরেকটি আইনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে বিকল্প শিশুখাদ্য উৎপাদন ও বিপণন করা যাবে, তবে বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে না। ১৯৮৪ সালের মাতৃদুগ্ধ বিকল্প খাদ্য অধ্যাদেশ রহিত করে এ আইন করা হচ্ছে। এ আইন ভাঙলে কারাদণ্ডের মেয়াদ দুই বছর থেকে বাড়িয়ে তিন বছর করা হয়েছে। আর জরিমানার পরিমাণ পাঁচ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে পাঁচ লাখ টাকা। আগে অপরাধের ক্ষেত্রে শুধু ব্যক্তির শাস্তি হতো। নতুন আইনে প্রতিষ্ঠানকেও শাস্তির আওতায় আনা হবে।
মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হওয়া দুটি আইনই সময়োপযোগী। তবে দেশের মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করতে ও এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজি বন্ধ করতে শুধু আইন প্রণয়নই যথেষ্ট নয়, আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল মেশানোর শাস্তি আরো কঠোর হওয়া উচিত। বিশেষ ক্ষমতা আইনে খাদ্যে ভেজাল মেশানোর অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান আছে।

No comments

Powered by Blogger.