অবিলম্বে তিন শর্ত পূরণ করুন- জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে

জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে সংশোধিত শ্রম আইন প্রয়োগ, কর্মপরিবেশের উন্নতি ও ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার নিশ্চিত করার মতো বিষয়গুলো মূলত আমাদের জাতীয় দাবি।
সরকার ও মালিকদের উদ্যোগগুলো কেবল জিএসপির জট ছোটানো বা ইইউর তরফের ঝুঁকি হ্রাসকরণের উদ্দেশ্যে হওয়া কাম্য নয়। নিজেদের স্বার্থেই তা করতে হবে। অথচ জাতীয় সংসদে এ নিয়ে গঠনমূলক আলোচনার পরিবর্তে দোষারোপের মাত্রাই ছিল প্রকট।
২০১৩ সালের ৬ জুন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট কমিটি অন রিলেশনসে বাংলাদেশের শ্রমবাজারের ওপর একটি শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এই শুনানিতেই জিএসপির বিষয়ে সিদ্ধান্ত পাকা হয়েছিল বলে প্রতীয়মান হয়। শুনানিতে বলা হয়, বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ব্র্যান্ড বানিয়ে শ্রমিকদের মাস গেলে জোটে ৩৮ ডলার। ১৫ কোটি মানুষের দেশটি ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্নও দেখে। পোশাকশিল্পে ৪০ লাখ শ্রমিকের ৮০ শতাংশই নারী। রানা প্লাজায় এক হাজার ১২৯ বাংলাদেশির প্রাণহানি দেশটির প্রকৃত অবস্থা সামনে এনেছে এবং এটা এমন এক সুযোগ সৃষ্টি করেছে, যাকে সত্যিই বলা যায় ঘুরে দাঁড়ানোর সময়।
আমরা এই মনোভাবের সঙ্গে একমত। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানার কাজের পরিবেশের দুরবস্থা বলতে গিয়ে তারা ১০০ বছর আগের যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক কারখানার দুর্দশাকেও স্মরণ করেছে। তারা বলেছে, আক্ষরিক অর্থেই তাঁদের চাকরি তাঁদের হত্যার দিকে ঠেলে দিতে পারে। রানা প্লাজা ধসের পর হেরিস ইন্টারঅ্যাক্টিভ জরিপ দেখিয়েছে, প্রায় ৭০ শতাংশ মার্কিন রানা প্লাজা ধসের কথা শুনেছেন এবং প্রায় ৪০ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ভবিষ্যতে আর না কিনতে আগ্রহী হতে পারেন। অন্যদিকে ইইউর বিবৃতি নিয়ে বড় সন্তুষ্টি লাভের কারণ নেই। কথার ফুলঝুরি ছড়ানো ছাড়া তাজরীন বা রানা প্লাজার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যত তেমন কিছুই করা হয়নি।
জিএসপি সুবিধা বাতিল নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক কাম্য নয়। এ ধরনের বিপর্যয়ের সময় অন্যান্য দেশে যে রাজনৈতিক মতৈক্য লক্ষ করা যায়, আমাদের এখানে তা পুরোপুরি অনুপস্থিত। এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। দ্বিতীয়ত, এ ব্যাপারে কোনো লোক দেখানো পদক্ষেপ কিংবা মৌখিক প্রতিশ্রুতি যে সুফল দেবে না, তা নিশ্চিত করে বলা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি সুবিধা পুনরুদ্ধার করতে হলে শ্রম আইন সংশোধন করে যেমন শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে, তেমনি কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নত করতে হবে। প্রথমটির দায়িত্ব সরকারের হলেও দ্বিতীয়টি করতে হবে মালিকদেরই। বিদেশি ক্রেতারা এখন শুধু কথায় আশ্বস্ত হবেন না।
বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের প্রতি চীনের আগ্রহ এই খাতের বিপুল সম্ভাবনারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। সেই সম্ভাবনাকে কোনোভাবেই হেলায় হারাতে দেওয়া যাবে না। পুরোনো বাজারের পাশাপাশি তৈরি পোশাকের নতুন বাজার ধরতে উল্লিখিত তিন শর্ত পূরণের বিকল্প নেই।

No comments

Powered by Blogger.