সাফল্য কুস্তিগির সেই মেয়েটি by হাসান ইমাম

ছোটবেলায় টিভিতে বসে রেসলিং দেখতে খুব ভালো লাগত শিরিন সুলতানার। তবে কখনো ভাবেননি নিজে এই খেলায় অংশ নেবেন। ২০০৮ সালে যোগ দেন বাংলাদেশ আনসারে, ব্যাটালিয়ন সৈনিক হিসেবে।
২০০৯ সালে বাংলাদেশ আনসারে ট্যালেন্ট হান্ট কার্যক্রম হলো। সেখানে জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের সাবেক খেলোয়াড় (বর্তমানে আনসার মহিলা ফুটবল দলের কোচ) রেহানা পারভীনের চোখে পড়লেন শিরিন। ব্যস, নামিয়ে দিলেন খেলার মাঠে। কুস্তি খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে খুব কম সময়েই তুলে ধরলেন সবার সামনে। খেলা শুরু করার পরের বছরই জিতে নিলেন জাতীয় কুস্তি প্রতিযোগিতা ২০১০ সালে (৫৫ কেজি ওজন শ্রেণীতে) সোনা। এই তো পথচলা শুরু। শিরিন সুলতানা বলছিলেন এমনই, ‘আমি খুব বেশি দিন খেলা শুরু করিনি। প্রতিদিন শিখছি নতুন কিছু। মন দিয়ে প্রশিক্ষণ নিতে চাই। অলিম্পিকের মতো বিশ্ব আসরে সোনা জেতার খুব ইচ্ছা বাংলাদেশের হয়ে। সেভাবেই এগোতে চাই।’
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার পাহাড় অনন্তপুর গ্রামের মেয়ে শিরিন। চাকরির সুবাদে এখন আছেন ঢাকায়। প্রতিদিন প্রশিক্ষণ চলছে সকাল-বিকেল নিয়ম করে। মা আর দুই ভাইকে নিয়েই তাঁর সংসার।
শুধু ২০১০ সালে নয়, কুস্তিতে জাতীয় পর্যায়ে ২০১১ ও ২০১২ সালেও শিরিন জিতেছেন সোনা। দেশের বাইরে গত বছর ভারতে ইন্দো-বাংলাদেশ-বাংলা আন্ত রেসলিং চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জেতেন তিনি। শুধু কুস্তি না, জানালেন কাবাডিও খেলেন। বাংলাদেশ আনসারের হয়ে ২০১১ সালে মিজান জাতীয় কাবাডি প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন। এ ছাড়া ২০১২ সালে ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের হয়ে জাতীয় মহিলা ক্লাব লিগে বিজয়ী হয়ে সোনা জেতে তাঁদের দল। একজন মেয়ে হয়ে কুস্তি খেলতে কোনো প্রতিবন্ধকতা... কথাটা শেষ করার আগেই শিরিন কেড়ে নিলেন, ‘আসলে আমাদের দেশে মেয়েদের নানা ধরনের না-এর মধ্যে বেড়ে উঠতে হয়। তবে আমার ক্ষেত্রে তা কমই ঘটেছে। কাবাডি বা কুস্তি—যে খেলাই খেলি না কেন, পরিবার আমাকে পুরোপুরি সমর্থন দিয়েছে। সমর্থন পেয়েছি চারপাশের মানুষের। হয়তো তাই এগিয়ে আসার সাহস পেয়েছি।’
আরও বলেন, মেয়েদের কুস্তিতে অংশগ্রহণ বাড়াতে এর জনপ্রিয়তা ও সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে হবে। তা ছাড়া ফেডারেশনগুলোয় অর্থ-সহায়তা দিতে হবে। বেশি খেলার সুযোগ তৈরি করতে পৃষ্ঠপোষকদের এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে মেয়েরা উৎসাহ নিয়ে এই খেলায় আসবে।
এবারের বাংলাদেশ গেমসে মনের মতো ভালো করতে না পেরে অনেকটা জেদ চেপে গেছে শিরিনের মনে। সামনের জাতীয় বা আন্তর্জাতিক যেকোনো প্রতিযোগিতায় তাই নিজেকে আবার শীর্ষে নিতে চান তিনি। অবসরে যেমন বই পড়তে ভালোবাসেন, তেমনি ছুটি পেলেই বাড়ি যেতে মন চায় তাঁর। এখন অবশ্য বাড়িতে গেলে অনেকে নাকি তাঁকে দেখতে আসে। অনেক মেয়ে উৎসাহ দেখায় এ খেলায় যোগ দেওয়ার। হেঁটে গেলে আশপাশের লোকেরাও ডেকে নিয়ে কথা বলেন। এসব খুব উপভোগ করেন তিনি। এর জন্য অবশ্য নিজের কর্মস্থল বাংলাদেশ আনসারের কাছে তাঁর ঋণের নাকি শেষ নেই। ‘এই চাকরির জন্যই আমি খুঁজে পেয়েছি আমার “আমি”কে। এখানে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছি বলেই হয়তো খেলাটা চালিয়ে যেতে পারছি।’ বলছিলেন শিরিন সুলতানা। ভবিষ্যতে কোচ হয়ে আরও মেয়েকে কুস্তি শেখাতে চান। সব ধরনের খেলাধুলায় মেয়েদের অংশগ্রহণ বাড়লেই দেশটা পাল্টে যেত। বলতে বলতে হেসে ওঠেন শিরিন সুলতানা।

No comments

Powered by Blogger.