দুই ভরি স্বর্ণের জন্য

দুই ভরি স্বর্ণের জন্য জীবন গেল ৮ মাস আগে বিয়ে হয়ে শ্বশুরবাড়িতে আসা টুম্পার। মাগুরার শালিখা উপজেলার কাঁঠালবাড়িয়া গ্রামের সঞ্জীব কুমার বসুর মেয়ে টুম্পা বসু (২২)। প্রায় ৮ মাস আগে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার নন্দলালপুর গ্রামের স্কুলশিক্ষক সুকুমার ঘোষের একমাত্র ছেলে গৌতম ঘোষের সঙ্গে টুম্পার বিয়ে হয়।
বিয়ের সময় টুম্পার পিতা যৌতুক হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা ও ছয় ভরি স্বর্ণের গহনা দেন। আরও দুই ভরি স্বর্ণের গহনা দেয়ার কথা ছিল। বিয়ের পর থেকে গহনা না পেয়ে গৌতমের মা সান্ত্বনা ঘোষ প্রায়ই টুম্পার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতেন। মঙ্গলবার রাতে শ্বশুরবাড়িতে টুম্পার মৃত্যু হয়। এ মৃত্যুকে হত্যা দাবি করছেন টুম্পার পিতার পরিবারের লোকজন। অপরদিকে টুম্পার শ্বশুরবাড়ির লোকজন বলছেন তিনি আত্মহত্যা করেছেন। কুমারখালী থানার ওসি শেখ আতিয়ার রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে টুম্পাকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করেছেন তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন। টুম্পার পিতা সঞ্জীব কুমার বসু বলেন, বিয়ের সময় পাঁচ লাখ টাকা ও ছয় ভরি গহনা দেয়া হয়েছিল। বাকি ছিল দুই ভরি। এ নিয়ে গৌতমের মা গহনা দিতে প্রায়ই ফোন করতেন। মেয়েকে বিভিন্ন সময়ে নির্যাতন করতেন। গহনা দেয়ার জন্য চাপ দেয়া হয় বিভিন্ন সময়। গত ২৮শে মে রাত তিনটার দিকে মুঠোফোনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে টুম্পা তার বোন রুম্পা বসুকে জানায় গহনার জন্য তাকে মারধর করা হচ্ছে। একথা বলতেই টুম্পার কাছ থেকে মুঠোফোন কেড়ে নেয় তার স্বামী। ভোরে গৌতম কুমার মুঠোফোনে জানায় টুম্পা বিষ খেয়েছে। তিনি তাড়াতাড়ি কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখতে পান তার মেয়ের লাশ পড়ে আছে।
সঞ্জীব কুমার বসু অভিযোগ করে বলেন, ‘মেরে মুখে বিষ ঢেলে মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। বাড়ির লোকজন নাটক সাজিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। মেয়ের গালে চড়-থাপ্পড়ের আঘাতের চিহ্ন দেখেছি। খবর পেয়ে কুমারখালী থানার অফিসার ইনচার্জসহ পুলিশের একটি দল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গৌতমের বাড়িতে গিয়ে বিষের বোতল উদ্ধার করে। কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাশের ময়না তদন্ত শেষে নিয়ে যায় বাবার বাড়ির লোকজন। এ ঘটনার পরপরই গৌতম ও তার মা শান্তনা ঘোষ হাসপাতালে থেকেই কৌশলে পালিয়ে যান। সরজমিন গত রোববার দুপুরে নন্দলালপুর গ্রামের সুকুমার কুমারের বাড়ির প্রধান ফটকে তালা মারা দেখা যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর সুকুমার ঘোষকে পাওয়া যায়। সুকুমার ঘোষ জানান, গহনা নিয়ে স্ত্রীর (সান্ত্বনার) সঙ্গে একটু ঝামেলা ছিল। মঙ্গলবার রাতে খাওয়ার সময়ও ঝগড়া হয়েছিল। তবে বউ (টুম্পা) বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছে। ছেলে ও স্ত্রী কোথায় আছেন তা তিনি জানেন। প্রতিবেশী আনারুল ইসলাম বলেন, গৌতমের মা তেমন সুবিধার ছিল না। বাড়ির ভেতর প্রায়ই বাকবিতণ্ডার শব্দ শুনতে পেতেন। অত সুন্দর মেয়েটি বিষ খেতে পারে এটা বিশ্বাসই করতে পারছে না তিনি। এ ব্যাপারে কুমারখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ আতিয়ার রহমান বলেন, এ ঘটনায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা ও একটি সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। ঘটনার পর থেকেই গৌতম ও তার মা সান্ত্বনা ঘোষ পলাতক। তাদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে টুম্পাকে মানসিকভাবে চাপা রাখা হতো। ময়না তদন্ত প্রতিবেদন পেলে হত্যা বা আত্মহত্যা প্ররোচণার অভিযোগে মামলা নেয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.