অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে সংসদে আলোচনা প্রস্তাব প্রত্যাহার করল বিএনপি

নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে সংসদে আলোচনার জন্য দেওয়া মুলতবি প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নিয়েছে বিএনপি। এই ইস্যুতে নিজেরা উদ্যোগী হয়ে কোনো ধরনের আলোচনা করবে না, এমন সিদ্ধান্ত থেকে প্রস্তাব প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে বিএনপি জানিয়েছে।
গতকাল সোমবার বিকেলে বিরোধীদলীয় নেতার কার্যালয়ের সভাকক্ষে খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে বিএনপির সংসদীয় দলের বৈঠকে আলোচনার প্রস্তাবটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়।
এরপর সাংসদ মাহবুবউদ্দিন তাঁর দেওয়া প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করে নেন। এ জন্য তিনি সংসদের মুলতবি ও অধিকার শাখায় লিখিত আবেদন করেন। মাহবুবউদ্দিন চলতি অধিবেশনের আলোচনার জন্য দলের পক্ষ থেকে ‘নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা’ শীর্ষক প্রস্তাবটি এনেছিলেন।
বিএনপির সংসদীয় দলের এই বৈঠকের আগেই জাতীয় সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তবে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া বা তাঁর কোনো প্রতিনিধি ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না। বৈঠকে বিএনপির প্রস্তাবের ওপর আলোচনার করতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ওই সভার উপস্থিত কার্য উপদেষ্টা কমিটির সদস্য তোফায়েল আহমেদ গতকাল সংসদে বলেন, বিএনপি ভেবেছিল তাদের আলোচনা করতে দেওয়া হবে না। তখন তারা বাইরে গিয়ে বলবে সরকার আলোচনা করতে দেয়নি। কিন্তু যখন আলোচনা করতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, তখন তারা দ্রুত প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নিয়ে গেছে। তিনি সংসদে এ ঘটনার নিন্দা জানান।
এর আগে দুই ঘণ্টা ১০ মিনিট সংসদ অধিবেশনে থেকে ওয়াকআউট করেন বিরোধীদলীয় সাংসদেরা। এর মধ্যে অবশ্য মাগরিবের নামাজের জন্য প্রায় ২৫ মিনিট সংসদের কার্যক্রমে বিরতি ছিল। বিরতির পর অবশ্য বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া সংসদ অধিবেশনে আর যোগ দেননি।
মওদুদ আহমদের নেতৃত্বে বিরোধী দলের সাংসদদের ওয়াকআউটের পরই বক্তব্য দেন তোফায়েল আহমেদ। তিনি অভিযোগ করেন, বেতন-ভাতা ও সংসদ সদস্যপদ রক্ষার জন্যই বিএনপি সংসদে এসেছে।
বিএনপির সংসদীয় দলের বৈঠকের পর জাতীয় সংসদের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, আলোচনার জন্য সরকারকেই প্রস্তাব আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিরোধী দল কোনো প্রস্তাব আনবে না। তিনি দাবি করেন, মাহবুবউদ্দিনের প্রস্তাবটি কোনো দলীয় প্রস্তাব নয়। সংসদে তিনি ব্যক্তিগতভাবে প্রস্তাব দিয়েছেন।
জয়নুল আবদিন বলেন, ‘সংসদীয় দলের সভার সিদ্ধান্ত হলো, এই বিষয় (নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা) নিয়ে কোনো প্রস্তাব আনব না, কোনো আলোচনা করব না।’ এ কারণে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে সংসদে যে প্রস্তাব ছিল, তা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
বিএনপির সংসদীয় দলের বৈঠকের একটি সূত্র জানিয়েছে, সভার শুরুতেই নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে আলোচনার জন্য জাতীয় সংসদে দেওয়া প্রস্তাব নিয়ে কয়েকজন সাংসদ কথা বলেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, সরকার আলোচনার প্রস্তাব না দিলে বিএনপির আগ বাড়িয়ে আলোচনার প্রস্তাব সংকট সমাধানে কোনো প্রভাব ফেলবে না। বরং সে ক্ষেত্রে সংসদের আলোচনা ব্যর্থ হলে সংকট আরও বাড়বে। বিএনপির এক সাংসদ বলেন, সংকট সমাধানের জন্য এখনো কয়েক মাস সময় আছে। এখনই সব পথ বন্ধ করা হলে তাতে বিএনপি লাভবান হবে না। ওই সাংসদ বলেন, সরকার না চাইলে নির্দলীয় সরকার ফিরবে না। তাই বিষয়টি সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়া বিএনপির জন্য ভালো।
একপর্যায়ে সাংসদ মাহবুবউদ্দিনকে তাঁর প্রস্তাব প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেন খালেদা জিয়া।
সংসদীয় দলের সভা: বিএনপি সংসদের চলতি অধিবেশনে যোগ দেবে কি না, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে সভা ডাকেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। প্রায় সোয়া ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক হয়। সেখানে গতকালই অধিবেশনে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। এরপর পাঁচটা ৫০ মিনিটে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সংসদে যোগ দেয় বিএনপি।
বিএনপির সংসদীয় দলের বৈঠকে দলীয় সাংসদেরা ছাড়াও জামায়াতের দুই সাংসদ ও বিজেপির এক সাংসদ উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.