অনলাইন থেকে-ভারতের বন্যা দুঃখ

ভারতের উত্তরাঞ্চলের উত্তরখণ্ডের প্রকৃতি যেন অকৃপণ অনুগ্রহে ভরপুর। হিমালয় পর্বতসংলগ্ন এ অঞ্চলে ভারতের সবচেয়ে স্রোতস্বিনী নদীগুলো প্রবহমান; কিন্তু বন্যার ভয়াবহতা এ অঞ্চলে যে রূপ নিয়েছে, ভূমিধস ও ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাকে এখন বলা হচ্ছে হিমালয়ের সুনামি।
প্রবল মৌসুমি বৃষ্টিতে নদীর দুই কূল ভেসে গেছে, ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। যে হাজার হাজার মানুষ এখনো আটকে আছে, তাদের অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে। টেলিভিশনের চিত্রে দেখা গেছে, গোটা পাকা বাড়ি উল্টে তেজস্বী নদীতে ভেসে যাচ্ছে।
হতভম্ব রাজ্য সরকারের প্রায় কিছুই করার নেই। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে চলমান উদ্ধার অভিযানে ১০ হাজার অতিরিক্ত সেনা নিয়োজিত করতে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৩৩ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ৬০০ মৃত্যুর খবর জানানো হলেও আরো বেশি মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর মধ্যে একটি বড় অংশের মানুষ উত্তরখণ্ডে তীর্থযাত্রায় এসেছিল। উত্তরখণ্ডকে বলা হয় দেবতাদের ভূমি। হিন্দু ধর্মের কয়েকটি পবিত্রতম মন্দির রয়েছে চরধাম এলাকায়। ঐতিহ্যগতভাবে জুন মাস হলো চরধামের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। এমন একটি জরুরি অবস্থায় ভারতকে মনে হচ্ছে সবচেয়ে অন্ধকার সময় পার করছে। রাজনীতিবিদরা তাঁদের দায়িত্ব থেকে সরে গেছেন। শুরু হয়েছে পরস্পরের প্রতি অভিযোগের খেলা। বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টি ঝাঁপিয়ে পড়েছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারের ওপর এবং এ দুর্যোগকে তারা আখ্যায়িত করেছে মনুষ্য সৃষ্ট বলে। তাদের অভিযোগ, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন এলাকা সংরক্ষণের কথা থাকলেও সরকার তা উপেক্ষা করে নদীর দুই পাড়ে নির্মাণ কাজের অনুমতি দিয়েছে। গত এপ্রিল মাসে কেন্দ্রীয় একজন অডিটর যে রিপোর্ট দিয়েছেন তাতে বলা হয়েছে, উত্তরখণ্ডে উল্লেখ করার মতো কোনো দুর্যোগ ব্যবস্থপনা নেই (ঘটনাক্রমে উত্তরখণ্ডে সরকারে আছে কংগ্রেস)।
উত্তরখণ্ডের দুর্যোগই শেষ কথা নয়। এ বন্যার খবরের মধ্যে আবার রুপির দর সর্বকালের মধ্যে সবচেয়ে মন্দায় পড়েছে। এক ডলারের বিপরীতে এখন ৬০ রুপি। গত বছর মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে ৬ শতাংশ। দেশে বিদেশি বিনিয়োগের কোনো চিহ্নই পরিলক্ষিত হচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে, রুপির দর আরো পড়বে। ব্যাংকাররা বলছেন, ১ ডলারের বিপরীতে ৭০ রুপি প্রকৃত মূল্য হওয়া উচিত।

লেখক: নাজনিন কারমালি। ফোর্বস ম্যাগাজিন থেকে ঈষৎ সংক্ষেপিত ভাষান্তর : মহসীন হাবিব

No comments

Powered by Blogger.