ভারতে বন্যা-ভূমিধস-খাদ্য-আশ্রয়ের চরম সংকটে দুর্গতরা

ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় উত্তরাখণ্ড ও হিমাচল প্রদেশে বন্যা-ভূমিধসে নিহতের সংখ্যা প্রায় ৬০০ জনে দাঁড়িয়েছে। এখনো আটকা পড়ে আছে প্রায় ৬৩ হাজার মানুষ। খাদ্য ও আশ্রয়ের অভাবে মানবেতর দিন কাটছে তাদের।
কেদারনাথ মন্দিরসহ দুর্গত এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অনেক লাশ। অসংখ্য রাস্তাঘাট ও সেতু বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়ায় উদ্ধারকর্মীরা অনেক এলাকায় ঢুকতেই পারছেন না। তা ছাড়া বৈরী আবহাওয়া ও সরকারি বাহিনীগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাবেও উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে।
উত্তরাখণ্ডের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ওম প্রকাশ বলেছেন, 'আজ (শনিবার) পর্যন্ত ৫৭৫ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। এখনো ৬২ হাজার ৭৯০ জন আটকা পড়ে আছে।'
গতকাল কেদারনাথ ও গৌরিকুন্দ এলাকা থেকে এক হাজার পুণ্যার্থীসহ মোট ১৮ হাজার মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। বদ্রিনাথ মন্দিরে আটকা ৯ হাজার মানুষ উদ্ধারের অপেক্ষায় রয়েছে। ধারাসু এলাকা থেকে ছয় মার্কিনিসহ ২০ বিদেশি পর্যটককে উদ্ধার করা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ জানিয়েছে, কেদারনাথ মন্দিরসহ দুর্গত এলাকায় অগণিত লাশ ভাসছে। উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় বহুগুনা গত শুক্রবার বলেন, 'হিমালয়ের ইতিহাসে এ ধরনের দুর্যোগ এর আগে কখনো হয়নি।' এ দুর্যোগকে তিনি হিমালয়ের সুনামি নামে অভিহিত করেছেন।
গত রবিবার আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসের কারণে শতাধিক শহর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় হেলিকপ্টার থেকে খাদ্য ও প্রয়োজনীয় ওষুধ ফেলা হচ্ছে। এ কাজে ৩৬টি হেলিকপ্টার ও হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। তবে বৈরী আবহাওয়া ও রাস্তাঘাট বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়ায় উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। অনেক এলাকায় উদ্ধারকর্মীরা পৌঁছতেই পারছেন না। উদ্ধার অভিযানের প্রধান অজয় চাড্ডা বলেন, 'আমরা সময়ের বিপরীতে কাজ করছি।' এরই মধ্যে আরো বৃষ্টিপাতের আশঙ্কায় দুর্গত এলাকায় উদ্ধার তৎপরতা আরো বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
উদ্ধারকাজ ও ত্রাণতৎপরতা দেখভাল করার জন্য গতকাল দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার সিন্দে। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'উদ্ধার অভিযানে নিয়োজিত সরকারি বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়হীনতার অভাবে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে।' মৃতদেহ শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। এ দুর্যোগকে জাতীয় দুর্যোগ বলে অভিহিত করেছেন সিন্দে। গতকাল গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও দুর্গত এলাকা পরির্দশন করেছেন।
এদিকে পূর্ত বিভাগ জানিয়েছে, উত্তরাখণ্ডের ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা ও সেতু মেরামতে সময় লাগবে এক বছর। আর এজন্য ব্যয় হবে ২৫০ কোটি রুপিরও বেশি। সূত্র : পিটিআই, জিনিউজ, এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.