সম্পদ বেশি মান্নানের, আজমতের চেয়ে স্ত্রী বেশি ধনী by শরিফুল হাসান ও মাসুদ রানা

গাজীপুরে সাত মেয়র পদপ্রার্থীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্পদশালী বিএনপি-সমর্থিত এম এ মান্নান। মামলার দিক থেকেও তিনি এগিয়ে। দুর্নীতির তিনটিসহ মোট সাতটি মামলা ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্লা খানের বিরুদ্ধে মামলা ছিল তিনটি।
নিজের চেয়ে তাঁর স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণই বেশি।
তবে সম্মিলিত নাগরিক কমিটির ব্যানারে প্রার্থী হওয়া জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে মামলা নেই। অবশ্য তিনি নির্বাচন থেকে সরে গেছেন কি না, তা নিয়ে বিতর্ক আছে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ও মামলার বিষয়সহ অন্যান্য তথ্য ভোটারদের জানানো হবে।
প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে আরও জানা যায়, আজমত উল্লা এলএলএম পাস। পেশা উল্লেখ করেছেন সুপ্রিম কোর্ট ও গাজীপুর জজ কোর্টের আইনজীবী।
এম এ মান্নানের জন্ম ১৯৫০ সালের ৭ এপ্রিল। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন বিভাগ থেকে মাস্টার্স করেছেন। পেশা ব্যবসা। এই দুই প্রার্থীর চেয়ে অপেক্ষাকৃত তরুণ জাহাঙ্গীর আলমের জন্ম ১৯৭৯ সালের ৭ মে। শিক্ষাগত যোগ্যতা এম এ। তিনিও পেশায় ব্যবসায়ী।
মামলা: হলফনামা অনুযায়ী, মান্নানের বিরুদ্ধে সাতটি মামলা ছিল। তিনটি দুর্নীতির মামলার দুটিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে, অর্থাৎ অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি। একটি মামলা আদালতের মাধ্যমে খারিজ হয়েছে। বাকি চারটি মামলা প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ, পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া ও বেআইনিভাবে সমাবেশ করার অভিযোগে। গাজীপুর মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে এসব মামলার কার্যক্রম চলছে।
আজমত উল্লার বিরুদ্ধে তিনটি মামলার একটিতে অব্যাহতি পেয়েছেন। বাকি দুটি মামলা ‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বিবেচনায়’ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
সম্পদ: এম এ মান্নান গাজীপুর ফ্যাশন লিমিটেড ও ক্যাপিট্যাল প্রোপার্টিজ ডেভেলপমেন্ট (প্রা.) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি তাঁর মোট বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ১৬ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে কৃষি খাত থেকে ৬২ হাজার টাকা ও ব্যবসা থেকে ১৫ লাখ ৯৬ হাজার টাকা আয় করেন। এ ছাড়া তিনি তাঁর স্ত্রীর আয় দেখিয়েছেন তিন লাখ ৯৬ হাজার টাকা।
মান্নানের মোট সম্পদের পরিমাণ দুই কোটি ৭০ লাখ ২৩ হাজার ৬৭৫ টাকা। নিজ নামে নগদ টাকা রয়েছে ৭৩ লাখ ৯৮ হাজার ৩৩৪। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমার পরিমাণ ১০ লাখ ৭৫ হাজার ৩৪১ টাকা। নিজ নামে শেয়ার রয়েছে এক লাখ ৭৯ হাজার ৮০০টি, যার প্রতিটি ১০০ টাকা হারে। স্ত্রীর নামে শেয়ার রয়েছে ৫১ হাজার ২০০টি, প্রতিটি ১০০ টাকা হারে। তাঁর ১৯৮৬ মডেলের একটি জিপ রয়েছে, মূল্য দুই লাখ টাকা। এ ছাড়া স্ত্রীর নামে ১০ তোলা স্বর্ণালংকার, নিজ নামে এক লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের ইলেকট্রনিক্স পণ্য ও আসবাবপত্র এবং স্ত্রীর নামে ১০ হাজার টাকা মূল্যের নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্র রয়েছে। স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে নিজ নামে ৮৫৬ শতাংশ।
আজমত উল্লার বার্ষিক আয় নয় লাখ টাকা। এর মধ্যে আইন পেশা থেকে তিনি ছয় লাখ ৬০ হাজার টাকা ও সম্মানি ভাতা হিসেবে দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা আয় করেন। এ ছাড়া তাঁর ১৪ লাখ ৮১ হাজার ৭০২ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে নগদ নিজ নামে ৫১ হাজার ৮৬১ টাকা এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ১৪ লাখ ২৯ হাজার ৮৪১ টাকা রয়েছে। তবে তাঁর সম্পদের চেয়ে স্ত্রীর সম্পদ বেশি। তাঁর স্ত্রীর নামে ব্যাংকে ২২ লাখ ৯৮ হাজার ৮৮৩ টাকা ও নগদ এক লাখ ২২ হাজার ৪৪৭ টাকা আছে। স্ত্রীর নামে একটি কার, ৩০ তোলা স্বর্ণ দেখিয়েছেন তিনি।
স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে আজমত উল্লা নিজ নামে ১২৯ দশমিক ২৫ শতাংশ অকৃষি জমি, ৭ শতাংশ জমির ওপর নির্মাণাধীন বাড়ি ও স্ত্রীর নামে ২১৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ অকৃষি জমি এবং টিনসেড মার্কেট দেখিয়েছেন।
জাহাঙ্গীর আলমের বার্ষিক আয় এক কোটি ১৮ লাখ পাঁচ হাজার ৯৫০ টাকা। এর মধ্যে কৃষি খাত থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা, জমি ভাড়া থেকে চার লাখ ৩০ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে ৩৯ লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা, চাকরি সম্মানি ভাতা ৯০ হাজার টাকা ও মৎস্য চাষ থেকে ৭২ লাখ ৬০ হাজার টাকা আয় দেখিয়েছেন।
জাহাঙ্গীরের সম্পদের মধ্যে নিজ নামে নগদ সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা, ব্যাংক আমানত ৪৭ লাখ ৬৩ হাজার ৭৮৭ টাকা, কোম্পানির শেয়ার ২০ লাখ (জেড আলম অ্যাপারেলস), স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ১০ লাখ, নিজ নামে গাড়ি রয়েছে দুটি (মূল্য ২৯ লাখ ও তিন লাখ), স্বর্ণালংকার রয়েছে ৩৫ তোলা, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী এক লাখ ৭৫ হাজার ও দেড় লাখ টাকার আসবাবপত্র রয়েছে। স্থাবর সম্পদের মধ্যে তাঁর নিজ নামে কৃষি জমি (লিজকৃত) রয়েছে ৬ দশমিক ০৬ একর, অকৃষি জমি রয়েছে ৬১১ দশমিক ০৪ শতাংশ, ভাড়া করা মৎস্য খামার আছে একটি।
অন্য চার মেয়র প্রার্থী: অন্য চার প্রার্থীর মধ্যে মেজবাহ উদ্দিন সরকার এসএসসি পাস। তিনি ব্যবসায়ী। ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় এক লাখ ৯৫ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে নিজ নামে নগদ এক লাখ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ৩০ লাখ টাকা, স্ত্রীর নামে ১০০ ভরি স্বর্ণ।
আমান উল্লাহ উচ্চমাধ্যমিক পাস। তিনি পরিবহন ব্যবসায়ী। বার্ষিক আয় বাড়িভাড়া থেকে দুই লাখ ও ব্যবসা থেকে দুই লাখ। অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে ব্যাংকে জমা পাঁচ লাখ টাকা, নিজের একটি পিকআপ ও স্ত্রীর নামে সাত ভরি স্বর্ণ। স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে অকৃষি জমি এক বিঘা ও পাঁচ কাঠার একটি বাড়ি।
নাজিম উদ্দিন আহমেদ পেশায় চিকিৎসক। তিনি বাড়িভাড়া থেকে ছয় লাখ তিন হাজার ৭৫০ টাকা পান। স্ত্রীর নামে ১০ ভরি স্বর্ণ ও নিজ নামে ১০৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ কৃষি ও ৫২ শতাংশ অকৃষি জমি রয়েছে।
মেয়র পদে একমাত্র নারী প্রার্থী রিনা সুলতানা উচ্চমাধ্যমিক পাস। তিনি মুদি ব্যবসায়ী। বার্ষিক আয় বাড়িভাড়া থেকে ৫০ হাজার টাকা ও ব্যবসা থেকে ৫০ হাজার টাকা।

No comments

Powered by Blogger.