দুই শতাধিক শিৰক বদলি, সঙ্কটে জবি by মহিউদ্দিন আহমেদ

 আত্তীকরণ না করায় বদলি হয়ে যাচ্ছেন ৫ বছর ধরে প্রেষণে থাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শতাধিক শিৰক। ফলে ভয়াবহ শিৰক সঙ্কটের মধ্যে পড়তে যাচ্ছে নতুন এই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়টি।
শিৰক সঙ্কটের মুখে আগামী অক্টোবর থেকে এ শিৰা প্রতিষ্ঠানটির শিৰা কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়তে পারে_ এমন আশঙ্কা সংশিস্নষ্টদের। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দাবি করেছেন, এ সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় শিৰক নিয়োগ দিতে পারবেন। কিন্তু সংশিস্নষ্টরা মনে করছেন, এত কম সময়ের মধ্যে শিৰক নিয়োগের জটিল ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষ করে প্রয়োজনীয়সংখ্যক শিৰক নিয়োগ দেয়া সম্ভব নয়।
এদিকে নিজেদের হাতে গড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিৰক হিসেবে আত্তীকরণ হতে না পেরে হতাশ হয়ে পড়েছেন বদলির আতঙ্কে থাকা শিৰকরা। অশ্রম্নসিক্তভাবে বিদায় নিচ্ছেন তাঁরা। বিলুপ্ত জগন্নাথ কলেজের প্রেষণে থাকা ওই ২২৩ শিৰক আগামী ১৯ অক্টোবরের মধ্যে বদলি হয়ে যাচ্ছেন। শূন্য আসন পূরণে আজ পর্যনত্ম জোরালো কোন পদৰেপ নেয়া হয়নি।
২০০৫ সালে বিলুপ্ত জগন্নাথ কলেজ যাত্রা শুরম্ন করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে। তখন পুঁজি ছিল বিলুপ্ত কলেজের ২৮০ শিৰক। পাঁচ বছরের প্রেষণ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে রাখা হয় তাঁদের। এর পর দুই বছর তাঁদের তত্ত্ব্বাবধানে চলে বিশ্ববিদ্যালয়। তখন শুধু বাইরে থেকে নিয়োগ দেয়া হয় একজন উপাচার্য এবং একজন কোষাধ্যৰ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর গত দুই বছরে আরও ১২৭ শিৰক নিয়োগ দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগকৃত ১২৭ এবং প্রেষণের ২২৩ শিৰক মিলে বর্তমানে সাড়ে ৩শ' শিৰক রয়েছেন। এর বিপরীতে শিৰাথর্ী রয়েছে প্রায় ২৭ হাজার। এমনিতে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিৰাথর্ীর তুলনায় শিৰক অনেক কম। এর ওপর আরও ২২৩ শিৰক বদলি হলে শিৰকসংখ্যা দাঁড়াবে মাত্র ১২৭। পর্যাপ্ত শিৰক না থাকায় চার বছর বয়সের শিৰা প্রতিষ্ঠানটি দুই বছরের সেশনজটে পড়েছে। পরীৰার ফল প্রকাশ করতে সময় লাগে সাত থেকে আট মাস। নতুন করে শিৰক সঙ্কট হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা থমকে দাঁড়াবে কি না তার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ইতোমধ্যে বদলি প্রক্রিয়া শুরম্ন হয়ে গেছে। গত কয়েক দিনে ১৬ শিৰক বদলি হয়ে গেছেন। এঁদের বিপরীতে এখন পর্যনত্ম কোন শিৰক নিয়োগ দেয়া হয়নি। বিদায় নেয়ার সময় শিৰাথর্ীদের ধরে কান্নাকাটি করতে দেখা গেছে কয়েক শিৰককে। এভাবে ১৯ অক্টোবরের মধ্যে ধাপে ধাপে বদলি করা হবে ২২৩ শিৰককে। যে সব বিভাগ থেকে শিৰক বদলি হচ্ছে ওই সব বিভাগের তাঁদের কাসগুলো বন্ধ হয়ে আছে। বদলি নিশ্চিত হওয়ায় বাকি শিৰকরা কাস নেয়ার প্রতি অমনোযোগী হয়ে পড়েছেন। তাঁদের মধ্যে একটা আতঙ্ক কাজ করছে। তাঁরা কোথায় বদলি হন_ এ নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন। অনেক শিৰক ঢাকা বা তার আশপাশের সরকারী কলেজে থাকার জন্য তদ্বিরে ব্যসত্ম রয়েছেন। ফলে বদলির আগেও একাডেমিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাঁদের শূন্যস্থান পূরণ করতে ৮৮ শিৰকের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কতর্ৃপৰ ইউজিসিতে আবেদন করেছে। এখন পর্যনত্ম অনুমোদন মেলেনি। চলতি সপ্তাহের মধ্যে অনুমোদন পেতে পারে এমন আভাস পাওয়া গেছে। অনুমোদন পাওয়ার পর দীর্ঘপ্রক্রিয়া শেষ করে স্বল্প সময়ের মধ্যে তা শেষ করতে হবে। তার পর আরও শিৰকের জন্য আবেদন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক সিনিয়র শিৰক বলেছেন, যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় কতর্ৃপৰ জানে এত শিৰক একসঙ্গে চলে যাবেন সেহেতু তাদের আরও আগে থেকে শিৰক নিয়োগের প্রস্তুতি নেয়া উচিত ছিল। এখন এত অল্প সময়ে ২২৩ শিৰক নিয়োগ দেয়া কঠিন হয়ে যাবে। কারণ, শিৰক নিয়োগ দিতে হলে ইউজিসির অনুমোদন লাগবে। অনুমোদনে সময় লাগে।
২০০৫ সালে বিলুপ্ত জগন্নাথ কলেজ যখন বিশ্ববিদ্যালয় হয় তখন বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ৫৬-২-(ছ) ধারায় বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ৫ বছর পর্যনত্ম বিলুপ্ত জগন্নাথ কলেজে চাকরিরত সব শিৰক প্রেষণে চাকরি করতে পারবেন। ওই ধারা অনুযায়ী গত পাঁচ বছর সব শিৰক দায়িত্ব পালন করেন। বিশ্ববিদ্যালযের শিৰক হিসেবে আত্তীকরণের জন্য গত চার বছর তাঁরা বহু আন্দোলন এবং দেনদরবার করেন। কিন্তু কোন কাজে আসেনি। কারণ, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে চাকরির মেয়াদ শেষ এমন কয়েক শিৰক তৎকালীন প্রশাসনকে বোঝান, প্রেষণে থাকা শিৰকদের বেশিরভাগ আওয়ামী লীগপন্থী। তাঁদের আত্তীকরণ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামীপন্থী প্যানেল শক্তিশালী হয়ে যাবে। এ কারণে তৎকালীন প্রশাসন প্রেষণের শিৰকদের আত্তীকরণ করেনি। এখন আবার আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর এ ঘরানার গুটিকয়েক শিৰক বর্তমান প্রশাসনকে বলেন, প্রেষণে থাকা শিৰকদের বৃহৎ অংশ বিএনপি-জামায়তপন্থী। এ সব শিৰককে আত্তীকরণ করলে বিশ্ববিদ্যালয়টি বিএনপি-জামায়াতের দখলে চলে যাবে। যে জন্য এই সরকারেরও সুদৃষ্টি পড়েনি এ সব শিৰকের প্রতি। যার ফলে শেষ পর্যনত্ম নিজেদের শ্রমে-ঘামে গড়ে ওঠা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভারাক্রানত্ম হৃদয় নিয়ে বিদায় নিতে হচ্ছে তাঁদের। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর টানা দুই বছর তাঁরা সব শিৰা কার্যক্রম চালিয়েছেন। এক শিৰক দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের হাতে গড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ আমরা অযোগ্য হয়ে পড়েছি। আরেক শিৰক ৰোভ প্রকাশ করে বলেন, শিৰক নামের কিছু দালাল একবার আমাদের আওয়ামী লীগপন্থী বানিয়েছে। এবার আবার বিএনপিপন্থী বানিয়েছে। তাদের কারণে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিৰক হিসেবে আত্তীকরণ হতে পারিনি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী তাঁদেও প্রেষণের মেয়াদ শেষ। তাঁদের রাখার ৰমতা আমার নেই। তাঁরা চলে গেলে ওই সব শূন্য আসনে শিৰক নিয়োগ দিয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম গতিশীল রাখতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।

No comments

Powered by Blogger.