ওষুধের দাম আরেক দফা বেড়েছে, নেই কোন নীতি- ব্যবসায়ীদের হাতে জনগণ জিম্মি by নিখিল মানখিন

 আরেক দফা বেড়েছে ওষুধের দাম। দেশের ওষুধের মূল্য ও গুণগত মান নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। নেই কার্যকর ওষুধনীতি। ওষুধ কোম্পানি ও অসাধু ওষুধ ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে জনগণ। ওষুধের মূল্য এক লাফে দু’ থেকে তিনগুণ বেড়ে গেছে।
দেশের ২৬৭টি ওষুধ কোম্পানির মধ্যে মাত্র ৩০ থেকে ৪০টি কোম্পানি মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদন করে। অত্যাবশকীয় ওষুধের অর্ধেকটাই উৎপাদন হয় না। আর থানা পর্যায়ে অত্যাবশকীয় ওষুধের মাত্র ৫০ ভাগ পাওয়া যায়। ওষুধের দাম সম্পর্কে অসচেনতা ও ধারণার অভাবে বিক্রেতার দাবিকৃত দামেই ওষুধ ক্রয় করে থাকেন অনেক ক্রেতা। সরেজমিন ঘুরে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
দেশে যুগোপযোগী ওষুধনীতি নেই। অসহায় দরিদ্র মানুষের জন্য সুলভ মূল্যে গুণগতমানসম্পন্ন ওষুধপ্রাপ্তি নিশ্চিত হয়নি। যেসব ওষুধের দাম বেড়েছে, তার সবগুলোই অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ। কোন কোন ওষুধের দাম বৃদ্ধি অনেকটাই অলৌকিক মনে হয়। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ২ টাকা দামের হিস্টাসিন ট্যাবলেটের দাম ৩ টাকা বাড়িয়ে ৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ২ টাকার রিবোফ্লেবিন ৫ টাকায়, ২ টাকার রিবোসন ৫ টাকায় বিক্রি হয়। এই তিনটি ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধি ১৫০ শতাংশ। ১১৭টি অত্যাবশকীয় ওষুধের তালিকাভুক্ত সালবিউটামল গ্রুপের ব্রডিল, সালটলিন, ভেনটলিনের দাম ১৬ থেকে ২৩ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। এখানে মূল্যবৃদ্ধি প্রায় ৫০ শতাংশ। এন্টাসিড সিরাপের দাম ৩২ টাকা থেকে একলাফে ৬৪ টাকা করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বাজারে এন্টাসিড সিরাপ ৭৫ টাকা ও ট্যাবলেট ১০টির পাতা ২০ টাকা খুচরা দরে বিক্রি হচ্ছে। এভাবে প্রতিটি কোম্পানির ওষুধের দাম হু হু করে বেড়ে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে ওষুধ কোম্পানি ও খুচরা বিক্রেতারা পরস্পরকে দোষারোপ করেই রেহাই পেয়ে যাচ্ছেন। ডলার, কাঁচামাল ও বেতন-ভাতা বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে কোম্পানিগুলোর ওষুধের দাম ১৫০ শতাংশ বৃদ্ধি যুক্তিসঙ্গত ও ন্যায়সঙ্গত নয়। এসব নিয়ন্ত্রণে সরকার বিশেষ করে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের দায়িত্বপালন সন্তোষজনক নয়।
সরেজমিন ঘুরে আরও জানা গেছে, সারাদেশেই ওষুধের দাম নিয়ে চলছে এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা। মফস্বল এলাকাগুলোতে আরও ভয়ঙ্কর চিত্র দেখা গেছে। অশিক্ষিত ও ওষুধ সম্পর্কে অনভিজ্ঞ সাধারণ মাুনষের পক্ষে করার কিছুই থাকে না। এভাবে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এক বাক্সে ওরস্যালাইনের পরিমাণ (২০ প্যাকেট)। যার পাইকারি মূল্য ৬৮ টাকা ৮০ পয়সা। বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। গ্যাসট্রিকের জন্য অতি পরিচিত পেন্টোপ্লাজল ১০ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। ইসোমিপ্লাজল ৪ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫ টাকা। সিভিট ট্যাবলেট পাতায় ৮ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৩ টাকা। ডায়াবেটিস রোগের জন্য চাহিদা সম্পন্ন ট্যাবলেট মেটফরমিন ট্যাবলেট ২০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩০ টাকা। শিশুদের প্যারাসিটামল সিরাপ ১২ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২০ টাকা। স্যানিটারি ন্যাপকিন ৭৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৯৫ টাকা। ওরাল সলিউশন প্রেডনিসোলন এবং জন্ম বিরতি করণ সামগ্রী মারভেলন ৭৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৮০ টাকা,লাইনেজ ৯০ টাকা থেকে ৯৯ টাকা। বি-৫০-ফোর্ট ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ৩৯ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১০০ টাকা। প্রস্রাবের ইনফেকশনেসর জন্য ব্যবহৃত অফুরান এস প্রতি ট্যাবলেট বিক্রি হয় ২০ টাকায়।
নাপা এক পাতা ৮ টাকা, জিংক সিরাপ ৩০ টাকা ও এন্টাসিড এক পাতা ৬ টাকা। ফার্মগেটের হক ফার্মেসী, ফার্গনেন্স ও আকবর মেডিক্যাল হলে নাপা একপাতার দাম ৮ টাকা, জিংক সিরাপ ২৮ টাকা, এডোভাস সিরাপ ৩৮ টাকা। মোহম্মদপুরের আহমেদ ফার্মেসী, হলি ও তনিমা ফার্মেসিতে জিংক সিরাপ ৩০ টাকা, এডোভাস সিরাপ ৪০ টাকা, নাপা এক পাতা ৯ টাকা ও ডায়াবিনল এক পাতা ৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। ঢাকার বাজারঘুরে দেখা গেছে, সাধারণ বাজারের চেয়ে হাসপাতালের পাশের দোকান ও মার্কেটগুলোতে ওষুধের দাম বেশি। এসএমসির ওরস্যালাইন এক বাক্স (২০ প্যাকেট) মূল্য ৬৮ টাকা ৮০ পয়সা লেখা আছে। কিন্তু এ স্যালাইন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন মার্কেট শাহবাগ ও ওষুধের আড়ত হিসেবে পরিচিত মিটফোর্ড মার্কেটে নেয়া হচ্ছে ৭৫ টাকা করে।
বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের কাশির ওষুধ টোফেন (১ মি.গ্রা.) ট্যাবলেট প্রতিটি ১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বেড়ে ২ টাকা টোফেন সিরাপ (১০০ মি.লি.) ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৪৫ টাকা হয়েছে। ফ্রেনজিট ট্যাবলেট (০.৫ মি.গ্রা.) ৫০ পয়সা, প্রোসান (৫০ মি.গ্রা.) ২ টাকা, প্রোসান এইচ জেড দুই টাকা, এ্যামডোকল প্লাস (৫০ মি.গ্রা.) ১ টাকা ৫০ পয়সা, এ্যামডোকল (৫০ মি.গ্রা.) ১ টাকা করে বেড়েছে।
স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সেফট্রোন (এক গ্রাম/ভায়াল) এ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন ৩০ টাকা, সেফট্রোন (৫০০ মি.গ্রা.) ও (২৫০ মি.গ্রা.) ইনজেকশন ১০ টাকা করে বেড়েছে। ফ্লেক্সি ১০০ এমজি ট্যাবলেটপ্রতি এক টাকা, ক্যামলোডিন ৫০ প্লাস ট্যাবলেটপ্রতি এক টাকা ৫০ পয়সা, অফকপ সিরাপ ১০০ এমএল পাঁচ টাকা, মিউকোস্পেল ১০০ মিলি সিরাপপ্রতি ১০ টাকা, তুসকা ১০০ মি.লি. সিরাপ ৫ টাকা ও মালটিভিট প্লাস (৩০টি) প্রতি বোতল ১০ টাকা করে বেড়েছে। ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ডাইসোপিন ইনজেকশন (এক গ্রাম) ১৬০ টাকা থেকে বেড়ে ১৯০ টাকা, একই ইনজেকশন ২৫০ মি.গ্রা. ও ৫০০ মি.গ্রা. ১০ টাকা করে বেড়েছে।
রেনেটা লিমিটেডের ট্যাবলেট আলফা প্রেস এক ও দুই মি.গ্রা. এক টাকা করে বেড়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি এ্যালজিন ইনজেকশন পাঁচ মি.গ্রা. পাঁচ টাকা, প্রতিটি ক্রিপটিন ২.৫ মিলি গ্রামের ট্যাবলেট ১০ টাকা ৪ পয়সা থেকে বেড়ে ১২ টাকায়, ক্যালসিন ৫০০ এমজি প্রতি ট্যাবলেট ৯০ পয়সা, বিগমেট ৫০০ এমজি ৫০ পয়সা, প্রোটেনিল ২০ এমজি ও ৪০ এমজি এক টাকা করে বেড়েছে।

No comments

Powered by Blogger.