প্রাণের জোয়ার_প্রথম দিনেই জমজমাট- বইমেলা প্রতিদিন

সেই চিরচেনা দৃশ্য প্রথম দিন থেকেই। অমর একুশের বইমেলা যে শুরম্ন হয়েছে, তা বোঝা যায় এখানে এলেই। প্রাণের উচ্ছলতায় মুখরিত বইমেলাসহ পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা।
ভাষার মাস ফেব্রম্নয়ারি যে এসেছে তা এখানকার পরিবেশেই স্পষ্ট। ভাষা শহীদদের আন্দোলনের সচিত্র ব্যানার ও সেই সময়কার পত্রিকার কাটিং নিয়ে তৈরি বড় একাধিক গেট, তাঁদের(ভাষা শহীদ) প্রতিকৃতির বিশাল ব্যানার আর তাতে ভাষার মর্যাদা নিয়ে লেখা কবি, সাহিত্যিক ও গুণী ব্যক্তিত্বদের বাণী, দোয়েল চত্বর-টিএসসি সড়ক দ্বীপের ডিভাইডারে বসে তরম্নণ-তরম্নণীর আড্ডা, পুরো সড়কেই বাদামের খোসা, ঝাল মুড়ির কাগজের টুকরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা, সবই আবার স্মরণ করিয়ে দেয় সেই চেনা দৃশ্যকে। মেলার প্রথম দিনে পাঠক-দর্শনার্থীদের উপস্থিতিও ছিল বেশ আশান্বিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেলা উদ্বোধন করতে আসেন বেলা তিনটায়। বইমেলা ও ভাষা আন্দোলন জাদুঘর উদ্বোধন করে এবং মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে প্রধানমন্ত্রী চলে যান সাড়ে চারটার পরে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কারণে মেলা প্রাঙ্গণে ঢুকতে না পেরে পাঠক ও দর্শনার্থীদের দীর্ঘ লাইন পড়ে যায় বাইরে। বাংলা একাডেমীর প্রবেশদ্বার থেকে এ লাইন আণবিক শক্তি কমিশনের গেট ছাড়িয়ে টিএসসির দিক পর্যনত্ম চলে গিয়েছিল। ভাষার মাস এলেই যে বাঙালীর উচ্ছ্বাস বেড়ে যায় তা পাঠক, দর্শনার্থীর উপস্থিতিই বলে দেয়।
প্রধানমন্ত্রী এদিন বর্ধমান হাউসে ভাষা আন্দোলন জাদুঘরেরও উদ্বোধন করেন। চার রম্নমের এই জাদুঘরে '৪৮ থেকে '৫৪ পর্যনত্ম ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস উঠে এসেছে। এতে রয়েছে ভাষা শহীদ শফিউরের পরনের কোট ও ব্যবহারের চটের ব্যাগ। আরও আছে ভাষা আন্দোলনের পেপার কাটিং, মধ্যযুগের ভাষার বর্ণমালা ইত্যাদি।
বইমেলার প্রথম দিন ছিল সোমবার। তাই এদিন কোন কবি, সাহিত্যিককে দেখা যায়নি। অধিকাংশ স্টল বসলেও এখনও গুছিয়ে নিতে পারেনি। কিছু স্টল তো তাদের ঝাঁপই এখনও খোলেনি। সন্ধ্যার পরেও অনেককে দেখা গেছে বইপত্র আনতে ও গোছাতে। মেলার প্রথম দিনেই অধিকাংশ স্টল নতুন বই এনেছে, তবে কতগুলো বই এসেছে প্রথম দিন বিধায় বাংলা একাডেমী সে হিসাব দিতে পারেনি। ৫০ টির উপরে তো হবেই। মেলা ঘুরে যতটুকু জানা গেছে, এর মধ্যে দিব্যপ্রকাশ এনেছে ৮টি, আগামী প্রকাশনী ৬টি, অন্যপ্রকাশ ৬টি, ঐতিহ্য ২টি, পালকের একটি উলেস্নখযোগ্য। পালক এনেছে সাংবাদিক কাওসার রহমান ও রিয়াজ আহমেদ সম্পাদিত স্টেট অব এ্যাগ্রিকালচার ইন বাংলাদেশ সিকিউরড ফুড সিকিউরড ফিউচার। আগামীর মিজানুর রহমান খানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যাবস্থা :এক অশনি সংকেত, রম্নহুল আমীনের মধুমতির মুখোমুখি, একে রায়ের জাজ আর দ্য প্রিজনারস অব ল উলেস্নখযোগ্য। দিব্যপ্রকাশ কবীর চৌধুরী অনূদিত ওরহান পামুকের নির্বাচিত পামুক, মুহম্মদ জাফর ইকবালের মহব্বত আলীর একদিন, মোসত্মফা কামালের এই পারমিতা ও চেনা বন্ধু অচেনা পথ, মোহিত কামালের আগুন কয়লায় পোড়া জীবন উলেস্নখযোগ্য। ঐতিহ্য এনেছে এমএ তাহেরের বাংলাদেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায় এবং আবদুশ শাকুরের রচনাবলী-১।
প্রধানমন্ত্রী আসার কারণে মেলার প্রথম দিন প্রচুর পানি ছিটানো হয়েছে। তার পরও দর্শনার্থীর সংখ্যা এত বেশি ছিল যে, মেলার কোথাও কোথাও ধুলাবালি উড়তে দেখা গেছে। আবার কোথাও কোথাও কাদা-জলের মাখামাখিও দেখা গেছে। মেলার প্রথম দিন প্রসঙ্গে আগামী প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ওসমান গনি বলেন, একুশে মেলার বৈশিষ্ট্যই হলো প্রথম দিন থেকেই জমজমাট হয়ে ওঠা। এবারও তাই ঘটেছে। মানুষের যে জোয়ার নেমে আসে এখানে, তা ফেব্রম্নয়ারির আবেগ থেকেই আসে। প্রথম দিন হিসেবে বেচা-বিক্রিও খুব খারাপ হয়নি। তার ওপর স্বাধীনতার পৰের শক্তি এখন ৰমতায়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়াও শুরম্ন হচ্ছে, এবার তো অন্যবারের চেয়ে বেশি ঢল নামবে মানুষের। এবার তার ৬০ টি প্রকাশনা আসছে বলেও তিনি জানান। এর মধ্যে রাজনৈতিক বইও রয়েছে।
এদিকে লিটল ম্যাগাজিন স্টলওয়ালাদের সঙ্গে বাংলা একাডেমী কতর্ৃপৰের মতদ্বৈততা দেখা দেয়ায় লিটল ম্যাগাজিন কর্নারে তাঁরা না বসে একাট প্রতিবাদী ব্যানার টাঙ্গিয়ে দিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.