মিতুলের নতুন পৃথিবী

এ যেন এক নতুন পৃথিবী। এখানে সবই অচেনা মনে হয়। নতুন এপার্টমেন্টে এসে মিতুলের মন আর টেকে না। তাই বাবা মা অফিসে যাবার পর পরই মিতুলও স্কুলের উদ্দেশে রওনা দিল। আজ একটু সকালেই স্কুলে আসা হলো।
শুধু দিপু এসেছে। দিপু জিজ্ঞেস করল, এই মিতুল তোরা নাকি নতুন বাসায় উঠেছিস ? মিতুল তখন হাত পা নাচিয়ে বলা শুরম্ন করল জানিস আমাদের ১২ তলার ছাদ থেকে আইডিবি ভবন, আবহাওয়া অফিসের গোল বলটাও দেখা যায়। আগের বাসায় লিফট ছিল না। এখানে দু'দুটো লিফট। লিফটে উঠতে নামতে খুব মজা, তবুও ভাল লাগে নারে, পুরনো বন্ধুদের কথা খুব মনে পড়ে। দিপু মিতুলের কথা শুনে ফিক করে হেসে ফেলল। মিতুলের উৎসাহ দেখে বলল আচ্ছা তোদের বাসায় নিয়ে যাস একদিন।
মিতুলের বাসা থেকে স্কুল বেশি দূরে নয়। সে নতুন ইংরেজি মিডিয়ামে ভর্তি হয়েছে। ওদের ফ্যাটে সামান্না, পিংকি, আমান্ডা, বিমি, মিমি, মুন, সুদণিা_ সবাই ধানম-ির এই ইংরেজি মিডিয়ামে পড়ে। ওরা এইখানে এসেছে মাত্র কয়েক মাস। এরই মধ্যে সবার সাথে মিতুলের ভাব হয়ে গেছে। সকাল হতেই পিংকি, রিমি, মিমি সবাই স্কুলের দিকে রওনা হয়।
মিতুলের মা বাবা দু'জনেই সরকারী কর্মকর্তা। সবাই সারাদিন ব্যসত্ম থাকে। মামনি সারাদিন অফিসে থাকে। বুয়াও কাজ করে সকাল সকাল চলে যায়। তাই মিতুলকে বাসায় সারাদিন একাই থাকতে হয়। মিতুল এই ফ্যাট থেকে অন্য ফ্যাটে যায়। একা একা বাসায় তার একটুও ভাল লাগে না। মিতুল দেখল ওদের বন্ধুদের মধ্যে শুধু ওর মা-ই চাকরি করে, আর সবার মামণি সারাদিন বাসায় থাকেন। রাহুলের বাসায় যেতেই ওর মা ওর মাথার চুলে হাত বুলিয়ে বললেন, কেমন আছ মিতুল ? এসো ভিতরে এসো। মিতুল বলল, রাহুল কোথায় আন্টি? বলতেই ভিতর থেকে রাহুল লাফাতে লাফাতে ছুটে এলো। হাতে একটা ঢাউস খেলনা গাড়ি।
কিছুণ পর মিতুল দেখল, রাহুলের মা ঠক ঠক করে চামচ দিয়ে নাড়তে নাড়তে এক গস্নাস হরলিক্স নিয়ে এলেন। রাহুল ঢক ঢক করে এক চুমুকে পুরো হরলিক্স শেষ করে ফেলল। মিতুল ভাবল, ওর মা যে কখন অফিস থেকে ফিরবেন। কিছুণ পর রাহুলদের বাসায় পাশের বাসার মিতিনের মা বেড়াতে এলেন। এসেই হেসে হেসে বললেন, ভাবি কেমন আছেন? আজ আপনার ভাই বাজার থেকে টাটকা ইয়া বড় জোড়া ইলিশ মাছ নিয়ে এসেছেন। তাই নতুন একটা আইটেম বানিয়েছি বুঝলেন ভাবি? টিভি থেকে রেসিপি দেখে ইলিশ পাতুির বানিয়েছি। ভাবলাম, যাই এই সুযোগে ভাবির সাথেও একটু গল্পগুজব করে আসি। দেখুন তো, ভাবি নতুন আইটেমটা কেমন হয়েছে?
রাহুলের মা উৎসাহিত হয়ে বললেন_ তাই নাকি, তারপর দেখি দেখি বলেই টিফিনবাটি খুলে আঙ্গুল দিয়ে সাথে সাথেই চেখে দেখে নিলেন, উফ্ খুব মজা হয়েছে।
তাই নাকি নিন ভাবি এই বাটির তরকারিটা আপনার জন্য। আন্টি বললেন।
কিছুণ পর মিতুল দেখল, রাহুলের মা ওদের কাসের অদিতির মায়ের সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে এসে রাহুলকে টেনে নিয়ে গেলেন। বললেন এই রাহুল, তোমার কাশ টেস্টের খাতাগুলো দাও তো ? ফোনে বিশাখার আম্মুর সাথে মিলিয়ে নিই ঠিকঠাক মতো তুলেছ নাকি ? বলেই ফোনে কথা বলতে বলতে পাশের ঘরে চলে গেলেন, বুঝলেন ভাবি, রাহুলটা না যে কি ? পড়াশোনায় একদম মন নেই_ আচ্ছা বলুন তো কাসে আর কি কি পড়িয়েছে ? আমি সব নোট করে নিচ্ছি। মনে হচ্ছে রাহুলের পরীা না, ওর মারই পরীা।
মিতুল দেখল বেলা হয়ে যাচ্ছে। রাহুলকে বলল, আমি এবার যাই রে, মামণি বোধ হয় চলে এসেছেন। এই বলে মিতুল বাড়ির পথে পা বাড়াল আর ভাবতে লাগল প্রথম প্রথম এখানে এসে সুন্দর এ্যাপার্টমেন্ট দেখে মিতুলের যেমন ভাল লেগেছিল এখন আর কেন যেন ভাল লাগছে না? এখানে সবাই বড় অদ্ভুত? সবাই যেন কৃত্রিমতার খোলসে আবৃত।
ঘরে এসে ও সামনের এক চিলতে বারান্দায় দাড়িয়ে দু'হাত বাড়িয়ে দিল আকাশের দিকে। কিন্তু সুউচ্চ ভবনগুলোর আড়ালে দিগনত্ম বিসত্মৃত আকাশ দেখতে পেল না মিতুল। চিৎকার করে বলতে চাইল, মা তুমি এখনও আসছ না কেন ? চল, আজকে আমার পুরনো বন্ধুদের কাছে যাই। কিন্তু কিছুই বলা হলো না। মিতুল একাই দাঁড়িয়ে রইল বারান্দায়।

No comments

Powered by Blogger.