ভূমি অফিসের দুর্নীতি-দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হোক

রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে সরকার বিভিন্ন সময় জমি হুকুমদখল করে। সেই জমি চিহ্নিত করা থেকে জমির জন্য নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করা হয় ভূমি হুকুমদখল অফিসের মাধ্যমে। কিন্তু এই দপ্তরের দুর্নীতি ও মানুষকে হয়রানির অভিযোগের শেষ নেই। মানুষের ভোগান্তি এবং তাদের দুর্নীতি নিয়ে প্রায়ই পত্রিকান্তরে সংবাদও প্রকাশিত হয়; কিন্তু দুর্নীতি ও সাধারণ


মানুষের ওপর হয়রানির কারণে দুর্নীতিবাজদের শাস্তি হওয়ার সংবাদ পাওয়া যায় না। যে কারণে দুর্নীতি বন্ধ হয় না। তাই সুযোগ পেলেই সংশ্লিষ্টরা ঘুষ-দুর্নীতির সুযোগ ব্যবহার করে পুরোদমে। যদিও ভূমি হুকুমদখল অফিসই একমাত্র দুর্নীতিপরায়ণ অফিস নয়। কিংবা এই দপ্তরের সব কর্মীই দুর্নীতিবাজ নয়। এমন দুর্নীতি ও ঘুষের অভিযোগ সরকারি সব বিভাগ ও অফিসের ক্ষেত্রেই রয়েছে কিন্তু ভূমি হুকুমদখল অফিসের দুর্নীতি বহু মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে।
হুকুমদখল প্রক্রিয়ায় জমির মালিককে জমি হাতছাড়া করতে হয় ইচ্ছার বিরুদ্ধে। তার পরও সরকারি দপ্তরের কারণে নিরীহ গ্রামবাসীর কাছে এই কাজটি হয়ে ওঠে আতঙ্কজনক। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জমির মালিক গ্রামের নিরীহ মানুষ হওয়ার কারণে তারা হয়রানি ভোগ করার পরও চুপ করে থাকে। হয়রানি থেকে বাঁচার জন্য তারা ভূমি হুকুমদখল অফিসের কর্মচারী-কর্মকর্তাদের উৎকোচ প্রদানের মাধ্যমে জমির মূল্য নিয়ে থাকে।
ভূমি হুকুমদখল অফিস কিভাবে দুর্নীতি ও সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে থাকে তার একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে কালের কণ্ঠে, রবিবার। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ককে চারলেনবিশিষ্ট করার উদ্যোগ হিসেবে জমি হুকুমদখল করা হয় সম্প্রতি। সেই জমির মালিকদের নির্দিষ্ট টাকা পরিশোধ করার জন্য ময়মনসিংহ জেলা শহরে অবস্থিত ভূমি হুকুমদখল অফিসটির দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে সেখানে। জমির মালিক ১৫ লাখ ১৭ হাজার টাকা মূল্য নিতে গিয়ে অফিসকে দুই লাখ টাকা ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছেন। এমন তথ্য প্রমাণ করে ভুক্তভোগীদের দুর্ভোগ কতটা হতে পারে। ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায় না বলে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে বলা হয়। শত শত মানুষকে এভাবে দুর্ভোগে ফেলা হচ্ছে প্রকাশ্যেই এবং দীর্ঘদিন ধরে। সরকারের কোনো বিভাগ কিংবা দপ্তরই কী নেই যারা দুর্নীতির আখড়াগুলো তদারকি করতে পারে? প্রকাশ্যে যখন এই অনাচার চলে তখন সরকার স্বপ্রণোদিত হয়েও দুর্নীতিবাজদের নির্মূল করার উদ্যোগ নিতে পারে। বৃহত্তর জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করে প্রকাশিত সংবাদগুলোকেও সূত্র হিসেবে কাজে লাগাতে পারে সরকার। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সেসব সত্য বেরিয়ে আসবে। প্রকৃত দোষীদের শাস্তিবিধান করার মাধ্যমে দুরবস্থার অবসান ঘটানো সম্ভব হবে।

No comments

Powered by Blogger.