হরতালে গাড়ি পোড়ানোর মামলা১৬ মের মধ্যে আত্মসমর্পণের সুযোগ জোটের নেতাদের

হরতালে গাড়ি পোড়ানোর মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ১৮ দলীয় জোটের নেতাদের ১৬ মের মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলেছেন হাইকোর্ট। গতকাল রোববার বিচারপতি মোহাম্মদ আনোয়ার উল হকের একক বেঞ্চ এই আদেশ দেন।


আদেশের ব্যাপারে জানতে চাইলে জামিনপ্রার্থীদের নেতাদের আইনজীবী মওদুদ আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, আদালত বলেছেন, আবেদনকারীকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের জন্য সুযোগ দেওয়া উচিত। আদেশের অনুলিপি নিয়ে ১৬ মের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে বলেছেন। এর মানে, এ সময় পর্যন্ত তাঁরা মুক্ত। এর মধ্যে সরকার তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে না।
আর অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান বলেছেন, মামলার অভিযোগপত্র দাখিল হওয়ায় আগাম জামিনের সুযোগ নেই বলে আদালত ১৬ মের মধ্যে তাঁদের আত্মসমর্পণ করতে বলেছেন। এ ছাড়া হরতালের দিন সচিবালয়ে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় শাহবাগ থানায় করা মামলায় বিরোধী দলের নেতাদের জামিনের বিষয়ে গতকাল একই বেঞ্চে শুনানি হয়। তবে শুনানি শেষ হয়নি। আজ সকালে আবারও শুনানি হওয়ার কথা।
গতকাল বেলা আড়াইটার আগে একে একে জামিনপ্রার্থীরা আদালতকক্ষে প্রবেশ করেন। শুনানিকালে বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এম কে আনোয়ার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আ স ম হান্নান শাহ, সাদেক হোসেন খোকা, আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, ফজলুল হক, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী, নাজিমউদ্দিন আলম, যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, এলডিপির সভাপতি অলি আহমদ, বিজেপির সভাপতি আন্দালিব রহমান, জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধানসহ অন্যরা হাজির ছিলেন।
শুনানিতে মওদুদ আহমদ বলেন, অভিযোগপত্র ও এজাহারের অভিযোগ একই ধরনের। এর আগে দ্বৈত বেঞ্চে বিভক্ত আদেশ হয়। তৃতীয় বিচারপতি স্বাধীন।
তখন আদালত জানতে চান, আবেদনকারী কতজন? জবাবে মওদুদ আহমদ বলেন, পৃথক আবেদন করা হয়েছে। আদালত বলেন, দেখা যাচ্ছে ৩২ জন। মওদুদ বলেন, হতে পারে। কেউ জেলে আছেন, কেউ দরখাস্ত করেননি।
মওদুদ আহমদ বলেন, মামলার এফআইআরে অসংগতি রয়েছে। রাজনৈতিক হয়রানি করে বিরোধী দলকে কীভাবে থামানো যায়, সে জন্য মামলা করা হয়েছে। তিনি বিএনপির কামরুজ্জামান রতন ও মহিলা দলের নেত্রী ডলিকে রিমান্ডে নেওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, তাঁদের রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হতে পারে। পুলিশ প্রতিবেদন দিয়েছে, এর গ্রহণযোগ্যতার শুনানির জন্য ২১ মে দিন ধার্য রাখা হয়েছে। ওই দিন যেন তাঁরা আত্মসমর্পণ করতে পারেন, সে সুযোগ দেন।
এরপর অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য তুলে ধরেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক জহির।
এ সময় জামিনপ্রার্থীদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, রফিকুল ইসলাম মিয়া, জমিরউদ্দিন সরকার, নিতাই রায় চৌধুরী, জয়নুল আবেদীন, মাহবুবউদ্দিন খোকন, এম বদরুদ্দোজা, রুহুল কুদ্দুস কাজল, নাসিরউদ্দিন অসীম, রাগিব রউফ চৌধুরী, এ কে এম এহসানুর রহমানসহ বিএনপি-সমর্থক শতাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
গত ২৯ এপ্রিল হরতালের দিন বিকেলে সচিবালয়ে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় শাহবাগ থানায় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কাছে গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় তেজগাঁও থানায় পুলিশ দুটি মামলা করেছে। মামলায় বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের আসামি করা হয়। তাঁরা আগাম জামিনের জন্য হাইকোর্টে আবেদন করলে ৭ মে হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ বিভক্ত আদেশ দেন। বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল না করা পর্যন্ত জামিনপ্রার্থীদের জামিন মঞ্জুর করেন ও রুল জারি করেন। অপর বিচারপতি এসব নেতাকে এক সপ্তাহের মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়ে এ সময়ের মধ্যে তাঁদের গ্রেপ্তার বা হয়রানি না করতে বলেন।
বিভক্ত আদেশের পর বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন ১০ মে বিচারপতি মোহাম্মদ আনোয়ার উল হককে দায়িত্ব দেন। ওই দিনই গাড়ি পোড়ানোর মামলায় ১৮ দলীয় জোটের বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতাসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

No comments

Powered by Blogger.