বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের অনুষ্ঠানটি ছিল রূপসী বাংলা হোটেলে-‘অজ্ঞাত’ নির্দেশে খালেদা জিয়ার অনুষ্ঠান বাতিল

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান করতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করা হয়েছে। রাজধানীর রূপসী বাংলা হোটেলে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে এ অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। সোমবার রাত ১১টার দিকে রূপসী বাংলা হোটেলের এক কর্মকর্তা আয়োজক সংগঠন ‘জি-৯’-এর সভাপতির মুঠোফোনে খুদে বার্তার মাধ্যমে জানিয়ে দেন, অনুষ্ঠানটি হোটেল কর্তৃপক্ষ বাতিল করেছে। জি-৯ হচ্ছে বিএনপির একটি গবেষণা সংগঠন।


জি-৯-এর সভাপতি সাইফুল ইসলামকে পাঠানো খুদে বার্তায় রূপসী বাংলার ক্যাটারিং সেলস এক্সিকিউটিভ মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘স্যার, কয়েক মিনিট আগে মোবাইল ফোনে আমি আপনাকে বলেছি যে আমরা আপনাদের অনুষ্ঠানটি আয়োজন করতে পারছি না। ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্স ডিপার্টমেন্ট অব বাংলাদেশ থেকে নির্দেশিত হয়ে আপনাকে এটা অবহিত করছি। আমরা এ জন্য দুঃখিত।’
আয়োজক সংগঠনটি জানায়, অনুষ্ঠানটির জন্য প্রথমে সোনারগাঁও হোটেলের বলরুম ভাড়া নেওয়া হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচি থাকায় কর্তৃপক্ষ ১৮ মার্চ তা বাতিল করে। এরপর রূপসী বাংলা হোটেলের বলরুম ভাড়া করা হয়। এবারও ‘অজ্ঞাত’ নির্দেশের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি বাতিল করা হলো।
বিএনপি এ ঘটনার জন্য সরকারকে দায়ী করে বলেছে, এ ধরনের অগণতান্ত্রিক কাজের পরিণাম ভালো হবে না।
সরকারি দল ও হোটেল সূত্রে কথা বলে জানা যায়, রূপসী বাংলা হোটেলে অনেক বিদেশি মেহমান উঠেছেন। এ অবস্থায় সেখানে কোনো দলীয় কর্মসূচি হলে তাঁদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। সেই আশঙ্কায় বিএনপিকে অনুষ্ঠানটি করতে দেওয়া হয়নি।
যোগাযোগ করা হলে রূপসী বাংলার জনসংযোগ শাখা থেকে বলা হয়েছে, এ ব্যাপারে শুধু ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলতে পারবেন। তবে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের কোনো ফোন নম্বর বা ঠিকানা তিনি দিতে চাননি। ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে চেষ্টা করেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
গ্রুপ নাইন বা জি-৯-এর প্রতিষ্ঠাতা সাংবাদিক শফিক রেহমান। সংগঠনটির পক্ষ থেকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার জীবন ও কর্ম নিয়ে পাঁচটি বই প্রকাশ করা হচ্ছে।
বইগুলোর লেখক ও সম্পাদক শফিক রেহমান। গতকাল বিকেলে খালেদা জিয়ার এই বইগুলোর মোড়ক উন্মোচনের কথা ছিল। বইগুলো হচ্ছে: রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমান ও সংগ্রামী নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া শীর্ষক দুটি বাংলা ও দুটি ইংরেজি বই এবং অপরটি হলো পলোগ্রাউন্ড লুণ্ঠন।
গতকাল দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ ঘটনার নিন্দা জানান। তিনি বলেন, সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। তারা সমালোচনা সহ্য করতে পারে না। সেই ক্ষমতাও তাদের নেই।
মির্জা ফখরুল প্রশ্ন করেন, সরকার কারা চালাচ্ছে? গোয়েন্দারা কি সরকার চালাচ্ছে? সরকারের উপদেষ্টা এখন অনেক। এঁরা এ দেশের প্রধানমন্ত্রীর, নাকি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তিনি বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল এই সরকার চালাচ্ছে না। অরাজনৈতিক ব্যক্তিরা সরকার চালাচ্ছে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, কোন উচ্চপর্যায়ের কর্তৃপক্ষ ও গোয়েন্দা সংস্থার নির্দেশে কর্মসূচি বাতিল করা হলো?
জি-৯-এর সংবাদ সম্মেলন: অনুষ্ঠান বাতিলের পর দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জি-৯।
সেখানে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা শফিক রেহমান অভিযোগ করেন, সরকার যা করছে তার পরিণতি ভালো হবে না। তারা বিরোধীদলীয় নেতার চলাফেরা সংকুচিত করে ফেলছে, তাঁর চলাচলে বাধা দেওয়া হচ্ছে। তিনি সরকারকে বলেন, ‘আপনারা লেখার জবাব লেখা দিয়ে দিন, বন্দুকের জবাব বন্দুক দিয়ে। তা না করে একটি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠান বাতিল করেছেন।’
শফিক রেহমান বলেন, মানুষ পঁচাত্তরের ঘটনা দেখেছে, বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তর সালের শাসনব্যবস্থা দেখেছে। ওই সময় মানুষের বাকস্বাধীনতা ধ্বংস করা হয়েছে। এরশাদ সরকার এসে ছয় বছর যায়যায়দিন পত্রিকা বন্ধ রেখেছে। তিনি বলেন, ‘আমি বলতে চাই, এই সরকারের পরিণতি পঁচাত্তরের মতো হবে। ছিয়াশির মতো হবে। এদের পরিণতি ভালো হবে না।’
প্রবীণ এই সাংবাদিক বলেন, ‘লন্ডন থেকে একসময় আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী প্রথম আলোতে লিখতেন। এখন নতুন করে আরেকজন দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী কলকাতা থেকে লিখছেন। দুই চৌধুরী আছেন, প্রথম আলো আছে, সরকারের পক্ষে আরও কত সাংবাদিক, সাহিত্যিক আছেন। তাঁদের দিয়ে লেখান। লেখার জবাব লেখা দিয়ে দেন।’ তিনি প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা সরকারের কথা শুনে কিছু করবেন না। এই সরকার অবৈধ সরকার। এদের সহায়তা করবেন না। প্রয়োজন হলে চাকরি ছেড়ে দিন।’
প্রতিবাদ: বিএনপির নেতারা অভিযোগ করেছেন, সরকার পুলিশ, প্রশাসন ও গোয়েন্দানির্ভর হয়ে পড়েছে। খালেদা জিয়াকে স্মৃতিসৌধে যেতে বাধা এবং রূপসী বাংলা হোটেলে অনুষ্ঠান করতে না দেওয়ার প্রতিবাদে মহানগর বিএনপি আয়োজিত কর্মসূচিতে বক্তারা এ কথা বলেন।
গতকাল বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলপূর্ব সমাবেশে বক্তব্য দেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সাদেক হোসেন খোকা প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.