নুসরাত ইকবাল খান, তামিম ইকবালের মা-বড় কথা, ভালো খেলেছে দেশের জন্য

পরিবারের সবচেয়ে কনিষ্ঠ সদস্যের নাম নামির ইকবাল খান। এশিয়া কাপ ফাইনাল শেষে দাদি নুসরাত ইকবাল খানের দেখা পেয়ে সে দুই হাত প্রসারিত করে বলে, ‘জানো, চাচু আজকে অনেক রান করেছে! রান করে প্রথমে ওয়ান বলে একটা আঙুল তুলেছে, তারপর টু বলে দুইটা, থ্রি বলে তিনটা আর ফোর বলে চারটা আঙুল তুলেছে!’ তিন বছরের ছোট্ট বাচ্চাটার


এত আনন্দ দেখে নুসরাতের চোখে জল এসে যায়! এমন নিখাদ আনন্দের উৎস ছোট ছেলে তামিম ইকবাল, যে ছেলের জন্য অনেক শঙ্কা আর দুশ্চিন্তায় দিন কাটিয়েছেন কদিন আগেও। সব শঙ্কার মেঘ দূরে ঠেলে নতুন ভোর দেখা দিয়েছে তাঁকে, তাই তিনি এখন দারুণ সুখী, ‘ছেলেটার ওপর অনেক চাপ ছিল। তার মাঝেই সে নিজের জন্য ভালো খেলেছে। বড় কথা, ভালো খেলেছে দেশের জন্য। আমরা ফাইনালে পরাজিত তো কী হয়েছে, জিতেছি আমরাই!’
খুব চাপা স্বভাবের তামিম, নিজের দুঃখ-কষ্ট-সংগ্রামের কথা চেপে যান মায়ের কাছে! হয়তো ভাবেন, কী দরকার মাকে দুশ্চিন্তায় রাখার। ‘খুব ছেলেবেলায় ওরা বাবাকে হারিয়েছে, তাই আমার জগৎ বলতে ওরাই।’ বলছিলেন নুসরাত, ‘ওদের কষ্ট আমার কষ্ট। তামিম এটা বোঝে। আমি বুঝি, আমার ছেলে কতটা সংগ্রাম করছিল। তার মাঝেই ও যা করেছে, এককথায় অসাধারণ!’
ছেলের সঙ্গে খেলার আগে-পরে যথারীতি মুঠোফোনেই কথা হতো। ছেলে কেবল একটা কথাই বলত, ‘আম্মু, আমার জন্য দোয়া করো!’ এদিকে খেলার মাঝেই যে তার জ্বর এসেছে গায়ে, সেটা আর বলে না! ‘বলে, ভালো আছি, আম্মু! তুমি শুধু দোয়া করো।’ ছেলের জন্য দুশ্চিন্তা করতে করতে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন নুসরাত। ছেলেদের চাপে শেষমেশ ব্যাংককে যেতে হয়েছিল চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে। তাই প্রথম তিনটি খেলার সময় দেশের বাইরেই ছিলেন। ‘ফাইনালের আগে দেশে আসি। তবে বরাবরই যা হয়, টিভির সামনে বসে তামিমের ব্যাটিং দেখার মতো সাহস হয়নি! ওর ব্যাটিংয়ের পুরোটা সময় আমি একটা নির্জন ঘরে বসে কেবল প্রার্থনা করি—আমার ছেলেটা যেন ভালো খেলে।’ ছেলের সাধনা মাঠে, ঘরে মায়ের!
লড়াই শেষে ফলাফল যা-ই হোক, তামিমকে ফোন করে নুসরাত মোবারকবাদই জানালেন, ‘খুব ভালো করেছ তোমরা! তোমাদের সবার জন্য আমার দোয়া আছে। এবার হয়নি তো কী হয়েছে, সামনে তোমরা আরও অনেক ফাইনাল ম্যাচ জিতবে!’
ছেলেকে তো ভালো করেই চেনেন নুসরাত, তাই এই বিশ্বাস লালন করেন দৃঢ়তার সঙ্গেই। আর জানেন মানুষ তামিমকে, ‘ওর বাবার মতোই নরম মনের মানুষ ও। বাইরে থেকে হয়তো অনেকে অনেক কিছু ভাবে। আসলে ও একেবারে উল্টো। এখনো খুব বেশি বয়স হয়নি ওর। ভীষণ জেদি। তবে মানুষ হিসেবে খুব ভালো। মানুষ হিসেবে ভালো হলে যেকোনো কাজই আপনি করেন না কেন, তা ভালো কিছু হবেই।’

No comments

Powered by Blogger.