ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষ-সাঈদীর বিরুদ্ধে ১৯ সাক্ষীকে আনা দুরূহ ও সময়সাপেক্ষ

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার ১৯ জন সাক্ষীকে হাজির করা দুরূহ, ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। এ জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে দেওয়া এসব সাক্ষীর জবানবন্দি ট্রাইব্যুনালে দেওয়া সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণের আরজি জানানো হয়েছে।


বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি সৈয়দ হায়দার আলী গতকাল মঙ্গলবার এ আরজি জানান। সাঈদী এ সময় আসামির কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন। আসামিপক্ষ আজ বুধবার শুনানিতে এ আবেদনের বিষয়ে জবাব দেবে।
আবেদনে উল্লেখ করা ১৯ সাক্ষীর বিষয়ে হায়দার আলী বলেন, এই মামলার এক সাক্ষী ঊষা রানী মালাকারের বয়স ৭৮ বছর। তাঁর স্মরণশক্তি প্রায় বিলুপ্ত, ভ্রমণে মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে। আরেক সাক্ষী সুখরঞ্জন বালী চার মাস আগে নিজ বাড়ি থেকে পিরোজপুরের পারেরহাট বাজারের দিকে রওনা হওয়ার পর থেকে নিখোঁজ। তাঁর মেয়ে এ ব্যাপারে থানায় জিডি করেছেন। সাক্ষী সুমতি রানী মণ্ডল, আশীষ কুমার মণ্ডল ও সমর মিস্ত্রির বিষয়ে পিরোজপুরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাঁরা হয়তো ভারতে চলে গেছেন। এ ছাড়া আসামির পক্ষাবলম্বনকারী পিরোজপুরের একটি অস্ত্রধারী গোষ্ঠী সাক্ষীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাক্ষ্য না দেওয়ার জন্য হুমকি দিয়ে এসেছে। তাঁদের খুন, জখমের হুমকি দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে ওই সাক্ষীদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, এই ১৯ জন সাক্ষীকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা দুরূহ, ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। এ জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে দেওয়া তাঁদের জবানবন্দিকে ইতিমধ্যে ট্রাইব্যুনালে দেওয়া সাক্ষ্যের সমমানের বিবেচনা করে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করতে কোনো অসুবিধা নেই। আবেদনে উল্লিখিত ২০ থেকে ৪৬ নম্বর পর্যন্ত সাক্ষীর বিষয়ে তিনি বলেন, তাঁরা ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী নন। তাঁদের সাক্ষ্য গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ নয়।
শুনানির এ পর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি বলেন, এটাই হলো এই মামলার সাক্ষীদের প্রকৃত অবস্থা। সাক্ষী হাজির করার ব্যর্থতা নিয়ে গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময় রাষ্ট্রপক্ষের সমালোচনা করা হয়। সাংবাদিকেরা লেখেন, ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রপক্ষকে তিরস্কার করেছেন, ভর্ৎসনা করেছেন। কিন্তু কেন ট্রাইব্যুনাল ভর্ৎসনা করবেন? সাক্ষীদের প্রকৃত অবস্থা বুঝতে হবে। তিনি বলেন, ক্ষোভের সঙ্গেই বলছি, রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি হিসেবে আজ পর্যন্ত কোনো প্রশংসা পাইনি। তাহলে এই দুই বছরে যেসব কাজ হয়েছে, তা কি এমনিতে হয়ে গেল?
ট্রাইব্যুনাল এ সময় হায়দার আলীকে গণমাধ্যমের সমালোচনা ব্যক্তিগতভাবে না নেওয়ার অনুরোধ জানান।
পরে হায়দার আলী সাক্ষীদের বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তার দেওয়া প্রতিবেদন পড়ে শোনান। এরপর ট্রাইব্যুনাল আসামিপক্ষের শুনানির জন্য আজ দিন ধার্য করেন।
গোলাম আযমের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে পরবর্তী শুনানি ২৯ মার্চ: জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযোগের বিষয়ে আসামিপক্ষের শুনানি গতকাল শেষ হয়েছে। গোলাম আযমের উপস্থিতিতে তাঁর আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে যুক্তি উপস্থাপন করেন। ২৫ মার্চ তিনি যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষ পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন করবে ২৯ মার্চ।
শুনানির একপর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের আনা অভিযোগ অনুসারে গোলাম আযম জামায়াতের কর্মীদের দিয়ে রাজাকার, আলবদর, আলশামস প্রভৃতি বাহিনী গঠন করেছেন এবং এসব বাহিনী মুক্তিযুদ্ধকালে বিভিন্ন নৃশংসতার সঙ্গে জড়িত ছিল। তিনি রাজাকারদের বিভিন্ন অপরাধ করতে উৎসাহ জুগিয়েছেন। এসব বিষয়ে আসামিপক্ষের জবাব প্রয়োজন।
এর জবাবে আবদুর রাজ্জাক বলেন, আসামিপক্ষ সব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করছে। গোলাম আযম মুক্তিযুদ্ধকালে কোনো নৃশংসতা অথবা আলবদর, আলশামস বাহিনী গঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।
সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশ ৪ এপ্রিল: বিএনপির নেতা ও সাংসদ সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশের জন্য ৪ এপ্রিল দিন পুনর্নির্ধারণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল। গতকাল আদেশের জন্য ধার্য দিনে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ট্রাইব্যুনালের নতুন সদস্য বিচারপতি আনোয়ারুল হক এখনো সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলায় দাখিল করা নথিপত্র পড়া শেষ করতে পারেননি। এ জন্য আদেশের দিন পুনর্নির্ধারণ করা হলো।
নিজামীর পক্ষে আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন ১ এপ্রিল: জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপনের দিন ১ এপ্রিল পুনর্নির্ধারণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল। গতকাল নিজামীর আইনজীবী আবদুর রাজ্জাকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন।

No comments

Powered by Blogger.