শিরিন আক্তার, সাকিব আল হাসানের মা-শেষমেশ ওকে জিততেই হবে

সন্তানদের কতশত গল্পই না জমা থাকে মায়েদের কাছে! গল্পগুলো যেন থাকে তুলায় মোড়ানো, যত্ন করে তুলে রাখা। তাই ওই গল্পগুলো বরাবরই উজ্জ্বল এবং জীবন্ত। পুনরায় এমন উপলব্ধির মুখোমুখি হই আমরা শিরিন আক্তার সঙ্গে কথা বলে। শিরিন আক্তার, সাকিব আল হাসানের মা।


ক্যারমবোর্ডে সাকিবের কচ্ছপকামড় দিয়ে পড়ে থাকার গল্প শোনালেন তিনি, মনে হলো আমরা সেই দৃশ্য ছায়াছবির মতো দেখছি চোখের সামনে! সদ্যই শেষ হওয়া এশিয়া কাপ ফাইনাল ম্যাচের শেষ দৃশ্যের সঙ্গে তাঁর ভারি মিল! মিলটা ধরিয়ে দিলেন সাকিবের মা, ‘কখনোই হার মেনে নিতে পারত না ছেলেটা। খুব গভীরভাবে লক্ষ করেছি এটা। ক্যারম খেলতে যেত পাড়ার ছেলেপুলেদের সঙ্গে। তখন দেখতাম, হেরে গেলেই মুখ ভোঁতা করে রাখত। তবে খেলা ছেড়ে দিয়ে আসত না কখনোই, ভীষণ রোখ চেপে যেত তখন। যতক্ষণ না ও জিতবে, ততক্ষণ বিপক্ষ দলের খেলে যেতে হবে! ক্রিকেটেও তা-ই। শেষমেশ ওকে জিততেই হবে।’
ফাইনালের পরাজয় মানতে পারলেন না বলেই তো কাঁদলেন সাকিব। বুকে নিশ্চয়ই প্রতিশোধের দামামা বেজে চলেছে! ছেলেকে ওমন কাঁদতে অবশ্য কখনোই দেখেননি মা, ‘ছেলেটা খুব শক্ত ধাতের। ও যে ওভাবে কাঁদতে পারে, তা কখনোই ভাবিনি! মাগুরায় টিভির সামনে বসে খেলা দেখছিলাম সেদিন। ওর কান্না দেখে প্রথমটায় হতভম্ব হয়ে পড়েছিলাম। পরে সবকিছু ঝাপসা হয়ে এল, ছেলের কান্না দেখে কোনো মা কি না কেঁদে পারে!’
শিরিন আক্তারের কণ্ঠে মেঘ বাসা বাঁধে। আমরা বলি, আপনার ছেলের কান্না দেখে গোটা দেশ কেঁদেছে! যেই ছেলের কান্না বর্ষার দুপুরের মতো, সবাইকে ভিজিয়ে দিয়ে যায়, সেই ছেলের মা তা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকেন। তারপর ধীরে ধীরে উচ্চারণ করেন, ‘জানি, সেদিন সবাই কেঁদেছে! আসলে ২ রানের পরাজয় তো অবিশ্বাস্য! এখনো বিশ্বাস হয় না! তার পরও ওরাই বিজয়ী—এটা শুধু আমি মা বলেই বলছি না, সবারই বিশ্বাস।’ খেলার আগে আগে শিরিন এমনই বিশ্বাসের রেণু ছড়িয়ে দিতেন সাকিবের মনের আকাশে। মুঠোফোনেই কথা হতো। ফাইনালের আগের দিন ছেলের সঙ্গে রসিকতাও করেছিলেন এক চোট, ‘খুব তো বাঘের বাচ্চা হয়ে গেছো! নাও, এবার পাকিস্তানকে হারিয়ে দাও! তোমরা পারবে।’ স্বভাবসুলভ হাসি হেসেছিলেন সাকিব, ‘চেষ্টা করব মা, দোয়া করো।’ ছেলের কি আর দোয়া চাইতে হয়! খেলার আগে-পরে, খেলা চলার সময় মা সব কাজ ফেলে কেবল দোয়াই করেন। এই যেমন এখন দোয়া করছেন, ফাইনালের পরাজয়ের দুঃখ যেন ঘুচে যায় অচিরেই। ‘নিজের জন্যও দোয়া করছি!’ বলে হাসেন শিরিন, ‘গতবার আইপিএল চলার সময় জ্বরে পড়ে গেলাম। তা শুনেই ছুটে এল ও! আমাকে সুস্থ করে তবেই ফিরল। তাই দোয়া করি, এবার যেন তেমনটা না হয় আর। আমার প্রতি ওর প্রচণ্ড টান! ফাইনাল শেষে, ওর জন্মদিনের আগে ঢাকায় এলাম। নিজেই গাড়ি নিয়ে এল বিমানবন্দরে। ওর জন্মদিনের দিন কেক খাইয়ে দেওয়ার সময় ভাবছিলাম, ছেলেটা কত্ত বড় হয়ে গেল সবার কাছে, কত দায়িত্ব ওর কাঁধে! আর আমার কাছে তো সে-ই ছোট্টটিই রয়ে গেল! ছেলেবেলায় টিভিতে ক্রিকেট খেলা দেখতাম ওর পাশে বসে। তখন হয়তো এমনিতেই বলার জন্য বলতাম, তুমিও ওদের মতো হবে একদিন! সত্যি বলছি, কখনো কল্পনা করিনি, এভাবে সত্যি হয়ে যাবে সবকিছু! মন বলে, এবার হয়তো আফসোস থেকে গেল, তবে সামনে আমার ছেলে বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় কিছু করবে!’

No comments

Powered by Blogger.