খবর, কালের কণ্ঠের- আগেই ধ্বংস মহাস্থানগঃ হাইকোর্টের নির্দেশে কাজ বন্ধ

গুড়ার মহাস্থানগড়ের সংরক্ষিত এলাকায় ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে মাজার কমিটি। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কাজ বন্ধ করা হয়। এর আগে হাইকোর্ট এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ঐতিহাসিক এই স্থান ও এর আশপাশে নির্মাণকাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেন। বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও শেখ মো. জাকির হোসেনের বেঞ্চ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য শিবগঞ্জ থানার ওসিকে নির্দেশ দেন।
তবে বগুড়ার জেলা প্রশাসক ওই স্থানে ভবন নির্মাণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ভবন নির্মাণের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করছেন। গতকাল কাজ বন্ধের আগেই সকালে অতিরিক্ত শ্রমিক নিয়োগ করে দ্রুত আরো ১১টি গর্ত খোঁড়া হয়। খনন করা গর্ত থেকে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কর্মকর্তারা বেশ কিছু পুরাকীর্তি উদ্ধার করেন। এর মধ্যে রয়েছে মানুষ ও হাতির মূর্তির ছাপ দেওয়া টেরাকোটা, দিয়ার, বেলে পাথরের পুরাকীর্তি। কোদাল ও শাবলের খোঁচায় এ পুরাকীর্তিগুলো ভেঙে কয়েক ভাগে খণ্ডিত হয়ে পড়ে ছিল। শ্রমিকরা জানান, কোনো কিছু পেলে তা ভেঙে গুঁড়া করে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে মাজার কমিটির লোকজন।
দুই হাজার ৩০০ বছরের পুরনো নগরী মহাস্থানগড়ে পুরাকীর্তি কেটে ভবন নির্মাণ নিয়ে গত রবিবার কালের কণ্ঠে একটি সরেজমিন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পুরাকীর্তি ধ্বংসের ঘটনায় মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ গতকাল হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করে।
মহাস্থানগড় মাজার উন্নয়ন কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক ইফতেখারুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এই ভবন নির্মাণের গুরুত্ব তুলে ধরে আমি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়েছি। সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সরকারি দপ্তরেও এ ব্যাপারে মতামতের জন্য জানিয়েছি। সেসব জায়গা থেকে নিষেধাজ্ঞা না এলে কাজ চলবে।' তিনি বলেন, যেহেতু সেখানে আগে ভবন ছিল (পুরাকীর্তি), তাই সেখানে নতুন করে ভবন নির্মাণ করা হলে দোষের কিছু নেই।
গতকাল সকাল ৯টা থেকে মহাস্থানগড় মাজার এলাকায় মোট ৮০ জন শ্রমিক নতুন করে আরো ১১টি গর্ত খোঁড়ার কাজ শুরু করেন। গর্ত খোঁড়ার সময় পুরাকীর্তি উঠে এলে তা ভেঙে ফেলা হয়। গর্ত খোঁড়ার কাজে কর্মরত শ্রমিক মকবুল জানান, কোনো কিছু রাখার অনুমতি দেওয়া হয়নি তাঁদের। মাটির নিচে যা-ই পাওয়া যাক, সেগুলো ভেঙে গুঁড়া করে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
একই কথা বললেন শ্রমিক মন্টু মিয়া। তিনি জানান, মাজার কমিটির লোকজন সব সময় তাঁদের কাজ তদারকি করছে। কেউ কথা না শুনলে কাজ থেকে বের করে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়েছে।
হজরত শাহ সুলতান বলখি (রহ.) মাজারের ভাণ্ডারখানার কর্মকর্তা আশরাফ আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা মাটির নিচে অনেক কিছুই পাই। এগুলো দিয়ে কী হবে? এর চেয়ে ভবন দরকার বেশি। কাজেই ভবন হতে হবে এবং সেটা যত দ্রুত সম্ভব।'
মহাস্থানগড় জাদুঘরের কাস্টডিয়ান (জিম্মাদার) নাহিদ সুলতানা জানান, গর্ত খোঁড়ার সময় পাওয়া অনেক পুরাকীর্তি গুঁড়া করে ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া মাজার কমিটির লোকজন তাঁদের মাঠ কর্মকর্তাদের হুমকি দিয়েছে, যাতে তাঁরা কোনো কিছু সংগ্রহ না করেন। তিনি বলেন, যেসব সামগ্রীর ভগ্নাংশ উদ্ধার করা হয়েছে, সেগুলো সবই প্রাচীন আমলের। ধারণা করা হচ্ছে, এগুলো ২২০০ থেকে ২৩০০ বছরের প্রাচীন।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের মাঠ কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, তিনি ব্যাগে ভরে পুরাকীর্তির অংশগুলো নিতে চাইলে মাজার কমিটির লোকজন তাঁকে মারধর করার হুমকি দেয়। প্রয়োজনে সাধারণ গ্রামবাসীকে সঙ্গে নিয়ে জাদুঘরে হামলা করার হুমকিও দেয় তারা।
মাজার উন্নয়ন কমিটির সম্পাদক শিবগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুৎফর রহমান বলেন, 'জেলা প্রশাসক মহোদয় এ ব্যাপারে প্রত্যেক সদস্যের কাছে চিঠি দিয়েছেন। তাতে বলা ছিল, আগে সিদ্ধান্ত হোক, এরপর নির্মাণকাজ হবে। কিন্তু তার পরেও কেন নতুন করে আরো গর্ত খোঁড়া হলো, সেটা আমার বোধগম্য নয়।' তিনি জানান, রাজনৈতিক নেতারা এ কাজে সম্পৃক্ত থাকায় তাঁদের করার কিছু নেই।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) শফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এখনো দেশে সচেতন মানুষ আছেন, যাঁরা দেশকে ভালোবাসেন। দেশের পুরাকীর্তি ভালোবাসেন। এ রকম কয়েকজন মানুষের রিট আবেদনের কারণে আজ (গতকাল) কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে মাজার উন্নয়ন কমিটি। তবে এর আগেই অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ঐতিহাসিক স্থানটির বেশ বড় ক্ষতি হয়ে গেল।'
এদিকে মহাস্থানগড়ের প্রত্নস্থান ধ্বংসের প্রতিবাদে গতকাল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন ও মৌন মিছিল করেছে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। বিভাগের সহকারী অধ্যাপক স্বাধীন সেন কালের কণ্ঠকে বলেন, মাজার উন্নয়ন কমিটিতে অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তি রয়েছেন। তাঁরাই মূলত প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে এই খননকাজ করিয়ে ভবন নির্মাণের কাজ করাতে বাধ্য করেছেন। মহাস্থানগড়ের প্রতিটি বালুকণার ঐতিহাসিক পটভূমি আছে। সেগুলো কেউ নষ্ট করে ফেলার অধিকার রাখে না।
উল্লেখ্য প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের বাধা সত্ত্বেও মহাস্থানগড় মাজার উন্নয়ন কমিটি এক সপ্তাহ ধরে সংরক্ষিত এলাকায় চার তলা ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করে।
==========================
কেয়ার্নের সঙ্গে স্বার্থবিরোধী চুক্তির পেছনেও জ্বালানি উপদেষ্টা  উইকিলিকস জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের আত্মসমর্পণ  সবুজ মাঠ পেরিয়ে  আলোচনা- 'আরো অনুদানের টাকা সরিয়েছিলেন ইউনূস'  আলোচনা- 'একটি 'উজ্জ্বল ভাবমূর্তির' এভারেস্ট থেকে পতন  গল্পালোচনা- 'আসি আসি করে আশিতে আসবে!'  রাষ্ট্র ও রাজনীতিঃ সবুজ মাঠ পেরিয়ে  স্মরণ- 'রবীন্দ্রনাথ—সার্ধশত জন্মবার্ষিকীতে'  স্মরণ- 'জননেতা দেওয়ান ফরিদ গাজী'  আলোচনা- 'প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফর ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নতুন পর্যায়'  আলোচনা- 'কর্মপরিবেশঃ স্বর্গে তৈরি'  গল্পালোচনা- ‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া...’  আন্তর্জাতিক- উইকিলিকসঃ হাটে হাঁড়ি ভাঙা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ  গল্পসল্প- ওরা ধান কুড়ানির দল  শিক্ষা- আদিবাসী পাহাড়ে বিশ্ববিদ্যালয় চাই  জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের অর্থের মূল উৎস সৌদি আরব  রাজনৈতিক আলোচনা- এমন বন্ধু থাকলে...  শিল্প-অর্থনীতি শেয়ারবাজারের সুন্দরী প্রতিযোগিতা-তত্ত্ব  সাক্ষাৎকার- খাদ্যনিরাপত্তার জন্য বিকল্প উপায় খুঁজতা হবে  খবর, প্রথম আলোর-  দলীয় স্বার্থ বড় করে দেখবেন না  মার্কিন কূটনীতিকদের গোপন তারবার্তাঃ পাকিস্তানে জঙ্গি নির্মূলে ১০-১৫ বছর লাগবে  অধ্যাপক ইউনূসের অর্থ স্থানান্তর : গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যাখ্যা  শিল্প-অর্থনীতি 'সময় এসেছে মাথা তুলে দাঁড়াবার'  প্রকৃতি- 'কিয়োটো প্রটোকল ভেস্তে যাচ্ছে, কানকুনে কী হবে?  আলোচনা- 'মেয়েদের লাঞ্ছনা বন্ধ করতে কঠোর হতে হবে'  যুক্তি তর্ক গল্পালোচনা- 'আগ্নেয়গিরির ওপরে পিকনিক'  আলোচনা- 'হিমালয়ের কোলে এক টুকরো দক্ষিণ এশিয়া'  স্মরণ- 'মানুষের জন্য যিনি জেগে থাকতেন'  রাজনৈতিক আলোচনা- 'আবার আসিব ফিরে!'  আলোচনা- 'রাজকীয় সম্মেলন'  যুক্তি তর্ক গল্পালোচনা- 'অসারের তর্জন-গর্জন'  আলোচনা- 'একজন নোবেল বিজয়ী, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও ক্ষুদ্রঋণের ফাঁদ'  স্মৃতি ও গল্প- সেই আমি এই আমি  গল্প- 'ঘুঁটি'


দৈনিক কালের কণ্ঠ এর সৌজন্যর

এই খবর'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.