চলছে রাজ্জাক-রাজ

রেকর্ড যেন পিছু ছাড়ছেই না আবদুর রাজ্জাকের! তাতে অবশ্য একদমই মন খারাপ করার কথা নয় বাঁহাতি স্পিনারের। ‘পিছু ছাড়ছে না’ বললে যেমন একটা নেতিবাচক ভাবনা চলে আসে, রাজ্জাকের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি মোটেও তা নয়। মাঠে নামলেই গড়ে ফেলছেন নতুন নতুন রেকর্ড এবং সবই গৌরবের!
প্রথম ম্যাচে ৪ উইকেট নিয়ে ছুঁলেন মাশরাফিকে, বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশিবার (৬ বার) ইনিংসে চার বা তার বেশি উইকেট নিয়ে। দ্বিতীয় ম্যাচে ৫ উইকেট, বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে ওয়ানডে ইতিহাসে প্রথম হ্যাটট্রিক। কাল আবার ৪ উইকেট নিয়ে ছুঁলেন আরেকটি বিশ্ব রেকর্ড—টানা তিন ম্যাচে চার বা তার বেশি উইকেট নেওয়া মাত্র ষষ্ঠ বোলার তিনি এবং অবশ্যই প্রথম বাঁহাতি স্পিনার!
এই কীর্তি ছয় বোলারের হলেও টানা তিন ম্যাচে চার বা তাঁর বেশি উইকেট নেওয়ার ঘটনা আছে আটটি। ওয়াকার ইউনুস একাই যে নিয়েছেন তিনবার! মাঝে একবার টানা তিন ম্যাচে ৫ উইকেট নেওয়ার রেকর্ডও আছে। তালিকার বাকি চারজনের দুজন দুই সময়ের দুই লেগ স্পিনার—নরেন্দ্র হিরওয়ানি ও শেন ওয়ার্ন। অবাক করতে পারে বাকি দুটি নাম, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ভেসবার্ট ড্রেকস ও কানাডার খুররম চৌহান! ড্রেকসের কীর্তি বাংলাদেশের বিপক্ষেই, আফগানিস্তান ও কেনিয়ার বিপক্ষে খুররম।
তবে রেকর্ডগুলোকে এক পাশে সরিয়ে রাখলে এই সিরিজে বাংলাদেশের সেরা প্রাপ্তি রাজ্জাকের ছন্দে ফেরা। বাংলাদেশের রণপরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাজ্জাকের, অধিনায়কের বড় সহায় তিনি। শুরুতে উইকেট পড়েনি? ডাকো রাজ্জাককে। শুরুতে উইকেট পড়ার পর চাপ ধরে রাখা দরকার? ভরসা রাজ্জাক। স্লগ ওভারে রান আটকানো প্রয়োজন? রাজ্জাক আছে না! নতুন বলে স্পিন দিয়ে শুরু করা? তাও তো রাজ্জাকই! জিম্বাবুয়ে কোচ অ্যালান বুচার তো কাল ঘোষণাই দিয়ে দিলেন, ‘আমাদের স্পিনাররাও ভালো বোলিং করছে, কিন্তু ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স দেখা যাচ্ছে না। যেটা করছে রাজ্জাক। প্রতিদিনই শুরুতে উইকেট তুলে নিচ্ছে, দুই দলের মাঝে মূল ব্যবধানটা ওই গড়ে দিচ্ছে।’
তিন ম্যাচে ১৩ উইকেট, বল হাতে এমন জাদু দেখাচ্ছেন যে রাজ্জাকের সংবাদ সম্মেলনগুলোও হচ্ছে কেমন যেন জাদুময়। টানা তৃতীয় ম্যাচে ম্যাচ-সেরা হতে চান কিনা কিংবা বাকি দুই ম্যাচেও কাঁড়ি কাঁড়ি উইকেট পাবেন কি না—এমন অদ্ভুত সব প্রশ্নেও অবাক লাগছে না, মনে হচ্ছে যেন সবই সম্ভব! বোলিং অ্যাকশন নিয়ে বারবার সমস্যা, ছন্দ হারিয়ে ফেলা এমন সব দুঃসময় কাটিয়ে এসেছেন বলেই হয়তো এমন সাফল্যেও রাজ্জাকের মাথা ঘুরে যাচ্ছে না। ‘মিরপুরের তো আপনাকে উজাড় করে দিচ্ছে’—এটুকু বলতেই প্রশ্নকর্তাকে থামিয়ে বললেন, ‘মাঠ তো আর দেয় না, সব নিজেরই করে নিতে হয়।’
ফিরতি ক্যাচ ছেড়ে ৫ উইকেট হাতছাড়া করেছেন বলে অধিনায়কের রসিকতাভরা ‘খোঁচা’ শুনলেন। তবে পরের ম্যাচ শেষেও আবার লিখতে হতে পারে রাজ্জাকের ইতিহাস! ওয়ানডেতে টানা চার ম্যাচে চার উইকেটের ইতিহাস যে হাতছানি দিচ্ছে তাঁকে!

No comments

Powered by Blogger.