বিশ্বকাপের আগে চাই আরেকটা সিরিজ

বিশ্বকাপের বাকি আরও দুই মাস। জিম্বাবুয়ে সিরিজটা আজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর এই দুই মাস বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা একরকম বসেই থাকবেন। মাঝে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ আছে। কিন্তু ঢাকার ক্রিকেটের যে মান, প্রিমিয়ার লিগে খেলাটা আর যা-ই হোক, বিশ্বকাপের জন্য আদর্শ ম্যাচ প্র্যাকটিসের জায়গা হতে পারে না।
বাংলাদেশের কোচ জেমি সিডন্স সে কারণেই বিশ্বকাপের আগে আরেকটা আন্তর্জাতিক সিরিজ খেলতে চান। অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও বলছেন, বিশ্বকাপ প্রস্তুতির জন্য বাকি দুই মাসে আরও একটা আন্তর্জাতিক সিরিজ খেলতে পারলে মন্দ হয় না, ‘বিশ্বকাপের আগে আরেকটা আন্তর্জাতিক সিরিজ খেলতে পারলে ভালো হতো। তাহলে খেলার মধ্যে থাকা যায়, ম্যাচ প্র্যাকটিসটাও হয়।’ কোচ-অধিনায়কের দাবি মেনে বিসিবিও চেষ্টা করেছে জানুয়ারির শেষ দিকে বা ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে শ্রীলঙ্কা অথবা কানাডা দলকে বাংলাদেশে আনার। যদিও চেষ্টাটা বৃথা যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
জিম্বাবুয়ে সিরিজ শেষে ১৪ ডিসেম্বর বোর্ডের সঙ্গে বসবেন সিডন্স। সেখানে বাড়তি সিরিজ খেলার প্রসঙ্গটাও আসবে অন্যান্য আলোচনার সঙ্গে। ‘বিশ্বকাপের আগে দলের সব খেলোয়াড়কে একসঙ্গে পেলে ভালো হয়। যদিও আমি নিশ্চিত নই, ওই সময়ে তাঁদের একসঙ্গে পাব কি না। জানুয়ারির শেষ বা ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে একটা আন্তর্জাতিক সিরিজ খেলার ব্যবস্থা করা যায় কি না, সেটা বিবেচনা করে দেখতে আমি বোর্ডকে অনুরোধ করেছি’—বলেছেন সিডন্স।
কোচের অনুরোধে সাড়া দিয়ে এর মধ্যেই শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বিসিবি। কিন্তু বিশ্বকাপের আগে অন্য দেশে না গিয়ে বাংলাদেশকেই নিজেদের মাটিতেই নিতে চায় শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশও যেহেতু বিশ্বকাপে সব ম্যাচ নিজেদের মাটিতে খেলবে, শ্রীলঙ্কার পাল্টা প্রস্তাবে রাজি হয়নি তারা। এর মধ্যেই বিশ্বকাপের আগে আগে বাংলাদেশে এসে সিরিজ খেলার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে কানাডা। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে প্রাথমিক চিঠি চালাচালিও হয়েছে। বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশে কানাডা দল একটা প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে। বিসিবি ওই সময়ই তাদের সঙ্গে সিরিজ আয়োজনে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন ক্রিকেট পরিচালনা কমিটির প্রধান এনায়েত হোসেন, ‘বিশ্বকাপের আগে কোনো বড় দলের বিপক্ষেই সিরিজ খেলতে চাই আমরা। সেটা না হলে কানাডাও আসতে পারে। বিশ্বকাপে যেহেতু আমরা বাংলাদেশেই খেলব, তার আগে নিজেদের মাটিতে সিরিজ খেলাই ভালো।’
তবে বিশ্বকাপের আগে হোম সিরিজ খেলা নিয়ে উল্টো মত আছে বোর্ডে। বাংলাদেশে বিশ্বকাপের ভেন্যুগুলো এখনো প্রস্তুত নয় বলে বাড়তি সিরিজ আয়োজন করে ঝামেলা না বাড়ানোর পক্ষে অনেকেই।
কোচ-অধিনায়কের ইচ্ছা শেষ পর্যন্ত পূরণ না হলে আজ শেষ হওয়া জিম্বাবুয়ে সিরিজটাই বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশের শেষ সিরিজ। দল তাই এই সিরিজে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল। কিন্তু অনুপযুক্ত মাঠ সিরিজের চতুর্থ ওয়ানডেটা হতে না দেওয়ায় পরিকল্পনা কাজে লাগানো গেল না। চতুর্থ ম্যাচে সিরিজ জয় হয়ে গেলে আজকের শেষ ম্যাচে আরেকটা সুযোগ পেতে পারতেন মোহাম্মদ আশরাফুল। এই সিরিজের আগে লম্বা সময় ধরে খেলার বাইরে থাকা মাশরাফি বিন মুর্তজা ও তামিম ইকবালের জন্যও শেষ পর্যন্ত আদর্শ প্রস্তুতি হলো না জিম্বাবুয়ে সিরিজে।
অধিনায়ক সাকিব আল হাসান অবশ্য অন্য কারণেও এই সিরিজকে বিশ্বকাপের আদর্শ প্রস্তুতি বলতে নারাজ, ‘এই সিরিজটা বিশ্বকাপের তিন মাস আগে খেললাম আমরা। এখানে মূলত নিজেদের দেখার ব্যাপারটাই বেশি ছিল। তিন মাস আগের সিরিজ দিয়ে তো আর বিশ্বকাপের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যায় না।’
বিশ্বকাপ প্রস্তুতির জন্য এখন ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগই ভরসা। তবে আশার কথা, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অনেক বড় তারকাকে দেখা যেতে পারে এবারের লিগে। সেটা হলে বিশ্বকাপের আগে ভালো ক্রিকেট খেলার একটা সম্ভাবনা তো থাকেই বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের জন্য।
অন্য কোনো বিকল্প না থাকলে মাশরাফি-সাকিবরা প্রিমিয়ার লিগ থেকেই সর্বোচ্চ প্রস্তুতির সুবিধা তুলে নেবেন, এমন আশা জেমি সিডন্সের।

No comments

Powered by Blogger.