প্রবাসী বন্ডে পুনর্বিনিয়োগ সুবিধা ফিরিয়ে আনা হচ্ছে

প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তর প্রবর্তিত বন্ডসমূহে পুনর্বিনিয়োগের সুবিধা বহাল রাখা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তর থেকে এসংক্রান্ত একটি সারসংক্ষেপ অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে। শিগগির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে সঞ্চয় পরিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
চলতি অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে প্রবাসীদের বন্ডে পুনর্বিনিয়োগের সুবিধা রহিত করা হয়। এর ফলে গত ১ জুলাই থেকে বিনিয়োগ আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইআরডি সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, বন্ডে পুনর্বিনিয়োগের সুবিধা বহাল রাখার বিষয়ে কাজ এগোচ্ছে। এসংক্রান্ত সারসংক্ষেপটি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বন্ডে বিনিয়োগ হ্রাসের আশঙ্কা
জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তর প্রবর্তিত বন্ডে বিনিয়োগ হ্রাসের আশঙ্কা করে পুনর্বিনিয়োগের সুবিধা বহাল রাখার পাশাপাশি সুদের হার আগের মতো রাখার অনুরোধ জানিয়েছে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। গত ৭ নভেম্বর প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন এক চিঠিতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে এই অনুরোধ করেন।
চিঠি পাওয়ার পর গত ৮ নভেম্বর অর্থমন্ত্রী এসব বন্ডে পুনর্বিনিয়োগের সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য আইআরডি ও এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে তা পাঠিয়ে দেন। অর্থমন্ত্রীর পরামর্শের ভিত্তিতে সঞ্চয় পরিদপ্তর একটি সারসংক্ষেপ তৈরি করে আইআরডি সচিবের কাছে পাঠায়।
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, অনেক বিনিয়োগকারী তাঁদের বন্ডের মেয়াদপূর্তির পর পুনর্বিনিয়োগের সুবিধা না থাকায় বৈদেশিক মুদ্রায় তা তাঁদের কর্মস্থলে নিয়ে যাচ্ছেন। এই ঘটনায় আশঙ্কা করা যায়, প্রবাসী কর্মীরা আগের বন্ডে বিনিয়োগ করে বৈধ পথে অর্থ পাঠাতে উৎসাহ পেতেন, এখন তাঁরা অবৈধ পথে অর্থ পাঠাতে উৎসাহিত হতে পারেন।
এদিকে গত ১৭ অক্টোবর জেদ্দায় বাংলাদেশ দূতাবাসের কনসাল জেনারেল নাজমুল ইসলামের সঙ্গে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেখা করে তিনটি বন্ডে পুনর্বিনিয়োগের সুবিধা এবং আগের সুদের হার রাখার দাবি করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে জেদ্দার কনসাল জেনারেল আইআরডি সচিবের কাছে চিঠি পাঠিয়ে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, পুনর্বিনিয়োগের সুবিধা রহিত হওয়ায় ও ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডে সুদের হার কমানোর ফলে প্রবাসীদের বিনিয়োগ-আগ্রহ হ্রাস পাচ্ছে। এ ছাড়া প্রবাসী-আয়প্রবাহ হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বর্তমানে সঞ্চয় পরিদপ্তরের অধীনে প্রবাসীদের জন্য চার ধরনের বন্ড চালু রয়েছে। এগুলো হলো ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ইনভেস্টমেন্ট ডলার বন্ড, ইউএস প্রিমিয়ার বন্ড ও বাংলাদেশ প্রাইজ বন্ড।
গত ১ জুলাই থেকে এসব বন্ডে পুনর্বিনিয়োগের সুবিধা রহিত করা হয়েছে এবং ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডে সুদের হার ১২ থেকে কমিয়ে সাড়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে।
বন্ডে বিনিয়োগ পরিস্থিতি
জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) বন্ডে নিট বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ৯০ কোটি টাকা। গত বছর একই সময় নিট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা।
এ সময় সবচেয়ে জনপ্রিয় ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডে নিট বিনিয়োগ হয়েছে ১৩০ কোটি টাকা। গত বছর একই সময় এই বন্ডে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪০০ কোটি টাকা।
আর একই সময় ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডে ৩০ কোটি টাকা আর প্রিমিয়াম বন্ডে ১২ কোটি টাকা নিট বিনিয়োগ হয়েছে।
তবে তিন বছর মেয়াদি জাতীয় বিনিয়োগ বন্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় এ বছর মূল ও সুদ দুটোই পরিশোধ হচ্ছে। বন্ডে নিট বিনিয়োগের পরিমাণ কমে যাওয়ার আরেকটি কারণ এটি। চলতি অর্থবছর জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তর প্রবর্তিত বন্ডসমূহে ৬১০ কোটি টাকার নিট বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
এর আগে ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড ও ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড—এই তিনটি বন্ডের মেয়াদপূর্তির পর স্বয়ংক্রিয় উপায়ে পুনর্বিনিয়োগ-সুবিধা ছিল। অর্থাৎ একজন বিনিয়োগকারী বন্ডের মেয়াদপূর্তির পর বিনিয়োগ উত্তোলন না করলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনর্বিনিয়োগ হয়ে যেত। কিন্তু চলতি অর্থবছর থেকে বিনিয়োগকারীকে অবশ্যই পুরো বিনিয়োগ তুলে নতুন করে বিনি েয়াগ করতে হবে। আবার ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড ছাড়া বাকি দুটি বন্ডের লভ্যাংশ করের আওতায় আনা হয়েছে।
এনবিআর কর্মকতারা বন্ডে পুনর্বিনিয়োগের সুবিধা রহিত করার পেছনে অন্যতম যুক্তি হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন যে, এতে তাঁদের কর আদায় করা সহজ হয়। পুনর্বিনিয়োগ-সুবিধা অব্যাহত থাকলে প্রবাসীদের কাছ থেকে আয়কর কেটে রাখায় প্রক্রিয়াগত জটিলতা দেখা দেয়।
প্রসঙ্গত ব্যাংক সুদের হারের চেয়ে মুনাফা বেশি ও নিরাপদ হওয়ায় প্রবাসীরা এসব বন্ডে বিনিয়োগ করতে বেশি আগ্রহী।

No comments

Powered by Blogger.