আমিরের বয়স কম তো কী

বাড়ির ছোট ছেলেটি অন্যায় করে ফেললে সবাই বলে—বয়সের দোষ। এই বয়সের কারণেই মোহাম্মদ আমিরের অপরাধকে লঘু করে দেখার সুপারিশ করেছিলেন আইসিসির প্রধান নির্বাহী হারুন লরগাত। প্রায় একই রকম বলেছিলেন জিওফ বয়কট, মাইকেল আথারটনরা।
কিন্তু পুরো দুনিয়াই এমন সহানুভূতিশীল নয়। তাই সুনীল গাভাস্কারের সুরে সুর মিলিয়ে খোদ পাকিস্তান দলের সহকারী ম্যানেজার শাফকাত রানা বললেন, বয়স কোনো অজুহাত হতে পারে না। পরশু কার্ডিফে পাকিস্তান টি-টোয়েন্টি দলের সংবাদ সম্মেলনে যথারীতি স্পট-ফিক্সিং প্রসঙ্গ এসেছিল। এসেছিল, বয়সের কারণে মোহাম্মদ আমিরকে ছাড় দেওয়ার প্রসঙ্গও। কিন্তু রানা ‘ন্যায় বিচারের’ই পক্ষপাতী।
রানা বলছেন না যে সালমান বাট, মোহাম্মদ আসিফ বা আমির দোষী প্রমাণিত হয়ে গেছেন। কিন্তু দোষী প্রমাণিত হলে শাস্তি কমানোর কোনো যুক্তি দেখেন না রানা, ‘আমি মনে করি না, এই ঘটনায় কোনো খেলোয়াড়ের বয়স বিবেচ্য হতে পারে। সবার জন্য আইন একই হওয়া উচিত। আমির আইন ভেঙেছে প্রমাণিত হলে তার বয়স কম, সেটা কোনো যুক্তিই হতে পারে না। দোষী প্রমাণিত হলে বাকি সবার মতোই শাস্তি দেওয়া উচিত তাকে।’
আমিরদের বিপক্ষে বিতর্কিত সেই লর্ডস টেস্টেই ইতিহাস গড়া সেঞ্চুরি করা স্টুয়ার্ট ব্রডও মনে করেন, বয়স অপরাধ করার জন্য কোনো যুক্তি হতে পারে না। রীতিমতো যুক্তি দিয়ে স্টুয়ার্ট ব্রড বুঝিয়েছেন, বয়স এ ক্ষেত্রে বিবেচ্য হওয়া উচিত নয়। নিজেকে দিয়েই উদাহরণ দিয়েছেন ব্রড, ‘আমি আইসিসি থেকে এত্ত পরিমাণে বই, তথ্য পেয়েছি যে পাল্টা কোনো যুক্তিই আর দেওয়া চলে না। ইংল্যান্ড দলে আসার পর থেকেই আইসিসির এ সংক্রান্ত নির্দেশনা গুলো জানছি। তারা এমন কিছু ভিডিও দেখিয়েছে যাতে সব বিষয় পরিষ্কার বোঝা গেছে। যেখানে পরিষ্কার দেখানো হয়েছে, কোনটা করা যাবে, কোনটা করা যাবে না।’
ব্রডের সঙ্গে প্রায় একমত সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক নাসের হুসেইন। তিনি ডেইলি মেইল-এর কলামে লিখেছেন, ‘এটা যদি ওর প্রথম অন্যায় হয়, তাহলে হয়তো একটু নরম হওয়া উচিত। কিন্তু তার নামে যদি আগেও অন্যায়ের অভিযোগ থাকে, তাহলে শাস্তিটা যথেষ্ট শক্তই হতে হবে। ন্যায়-অন্যায় বোঝার মতো যথেষ্ট বয়স হয়েছে ওর।’
হ্যাঁ, আমিরের বয়স হয়েছে, ন্যায়-অন্যায় তিনি বোঝেন; এ কথা তাঁর পরিবারের লোকজনও মানছেন। এসব বোঝানো হয়েছে বলেই আমির কখনো অন্যায় কিছু করতে পারেন না, এই বিশ্বাসটাও ছাড়ছেন না আমিরের ভাইবোনেরা।
আমিরের পাঁচ ভাইয়ের একজন মোহাম্মদ নাভিদ বলেছেন, ‘আমির বাড়িতে ফোন করে বলেছে, ও পবিত্র কোরআন ছুঁয়ে বলতে পারে, ও কোনো অন্যায় করেনি। আমরা যা শুনছি, বিশ্বাস করতে পারছি না।’ এই একই বিশ্বাস বুকে নিয়ে আছেন আমিরের একমাত্র বোন রিফাতও।
রিফাতরা ভাই সম্পর্কে এমন সব খবরাখবর পড়ে ভেঙে পড়েছেন। তাই বলে আমিরের ওপর থেকে বিশ্বাস তুলে নিচ্ছেন না, ‘আমরা খুবই হতাশ। কিন্তু আমরা নিশ্চিত, ভাইয়া এমন কিছু করতে পারে না। ও দেশের জন্য নিজের জীবন দিয়ে দিতে পারে, কিন্তু সততা বিক্রি করতে পারে না।’
আমিরকে তাঁর বোন যতটা চেনেন, তার চেয়েও বেশি চেনেন ফুফু তাহিরা মেহমুদা। কোলে-পিঠে করে মানুষ করা ছেলেটি এমন অন্যায় করতে পারে, এ যেন চোখে দেখলেও মানতে রাজি নন তিনি, ‘ছেলেটা আমার কোলে বড় হয়েছে। আমি জানি, এসব কলঙ্কই রাজনৈতিক কারণে রটানো হচ্ছে।’
বর্তমান পরিস্থিতিতে এই ষড়যন্ত্র-তত্ত্বটাই আমিরের পরিবারে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে বেশি। নাভিদের তো ধারণা, তাঁর ভাইয়ের সাফল্যে ঈর্ষাকাতর হয়ে কেউ করছে এসব!

No comments

Powered by Blogger.